নাদিয়া ইসলাম

নারীবাদী

নাদিয়া ‘ছিনাল নারীবাদী’ ইসলাম।

দাউদ হায়দার সাহেবের কবিতাখানি পড়লাম। সাহিত্যের বিচারে সেই জিনিস স্থূল, নীরস, নোংরা এবং ঘৃণার শস্যক্ষেত্রে উৎপন্ন হওয়া অকালকুষ্মাণ্ডীয় অভর্জিত অখাদ্য বিশেষ। কিন্তু এছাড়া তো তাতে তেমন সমস্যা পাইলাম না আমি! এই লেখা তসলিমা নাসরিনরেই উৎসর্গ কইরা লেখা হইছে এমন ভাবারই বা কারণ কী? তসলিমা নাসরিনই কি পৃথিবীর একমাত্র ছিনাল নারীবাদী লেখক যিনি শিশ্ন ‘খুঁইটা’ খান?

পুরুষতন্ত্রের বিচারে পৃথিবীর সকল নারীবাদীই তো বেশ্যা ও খানকি, পুরুষতন্ত্রের বিচারে সকল নারী লেখকরাই ‘লেখিকা’- যাদের লেখা এবং উদরে পুরুষ নিজেই রেতঃপাত কইরা যান, পুরুষতন্ত্রের বিচারে সকল উদ্ধত গলার মেয়েরাই বেজন্মা, পুরুষতন্ত্রের বিচারে পুরুষের ‘গোপন কেচ্ছা’ ফাঁস কইরা দেওয়া প্রতিটা সত্যবাদী মেয়েই ভণ্ড ও মিথ্যুক, পুরুষতন্ত্রের বিচারে তো সকল বহুগামী নারীই ছিনাল, তাই না?

দাউদ হায়দার নতুন কিছু বলছেন কি?

তবে আমার ব্যক্তিগত ধারণা এইটা উনার আত্মজীবনীমূলক কবিতা। তসলিমা এবং উনি নিজে প্রায় একই কারণে দেশত্যাগে বাধ্য হইলেও তসলিমার মতো নিজের খ্যাতি না থাকায় ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্সজনিত ঈর্ষার বশবর্তী হইয়াই শেষ জীবনে বৃদ্ধ বয়সে সাফল্যের শেষ ‘খোঁজ- দ্যা সার্চ’ করতে উনি হৃদয়ক্ষেত্রে এবং উরুদ্বয়ের জাংশানক্ষেত্রে প্রেমের কলা গজাইয়া (বা কাইটা) লিঙ্গান্তর ঘটানোর ইচ্ছা পোষণমূলক এইসব ইয়ে-টিয়ে লিখা ফেলছেন। উনারে আপনারা ক্ষমা কইরা দেন।

হে ফেইসবুকবাসী, জানিয়া থাকিবেন, সাধু-চলিতের মিশ্রণের মতোই ক্ষমা হয় একটি মহৎ গুণ।

আমার অফিসের সিনিয়ার গবেষক এবং বিজ্ঞানীদের দেখতাম অক্টোবর মাস আসলেই উনাদের মেজাজ কোনো কারণ ছাড়াই তিরিক্ষি হইয়া থাকতো। অনেক বছর পরে এর রহস্য বুঝতে পারছিলাম। অক্টোবর মাসে নোবেল পুরষ্কার দেওয়া হয়। নোবেলের প্রতীক্ষায় এবং নোবেল না পাওয়ার বেদনায় উনাদের কলম ও কথার যন্ত্রণায় আমাদের মতো জুনিয়ার গবেষকদের প্রাণ সারা অক্টোবর মাস ওষ্ঠাগত হইয়া বিহঙ্গম স্টাইলে বাঁচার আশায়- বসিয়া উচ্চ ডালে উচ্চ বাসায় গিয়া ‘ছাড়িয়া দে পুরষ্কার, কাঁদিয়া বাঁচি’ বলিয়া নিরবে ভ্যানভ্যান ভ্যানভ্যান ভ্যানভ্যান করিয়া কান্দিতে থাকিতো। দাউদ হায়দার সাহেবও মনে হয় অনেকদিন স্টারডমের লাইম লাইট পাইতেছেন না, তাই কবিতার নামে চটি-রসে মূর্ছা-রসে পুরীষ-রসে আমাদের জর্জরিত করলেন আরকি।

শক্তিশালী নারী মাত্রই পুরুষতন্ত্রের চক্ষুশূল। সেই নারী যদি আবার লেখক হন, উচ্চস্বরে কথা বলা বা পুরুষের মতোই বহুগামিতা প্র্যাকটিস করা বা একটু শরীর দেখানো বা নিজ স্বাধীন ইচ্ছায় চলতে চাওয়া শিক্ষিত নারী হন, তাইলে তো কথাই নাই। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে যখন বাংলার মেয়েরা স্কুল কলেজ যাওয়া শুরু করলেন, তখন ‘অবলাব্যারাক’ নামের প্রহসনে বলা হইলো, মেয়েরা শিক্ষিত হওয়ার পরে উনাদের লাজলজ্জা মাথায় উঠছে, উনাদের দুই বিয়া ক্যানো, চার পাঁচ সাত বিয়াতেও আপত্তি নাই! দাউদ হায়দার সাহেবের পূর্বপুরুষ কবি বিষ্ণুরাম এইরকম শিক্ষিত নারীবাদী মেয়েদের উদ্দেশ্যে বলতেছেন, “ওদের নাহি লজ্জা, নাহি ভয়, মাথা খুলে কথা কয়, বলে ‘আমি চিনি নাকো কারে’!” তারপর ধরেন, কবি সাহেবের আরেক আব্বাজান, অমৃতলাল বসু, উনি ‘স্বাধীন মহিলাদের গান’-এ লিখছেন, “আমরা সবাই বিদ্যাবতী, আসলে পরে দোসরা পাতি/ টানলে প্রাণ তার পানে সই, ক্যানো ঢলবো না লো ঢলবো না?”

হ্যাঁ উনারা শক্তিশালী নারীদের ঢলাঢলিই কেবল দেখেন। কারণ চরিত্রহননই পুরুষতন্ত্রের একমাত্র হাতিয়ার।

সুতরাং খুজলি, থুক্কু- দাউদ হায়দারের দাউদ-খুজলি-চিপায়-চাপায়-ঘা মার্কা যৌন হতাশাগ্রস্থ কবিতা দেইখা আমি আশ্চর্য্য হই নাই। উনার কৌলিনত্ব দেইখাও অবাক হই নাই। ১৮৭১ সালে হুগলী জেলায় উনার মাত্র ৩৩ জন কুলীন পিতা পিতামহরা একলাই বিবাহ করিয়াছিলেন ‘মাত্র’ ২১৫১ জন মেয়েরে। যেই দিন গিয়াছে তার দুঃখ কষ্ট বেদনাতেই বোধকরি দাউদ হায়দার সাহেব তসলিমা নাসরিন তথা বাংলার তাবত ‘ছিনাল’ নারীবাদীদের পিছে লাগিয়াছেন। কারণ উনি ছিনাল হইলে প্রবলেম নাই- উনি উনার প্রকান্ড জালি লাউয়ের ডগার মতো শিশ্ন দিয়া প্রকান্ড কুষ্মাণ্ড প্রসব করলেও উনি প্রকাণ্ড পুরুষ সিংহ, কারণ উনি লাউ এবং কুষ্মাণ্ড মিলাইয়া কবিতার ঘণ্ট রাইন্ধা একলাই তার রস আস্বাদন করতে পারেন, কিন্তু মেয়েরা ছিনাল হইলেই প্রবলেম- কারণ মেয়েদের লাউ ও কুমড়ার সাপ্লাই নাই। মেয়েদের লাউ বা কুমড়ার মতো শিশ্ন নাই। তাই মেয়েরা ছিনাল হইলে কবি সাহেবের লাউয়াঙ্গ জ্বলে। তাই উনি ছিনালদের বাপেদের বীর্য এবং মায়েদের যোনীর দোষ খোঁজেন।

তাই হে মহান কবি, হে কুমড়াপিতা দাউদ হায়দার সাহেব, আপনার ও আপনার পুরুষতান্ত্রিক নারীবিদ্বেষের প্রতি ভালোবাসা। আপনারা না থাকলে আমরা ছিনালরা জন্মাইতাম না। আপনারা না থাকলে আমরা আমাদের ছিলানত্ব নিয়া সগর্বে দাঁড়াইয়া আপনাদের লাউ এবং কুমড়াদের সেঁকা তেলে ভাইজা বা পুড়াইয়া বা ঢিমা আঁচে অল্প জলে সিদ্ধ কইরা তা পা দিয়া যুগ যুগ পাড়াইয়া ভর্তা নামক ব্যাঞ্জন বানাইয়া আপনাদেরই ছুরি কাঁটাচামচ সহযোগে রূপার থালিতে পরিবেশন কইরা খাওয়াইতে পারতাম না। তাই আপনাদের কাছে আমরা সবিশেষ কৃতজ্ঞ।

তাই আপনারা আমাদের শক্তিতে ম্রিয়মান হইয়া কুঁইকুঁই করতে করতে দুই ঠ্যাঙ্গের চিপায় ল্যাঞ্জা হান্দাইয়া আরো আরো আরো কুষ্মাণ্ড প্রসব করেন, আমরা ‘আহা যদি থাকতো তোমার কুমড়ার উপর ডানা, লাত্থি দিলেই আপদ যেত- করতো না কেউ মানা’ গান গাইয়া নিজেদের সগর্বে, স্বমহিমায়, স্বরূপে ‘নারীবাদী’ এবং ‘ছিনাল’ এবং ‘বেশ্যা’ ট্যাগ লাগাইয়া সটান খাড়াইয়া থাকবো। আপনাদের দূষিত কুমড়াসাহিত্য আমাদের স্পর্শ করবে না।

বিনীত
নাদিয়া ‘ছিনাল নারীবাদী’ ইসলাম।

 

4447 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।