শাশ্বতী বিপ্লব

সমাজকর্মী

দেশটা চলছে জোর যার মুল্লুক তার নীতিতে

অন্যের অধিকার, সুবিধা-অসুবিধাকে বিবেচনায় না নেয়াটা এক ধরনের বাহাদুরী আমাদের কাছে। আর এই বাহাদুরী আমরা প্রতিদিন চর্চা করি জোরে হর্ণ বাজিয়ে, ফুটপাতে মোটর সাইকেল তুলে দিয়ে, যেখানে সেখানে ময়লা ও কফ-থুতু ফেলে, অন্যের প্রাইভেসীতে অযাচিত নাক গলিয়ে, নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছা অন্যের উপর চাপিয়ে দিয়ে, যত্র তত্র মূত্র ত্যাগ করে, ইভটিজিং করে, ভীড়ের সুযোগে মেয়েদের গায়ে হাত বুলিয়ে, দশ-বিশটা মাইক লাগিয়ে ওয়াজ মাহফিল করে, রাস্তা বন্ধ করে মিছিল মিটিং করে, গায়ে হলুদে উচ্চস্বরে গান বাজনা করে, ভুল দিক দিয়ে গাড়ি চালিয়ে, যেখানে সেখানে বাস থামিয়ে যাত্রী উঠিয়ে, প্রকাশ্যে ধূমপান করে। এমনি আমাদের আরো শত বাহাদুরীর শেষ নাই। আমাদের আনন্দ উদযাপনগুলোও কেমন যেন এইসব বিবেচনাহীন, অন্যের জন্য পীড়াদায়ক।

এসব বাহাদুরীতে আপত্তি করতে গেলে মানবে তো নাই, উল্টা বুক ফুলিয়ে সদলবলে তেড়ে আসবে। কপাল খারাপ হলে বেঘোরে জীবনটাও চলে যেতে পারে, যেমন গেছে গোপীবাগের ৬৫ বছর বয়সী নাজিমুল হকের। এই দেশে জোর যার মুল্লুক তার।

কিছু কিছু সার্বজনীন উৎসব, যেমন বিজয় দিবস বা স্বাধীনতা দিবস বা একুশে ফেব্রুয়ারী, পহেলা বৈশাখ বা ইংরেজি নববর্ষ, ঈদ বা পূজা বা বড়দিন এর মতো দিনগুলোতে একটু বেশি আনন্দ করা যেতেই পারে। কিন্তু সেটারও একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা ও আচরনবিধি থাকা দরকার। মনে রাখা দরকার, আমি/আমরা ছাড়াও আরো মানুষ বাস করে এই দেশে।

আমার জন্য কোনো কাজ বা আনন্দ যতই গুরুত্বপূর্ণ হোক না কেনো, কারো অসুবিধা করার কোনো এক্তিয়ার আমার নেই। অন্যের সুবিধা অসুবিধা বিবেচনা করাটা অধিকার চর্চার একটা অন্যতম শর্ত।

আমরা মানবিক নই, হবোও না কোনোদিন যদি না অন্যের অধিকার, অন্যের অস্তিত্বকে গুরুত্ব দিতে, মেনে নিতে শিখি।

4596 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।