পুষ্পিতা মন্ডল

বর্তমানে প্রবাসী পুষ্পিতা বাংলাদেশ সরকারের সাবেক কর্মকর্তা ছিলেন।

ধর্ম রক্ষার নামে এইসব নৃশংসতা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন

ভারতের রাজস্থানে লাভ জিহাদের অভিযোগে এক মুসলমান লোককে পুড়িয়ে মারার ভিডিও আর খবরগুলো চোখে পরলো। হেডলাইন না পরেই ভিডিওটা ওপেন করে ফেলেছি তাই এই নৃশংসতার কিছুটা চোখে পরেছে। পুরোটা দেখার ক্ষমতা আমার নেই। কোনো 'রামের সেনারা' তাদের ধর্মরক্ষার জন্য নাকি কাজটা করেছে আবার ভিডিও ও বানিয়েছে।

সাধারণত এইসব ভয়ংকর খবরগুলো আমি এড়িয়ে যাই। নিতে পারি না এই নির্মমতা। সেইদিন একজন এক ভিডিও দিলো ‘আল্লাহু আকবর’ বলে এক লোককে জবাই করে দিলো একজন। কি পৈশাচিক বিষয়। মনে হয় দশ সেকেন্ডের সেই ভিডিও দেখে আমি খেতে পারি নি দু’দিন। যে পাঠিয়েছে তাকে ব্লক করে দিয়েছি। কিন্তু ব্লক করে চোখ বুজে কি লাভ! চারপাশের খোঁজ নেয়া বন্ধ করে নিজের মতো থাকলেই কি সব বন্ধ হয়ে যাবে। ধর্মরক্ষার নামে চলা এসব নৃশংসতা বন্ধ থাকবে? ধর্মান্ধরা সব মানুষের মতো ভাবতে শিখবে? এদের বলি যে আমি বা আমার কোনো প্রিয়জন হবে না তার নিশ্চয়তা কি?

অনেকে বলছেন টাকা ছিনতাই করার জন্য লোকটাকে মেরে পরে ধর্মের নাম দেওয়া হয়েছে। তাও যদি হয় সেখানেও ধর্মই চলে আসে। যারা এসব কাজ করে তারা জানে ধর্মের ঢাল ব্যবহার করলেই অধিকাংশ মানুষ চুপ হয়ে যাবে বা মেনে নিবে। আবার যদি বলি এসব হত্যা বা ধ্বংস রাজনীতির খেলা তাহলেও এটাও সত্যি রাজনীতিতে ধর্মকে ব্যবহার করা হয় কারণ ধর্ম নিয়ে আমাদের সংস্কার বা দুর্বলতা আছে তাই। তা না হলে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি আসতেই পারতো না।

ধর্মের নামে হোক বা ধর্মকে ব্যবহার করে হোক বা ধর্মরক্ষার জন্য হোক বা কাফের হত্যার জন্য হোক পৃথিবী জুড়ে আজ এতো হানাহানি। এমন কোনো দিন নেই যেদিন কোথাও না কোথাও ধর্মের জন্য মানুষ মরছে না। কেউ জিহাদ করছে, কেউ ধর্ম রক্ষা করছে। কারো ধর্মগ্রন্থ ভরা হিংসা, হানাহানি দিয়ে। আবার কেউ ওরা এমন আমরা কেনো হবো না, এসো ঝাঁপিয়ে পড়ি এই মন্ত্রে উজ্জীবিত হচ্ছে ধীরে ধীরে।

কিন্তু দোষতো আমাদের। আজো এই যুগে এসেও আমরা ধর্ম নিয়ে মাতামাতি করি। বিশাল জ্ঞানী হবার দরকারতো নেই খালি অন্ধবিশ্বাস বাদ দিয়ে খালি চোখে ভাবলেই ধর্মের অসাড়তা চোখে পরবে। কিন্তু তা আমরা করবো না। চোখে ঠুলি দিয়ে বসে আছি। চেয়ে দেখছি না একটা অলীক জিনিসের জন্য মারা যাচ্ছে মানুষ, ধ্বংস হচ্ছে সভ্যতা, শেষ হচ্ছি আমরা, রেখে যাচ্ছি অস্থির পৃথিবী। ধর্ম খালি ভেদাভেদ ছাড়া আর কি দিচ্ছে? ধর্ম মানুষকে মহান করে, মূল্যবোধ শেখায়, উদার করে এইসব হাস্যকর কথা বলবেন তো? লাভ নেই। এগুলোর জন্য খালি মনুষ্যত্ব থাকলেই হয়, ধর্মের দরকার নেই।

কেনো কিসের লোভে? মরার পরে হেন পাবো, তেন পাবো বলে? হাহা ... পৃথিবীর চেয়ে সুন্দর কি? মায়ের হাসির চেয়ে মধুর কি? প্রিয়জনের স্পর্শের চেয়ে স্বস্তির কি? এরচেয়ে সুখ কিসে? শতশত বছর আগে রাজনৈতিক কারণে হোক বা সমাজকে শৃঙ্খলায় আনার অজুহাতে হোক বা মানুষের ভয় বা অজ্ঞানতা থেকে হোক যে শতশত ধর্মের সৃষ্টি তা আজো আমরা বয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এ দায় আমাদের। দিনদিন আরো বেশি ধার্মিক হচ্ছি সবাই, মানুষকে ভুলে যাচ্ছি। অথচ হওয়ার কথা ছিলো উল্টোটা। আফসোস্।

3905 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।