কাহিনীটা ঠিক আসলে চুমুর না। মূল কাহিনীতে যাবার আগে নিজের অতৃপ্ত একটি চুমুর গল্প বলি। চুমু নিয়ে কিছু বলতে আজ আর লজ্জা নেই। বিবাহিত মেয়েদের নাকি এমনিতেই লাজ লজ্জা একটু কম থাকে। তো যা বলছিলাম, আমাদের বিয়ে যেদিন হয় কাগজপত্রে (মানে বড় অনুষ্ঠান করে লোকজন খাওয়াবার দুই মাস আগে) ঐ রাত্রেই আমার বর চলে যাবেন সিলেট থেকে ঢাকা। পরদিন তার অফিস।(আরাম করে সময় নিয়ে এর আগে চুমু খাওয়া হয় নি আমাদের) বরের প্লান ছিলো সেইরাত্রেই দীর্ঘ গভীর একখান চুমু হবে যাওয়ার আগে।
ভীষণ লজ্জায় তার দিকে তাকাতেই পারছিলাম না। লাগবে না আসি, বলে জড়িয়ে ধরে কপালে আলতো চুমু দিয়ে বিদায় নিয়েছিলো সেই সন্ধ্যায় আমাদের বাসা থেকে। সে যাবার পর পরই মন খারাপ হয়ে গেলো। ফোন দিয়ে বললাম, চলে আসেন। তার উত্তর কেমনে আসি, ছোটবোন আমার সঙ্গে ঢাকা যাবে বলে অপেক্ষা করছে বাস কাউন্টারে। দুপুরের অনুষ্ঠানে দুই পরিবারের সবাই থাকলেও সেই ছোটবোন থাকতে পারে নি, সে ছিলো শশুরবাড়ি। আমার সঙ্গে তার দেখা হয় নি তখনো। শাড়ি টারি খুলে যখন ঘুমাতে যাবো রাত প্রায় ১১টা। হঠাৎ ফোন আমি আসছি ছোটবোনকে নিয়ে। ছোট বোনের উছিলায় আমাদের আবার দেখা হলো আর চুমু বকেয়াই থেকে গেলো।
এবার আসল কাহিনীতে আসি। জীবনে প্রকাশ্যে চুমু খেতে যে দুই/চারটা দেখেছি; তার থেকে বেশি দেখেছি প্রকাশ্যে স্বামীর হাতে স্ত্রীদের মার খেতে। আশেপাশে থাকা মুরুব্বিদের তখন বলতে শুনেছি এটা জামাই-বউ এর নিজেদের ব্যাপার, আমাদের কিছু না বলাই ভাল, অথচ সেই মুহুর্তেই সবাই মিলে পারে একটি মেয়েকে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচাতে। সিলেটি ভাষায় একটি শ্লোক আছে "একলা ঘরের বৌ গো খাইতে বড় সুখ, মারতে গেলে ধরতে নাই এইতো বড় দুখ" (মানে হচ্ছে স্বামীরা'তো বউ পিটাবেই, তাই কোনো বউ যেন জামাই নিয়ে একলা মানে আলাদা থাকার প্লান না করে, সবাইকে নিয়ে যেন থাকে। এতে স্বামীরা মারলে ঘরের অন্য লোকেরা স্বামীর হাতে ধরে ফেলবে যাতে আর না মারে)। যদিও যৌথ পরিবারের বৌদের দেখেছি পরিবারের লোকজন মিলে মন্ত্রনা দিয়ে উল্টো স্বামীরে দিয়ে মার খাইয়েছে।
সেইসব তথাকথিত মুরুব্বিদের চুলকানি যে আসলে কোন জায়গায়, তা আজও আমার বোধগম্য হয় না। মুরুব্বিদের সামনে পাশাপাশি একটু গা ঘেঁষে স্বামী-স্ত্রীকে বসার কারণে মেয়েদের নির্লজ্জ বেহায়া বলতে শুনেছি বহুবার। এতে আবার পুরুষদের দোষ দেখা হয় না। ধরেই নেন, স্বামীরা তো বসবেই। এ ব্যাপারে স্ত্রীদেরই শক্ত হতে হবে। সব সময় সাবধানে থাকতে হবে।
আমাকে বরের কাছাকাছি বসতে দেখে কেউ একজন জ্ঞাণ দিয়েছিলেন, বেড রুমের জিনিস বেড রুমেই রাখাই ভালো। তাকে উত্তর দেয়া হয় নি যে, পাশাপাশি বসা মানেই সেক্স করা নয়। স্বামীর কাছাকাছি বসার মধ্যে এক ধরণের শান্তি আছে, যা অনেকের দেখলেই গা জ্বলে। হতে পারে সেইসব বক্তাদেরও কোনো অতৃপ্তি আছে জীবনে। হতে পারে অনেক কিছুই।
আমার পাশের বাড়ীতে এক দিদিমা থাকতেন। যেকোন এক কারণে আমাকে তার গল্প বলছিলেন যে, বিয়ের পর বহু বছর তিনি সকালে সবার আগে ঘুম থেকে উঠে বালিশ লুকাতেন। তার বিছানায় একটা বালিশ রাখতেন যেন রাত্রে স্বামীর সঙ্গে তিনি ঘুমান নি।আর রাত্রে ঘরের সবাই ঘুমাবার পর তিনি নিজের রুমে ঢুকতেন। সেই রকম কষ্ট-যন্ত্রণা বহু জনের থাকতেই পারে অনেকের, তাই বলে অন্যেরা ঠেকায় নাকি? যে নিজের স্বামীর পাশে বসতেও গোষ্ঠী শুদ্ধ লোকের কথা মাথায় রাখতে হবে।
কিছু কিছু লোকের কথা শুনলে মনে হয়, পাশে বসা মানেই সেক্স করা। উনাদের নিজেদের-ই নাকি লজ্জা লাগে অন্যদের পাশে বসা দেখলে। ছোটবেলা নানাবাড়ি গেলে আমার অনেক খেলার সাথীদের মধ্যে মামাতো ভাইকে দেখার জন্য একটি মেয়ে ছিলো আমার কাছাকাছি বয়সের। তার ছিল বিশাল জ্ঞাণের ভান্ডার। এরমধ্যে একটি ছিলো, ছেলে-মেয়েতে চুমু খেলে বাচ্চা হয়ে যায়। আমার মুরুব্বিদের মুখে এইসব কথা শুনলেও সেই রকমই লাগে যে, পাশে বসা দেখলেই তাদের কাছে সেক্স করা হচ্ছে বলে মনে হয়। আর চুমু তো অনেক দূরের বিষয়...
চারপাশে এইসব দেখতে দেখতে যখন নিজে একি চক্রে পড়লাম, সেই প্রথম হিন্দি সিরিয়াল ফলো করলাম। অনেক দূরে যাবো। আমার সাথে আরেক দল আছেন। বিয়ের পর নতুন নতুন অকারণেই স্বামীর কাছাকাছি থাকতে ভালো লাগতো। ভাবলাম গাড়িতে বরের পাশেই বসবো। আমাকে সম্প্রীতি মিলমিশ বুঝাতে গিয়ে কেউ একজন নিজের বরের পাশে না গিয়ে জোর করে তার পাশে বসালেন। যেখানে চাইলে তিনিও তার বরের পাশে বসতে পারতেন। আমারে বুঝালেন, ছেলেরা ছেলেরা বসবে আর মেয়েরা মেয়েরা বসবো এতে অনেক মজা হবে। মনে মনে বলছিলাম; আমি লেজবিয়ান না যে আপনার পাশে বসে মজা পাবো। আমার বরকে এসবের কিছুই বুঝতে দেননি যে, ইচ্ছে করেই আমাদের আলাদা বসাবার প্লান করেছেন তিনারা। এটা যে ইচ্ছে করেই করেছিলেন তা বুঝার যথেষ্ট জ্ঞাণ আমারও ছিলো, তবে আমিও ওরে কিচ্ছু বুঝতে দেই নি তখন। শুধু আসার আগে বললাম -তোমার কি আমার পাশে বসতে কোনো সমস্যা? সে বললো -কেনো? বললাম, তুমি মনে হয় লজ্জা পাচ্ছিলে, না হলে আমি এতো বলার পরও বসো নি কেনো আসার সময়? ঠিক আছে যাবার সময় কিন্তু আমরা একসাথে যাবো। সে কিছু বলে নি।
যাবার সময়ও উনারা প্রিপারেশন নিয়েছেন আমাদের আলাদা বসাবেন। নিজেরা আগে গাড়িতে উঠে বসে, ঠিক করে রেখেছেন কে কোথায় বসবে। আমার বরকে যথারীতি সিট দেখিয়ে দিতেই সে এবার বললো -না আমি পিছনেই বসবো 'দিনা' পিছনে চলে আসো। তাকে অনেক অনেক অনুরোধ করলেন ওনাদের নির্দেশনা অনুযায়ী বসতে। এবার আমি আর কিছুই বলছি না। আমার বরের এক কথা -না আমরা পিছনেই ঠিক আছি। ভিতরে ভিতরে হাসিতে ফেটে পড়ছিলাম। গাড়িতে উঠেই বললাম আমার শরীর খুব খারাপ করছে, বমি বমি করছে। আমার বর তার হাত দিলেন মাথা রাখতে। তার হাতে মাথা রেখে তার শরীরের পরিচিত গন্ধে ঘুম চলে আসছিলো। বিশাল রাস্তাকে অনেক ছোট মনে হলো। এই রকম ইতরামির উত্তর ইতরামি করে দেয়ার বহু গল্প আছে, বলবো আরেক সময়।