দিনা ফেরদৌস

আমেরিকা প্রবাসী। লেখালেখির পাশাপাশি ছবি আঁকেন জল রঙে।

ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর- এটা নতুন জানলেন নাকি?

 
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর বুঝলাম, তবে আজকেই এই কথাটা বলতে হচ্ছে কেনো, আরো আগে চাইলেই তো বলা যেতো। বুঝলাম, মেয়েদের জন্যে বেশি ক্ষতিকর, কারণ মেয়েরা বাচ্চা জন্ম দেয়। যতদূর জানি, ধূমপান যে করে না তার ক্ষতি বেশি হয়, যদি তার সঙ্গী ধূমপায়ী হয়ে থাকেন। হুটহাট এইসব জ্ঞান বিতরণের মূল কারণ হচ্ছে, মেয়েটা খেয়েছিলো বলেই'তো? আজ কি বাংলাদেশের কোনো পাব্লিক প্লেসে কোনো পুরুষ ধূমপান করেন নি?
 
আমি নিজেও ধূমপানের পক্ষপাতী না। কিন্তু আজকে যে সময়ে এসে দাঁড়িয়েছি, আমাদের অনভ্যস্ত চোখ কথায় কথায় নারীর দিকেই আঙ্গুল তুলছে, আজ কোনো জ্ঞানের কথা বললে, আমি শুনবো না। ধূমপান ব্যক্তির ক্ষতি করছে, সমাজের না। আর যদি পরিবেশের কথা বলেন, তো বলবো গাড়ির কালো ধোঁয়া, কলকারখানা ধোঁয়াও পরিবেশের উপর সমান প্রভাব ফেলছে। নারীরা যখন ধুমপানের ছবি শেয়ার করছেন , অনেকে তাদের তখন জ্ঞান দিচ্ছেন, এটা ভালো না । ধূমপান যে ভালো না, এটা আমরা কে না জানি? 
 
বড় বড় ভুল গুলোকে ধরিয়ে দিতে গেলে একটা জায়গায় দাঁড়াতে হয়। আপনি এটাকে ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর বলে দেখছেন, আর আমি দেখছি এর চেয়ে ভালো প্রতিবাদের ভাষা আর হয় না। আগে চোখ দেখতে শিখুক, বুঝতে শিখুক ধূমপান নারী-পুরুষ সকলেই করতে পারে। আজ আপনি স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর বলে মেয়েদের দমিয়ে রাখলেন, ওইদিকে 'ডলি সায়ন্তি'রা "জ্বলন্ত সিগারেট ঠোঁটে ধরা" নিয়ে গান গেয়ে পুরুষদের ঠিকই হিরো বানাতে গিয়ে সিগারেট খোর বানিয়ে রাখবেন।এখন আপনি বলবেন, সিগারেট খাওয়া দেখিয়ে কি স্মার্ট প্রমাণ করা যায়? যে খায় সে কি আপনার লজিক নিয়ে খায়? এইসব জ্ঞান নিজের পকেটে রাখুন।
 
"মণিপুরের পিপল'স লিবারেশন আর্মির সদস্য প্রতিবাদী 'মনোরমা'কে তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় সেভেনটিনথ আসাম রাইফেলসের প্যারামিলিটরি ইউনিট। পরদিন বুলেটে তার ঝাঁঝরা দেহ উদ্ধার করা হয়। স্কাটে পাওয়া যায় বীর্যের উপস্থিতি। ঘটনার ৫ দিন পর, ৩০ জন মধ্যবয়সী নারী নগ্ন হয়ে ইস্ফল থেকে আসাম রাইফেলসের অফিস পর্যন্ত মিছিল করেন। স্লোগান ছিলো -"ভারতীয় সেনা.... আমাদের ধর্ষণ করো...আমরা সকলে মনোরমার মা" (সংগৃহীত)।
 
এখন আপনারা সকলে বলতেই পারেন, ধর্ষণের প্রতিবাদে নগ্ন হওয়া উচিৎ হয় নি। এটা সমাজের চোখে শোভন নয়। পারলে জ্ঞান দিয়ে পারেন, বোরকা পরেও মিছিল করতে পারতেন এটা স্বাস্থ্যের জন্যে ভালো, স্কিন ক্ষতিকর সূর্যরশ্মি থেকে বাঁচাতে। এইবার বলবো থামেন, আপনার/ আপনাদের চোখ, নগ্নতাই শুধু দেখেছে, প্রতিবাদের ভাষা দেখে নি।
 
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর কথাটি শুনার সাথে সাথে যদি চোরে ধর্মের কাহিনী শুনে, সব বাদ দিয়ে দিত, তবে দেশের ধূমপান বিরোধী কার্যক্রম করা যতো এনজিও আছে, তারা সকলে চাকরি হারিয়ে দেশে বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি হতো। মনে রাখবেন প্রতিবাদের ভাষা, বুদ্ধিজীবীদের মতো গোল টেবিলে বসে হয় না। প্রতিবাদের ভাষায় সব সময়ই আসে উত্তেজনা থেকে, যার মধ্যে থাকে পাগলামী, আর ঠিক ওই জায়গায় জ্ঞান বিতরণের নাম হচ্ছে, চুতিয়ামি। জ্ঞান দেবার আর সময় নাই? অন্য বহু সময় আছে বলার জন্যে যে, ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর। আপনার কথা শুনে যদি সকলে অযু করে কাল থেকে তওবা শুরু করে, তবে জ্ঞান বিলানো ফরজ বলে মেনে নেয়া যায়। যখন রাস্তার কুকুর গুলো বলছে, পাব্লিক প্লেসে ধূমপানের জন্যে মেয়েটাকে ধর্ষণ করা যায়, তাদের পরিবারের মেয়েরা নষ্ট হবে মেয়েদের সিগারেট খাওয়া দেখে, তখন জ্ঞানের কথা নয়, পাল্টা জবাব লাগে।
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্যে এতই ক্ষতিকর হলে, নিষিদ্ধ করে দেয়া হয় না কেনো?
 
আর ওই ইতর লোক যখন বলছিলো, তাদের মেয়েরা এইসব দেখলে নষ্ট হয়। তারমানে বুঝুন এরা পরিবারের মেয়েদের কিভাবে চাপের মধ্যে রাখছে। একটু সাহস পেলেই তাদের হাতের নাগালের বাইরে চলে যাবে। 'রবি ঠাকুর' "শেষের কবিতা"য় বলেছিলেন, "শিকল ওয়ালি বাধে বটে কিন্তু ভোলায় না, আফিম ওয়ালি বাধে বটে ভোলায়ও (আফিম বলতে অন্তরের মায়া'কেই বুঝিয়ে ছিলেন)। যখন কেউ বলে এরে/ তারে দেখে আমাদের মেয়েরা নষ্ট হয়, বুঝতে হবে, ওরা নষ্ট আছে বলেই আটকে রাখা হয়েছে শিকলে, তা না হলে সঠিক নৈতিক শিক্ষা নিয়ে বড় হলে, কারো বাপের ক্ষমতা নেই, পায়ে ধরে ভুল রাস্তায় নিয়ে যায়, সেখানে কিনা একজনকে দেখেই আরেকজন খারাপ হয়ে যায় এক পলকে। এইসব গাঁজাখোরি কথা শুনে আবার লাফাতেও দেখা যায় ইতরদের। মেয়েটাকে যেইভাবে অপমান করা হয়েছে, এই ধূমপান দিয়ে যারা ছবি দিচ্ছেন এটা হচ্ছে তার প্রতিবাদ। তুমি তেমন বড় কোনো ভুল করো নি মেয়ে, যতটুকু বড় করে তোমাকে অপমান করা হয়েছে। আমরা আছি তোমার পাশে, তুমি একা নও।
 

1798 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।