লাবণী মণ্ডল

নারীবাদী লেখিকা।

ছেরা না ছেরি

ঢাকা শহর। সব শ্রেণি পেশা মানুষের বাস এই শহরে। সব ধরনের মানসিকতার মানুষও রয়েছে, থাকবে। কিন্তু কথা হলো, এসবকিছুকে টক্কর দিয়ে, নোংরামী মানসিকতাকে ধিক্কার দিয়ে কিছু চিন্তাশীল মানুষও রয়েছে। যদিও সংখ্যাগত দিক থেকে খুবই কম।

 

'ছেরা না ছেরি' এ কথাটি শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আরো বহুকাল শুনতে হবে, বলা যায় যতদিন বেঁচে থাকবো। যদি চিন্তার মধ্যে আর্বজনা না প্রবেশ করে। পরনে জিন্স, শার্ট, কেডস হওয়ার কারণেই এ কথা শুনতে হয়, সাথে চুল, হাঁটার ধরন, দাঁড়ানোর ধরন। 

আজ পুরো দেশ কারাগার। ঢাকা শহরও এর বাইরে ছিলো না। বইমেলা ক্রেতাশূণ্য শুধু নয়, মানুষ শূণ্য। রাত আটটায় শেষ করে টিএসসি হয়ে হেঁটে নিলক্ষেত, আজিমপুর হয়ে বিডিআর। ঠিক বিডিআর থেকে শুরু করে বাসা পৌঁছা পর্যন্ত 'ছেরা না ছেরি' এ কথাটি চার থেকে পাঁচবার শুনতে হয়েছে। এক'জন তো প্রকাশ্যে বলেছে, বাকিরা মনে মনে, ঈশারা, ইঙ্গিতে বোঝানোর চেষ্টা করেছে। 

এখন প্রশ্ন হলো এরা কারা, যারা এভাবে বলে! এরা এই সমাজের ভদ্র মানুষ। হু, এরাই ভদ্র। আমরা যারা প্যান্ট, শার্ট পরি, হিজাব, বোরকা না পরি তারা অভদ্র, বেহায়া, বেশ্যা, বেপরোয়া। 

শার্ট, প্যান্ট কেনো শুধু ছেলেদের পোশাক, কে নির্ধারণ করেছে? নারীর কেনো আলাদা পোশাক হতে হবে? এর দায় এই সমাজব্যবস্থার। শার্ট, প্যান্ট আমার কাছে খুবই মার্জিত পোশাক বলেই মনে হয়। 

এই পোশাক পরলেই কেনো ছেলে বলে আখ্যায়িত করবে? এটা শুধু আজই না, আজ বেশি। রাস্তা ফাঁকার থাকার কারণে। আমার নারী বন্ধুরাও এ মানসিকতার পরিচয় দেয়। হাসে, টিপ্পনী কাটে, টিটকারি দেয়। এটা তাদের চিন্তার দীনতা। 

তরকারি দোকানে গিয়ে বললাম, মামা শসা কত? উনি আড়চোখে তাকিয়ে বললেন, 'ভাই পঞ্চাশ? এই যে ভাই শব্দটি উচ্চারণ করলেন, কেনো জানেন? নারী হয়ে জিন্স, শার্ট পরেছি বলেই! বুঝতে পারলেন! এটা তো তার চিন্তার দীনতা, তার শিক্ষা, তার পরিবেশ। বলেই শেষ করে দেওয়া হবে। কিন্তু এই ভদ্রবেশী সমাজে, বড় বড় শিক্ষিত লোকরাও এ মানসিকতা পোষণ করে থাকে। 

তাদের চিন্তার দীনতা পরিবর্তন কিভাবে করবো, কে করবে? 

কতদিন মুচকি হেসে এসবকে খারিজ করবো? আমার সত্যিই কষ্ট লাগে। সমাজ কি এগুচ্ছে? সমাজের মানুষগুলোর চিন্তা এত নিম্নগামী কিভাবে সম্ভব? কে কোন পোশাক পরবে, কি খাবে, কেমনে হাঁটবে, কেমনে কথা বলবে, কার সাথে মিশবে, কার সাথে বন্ধুত্ব করবে? এসব কি এই সমাজের দীনতা চিন্তাসম্পন্ন মানুষগুলো নির্ধারণ করবে? 

পরিবার থেকে পোশাকআশাকে পুরো সমর্থন পাওয়া সত্ত্বেও এ ধরনের হ্যারেসমেন্টে পড়তে হয়। কি ভয়ংকর সমাজব্যবস্থার মধ্যে বাস করছি।

1830 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।