সুমন কর্মকার শাওন

মাস্কাটে অবস্থানরত প্রবাসী

ছোটবেলায় আমিও এ্যাবিউজের শিকার হয়েছি...

ছোট বেলায় আমিও এ্যাবিউজের শিকার হয়েছি..!

বহুদিন থেকে বলবো বলবো ভাবছি কিন্তু বলা হয়ে উঠে নি, ঠিক লজ্জায় নয়, ঘেন্না থেকে বলা হয় নি! কারণ বলতে গেলে আমায় কাঁদতে হয়, যেতে হয় সেই ভয়াবহতার দিয়ে, ধুমড়ে মুচড়ে যাই নিজের ভেতর।

আজ থেকে ২২বছর আগের ঘটনা, আমি তখন ক্লাস টু তে পড়ছি। অস্ফুট্ট ছিলো আমার শরীর ও মন, তখন আর কিই-বা হয়েছে বুঝে উঠার বয়স, আর আমিও যে আর দশটা ছেলের মতো অজ পাড়া গাঁয়ে বেড়ে উঠা। আমার অপরাধ কি ছিলো ঠিক বুঝে উঠতে পারি নি, আমি যে কোনো কামুকতায় তাকে আকর্ষিত করি নি এইটুক অন্তত বলতে পারি! তবুও কেনো আমায় রেহায় দেয় নি, বাঁচতে পারি নি ওই নোংরা হাত থেকে। তখন আমার বয়স কত হবে ‘৬/৭’! আমারই বড় ভাইয়ের বন্ধু নানা ভাবে শিকার বানিয়েছে আমায়।

তার আদর করা, আমায় কোলে তুলে নেওয়া, কিন্তু ধীরে ধীরে সে আদরের মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে, উনি আমায় গালে আদর দিতো, গাল টেনে দিতে জোর করে কোলে তুলে নিতো। প্রথম প্রথম আমি আসলে কিছুই বুঝতাম না! বুঝতাম না বলতে আসলে ঠিক আমার মা-বাবা কখনো এসব সম্বন্ধে আমায় শেখায় নি, হয়তো তারাও জানতেন না নয়তো লজ্জায় বলেন নি!

এভাবে চলতে থাকে দিনের পর দিন। আগেও আমাদের বাড়ীতে আসতো, তবে একটা সময় আমাদের বাড়িতে তার আগমন বেড়েছে বহুগুণে। আমি তাকে দেখলে পালিয়ে যেতাম ভয় পেতাম অনেক। তবুও কি আমার শক্তিতে কুলায় যে উনার সাথে পেরে উঠি। উনি আমাকে ধরেই কোলে তুলে নিতেন, গালে আদর করতেন, অনেক ভাবেই আমায় স্পর্শ করতেন।

এভাবে চলে বহুদিন আমার সাথে। আমার সাথে স্কুল থেকে আসার পথে ছিলো একটা টং দোকান, সে ওখানে বসে থাকতো মাঝে মাঝে চকলেট, চিপস এই সেই কিনে দিতো আমি নিতে না চাইলে জোর করে দিতো, কাছ যেতে না চাইলে দৌঁড়ে ধরতো, আবার সেই একই কাজ কোলে নিয়ে বসাতো আদর করতো, প্রাণপণ ছুটে আসার চেষ্টা করতাম কিন্তু পেরে উঠতাম না!!

একদিন আমাদের বাড়ীতে এসে আমার প্যান্ট খুলে দিলো, আদর করতে লাগলো, তার মাঝে এবার এক ভয়ংকর চেহারা দেখলাম, আমি ভয়ে চিৎকার করে কান্নাকাটি শুরু করলাম, আমি চিৎকার শুরু করলে আমার মুখ চেপে ধরলো। আমায় ফেলে রেখে চলে গেলো সেই থেকে আর কখনো আমি তার কাছে যাইনি!
সেই দুঃসহ যন্ত্রণার দিনগুলো এখনো আমায় কাঁদায় ভয়ে আতকে উঠি আমি, এমন করে আমাদের সমাজে নোংরা হাত কিংবা এইসব ভয়ংকর দিনগুলোকে পার করে আসছে অনেক অস্ফু্ট্ট শরীর ও মনকে! (বলে রাখছি যে, আমায় অনেক ভয় ভীতি দেখাতো উনি, যাতে কাউকে না বলি। আমার আসলে কাউকে বলার মতো সাহস কিংবা বুদ্ধি ছিলো না) 

বিঃ দ্রাঃ- আপনার ছেলে মেয়েকে কোনটা খারাপ স্পর্শ কোনটা ভালো এগুলো শেখানোর দায়িত্ব আপনার, আদরের ছলে আজকাল এমন নোংরা আক্রমণের শিকার হচ্ছে অনেকেই, মা বাবা হিসেবে তাকে শেখানোর দায়িত্ব আপনার উপরে'ই বর্তায়!

2506 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।