সন্ন্যাসী রতন

সন্যাসী রতন নামে পরিচিত বাংলাদেশী ব্লগার আইকর্নের একজন অতিথি লেখক হিসেবে নরওয়েতে আছেন।

চাকুরিতে কোটা প্রথার খুব বড় ধরণের সংস্কার প্রয়োজন

কোটা সিস্টেমের ব্যাপারে সিরিয়াসলি কিছু বলি। চাকুরিতে নিয়োগের ব্যাপারে কোটা প্রথা চালু আছে পৃথিবীর বহু দেশেই। কিন্তু কেনো এই কোটা সিস্টেম? কোটার ব্যাবহার যে কারণেই শুরু হোক, বর্তমানে এটি ব্যবহৃত হয় কোনো প্রতিষ্ঠানে বা দেশে কোনো বিশেষ পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর রিপ্রেজেন্টেশন বাড়াতে।

নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘুরা চিরকালই নির্যাতিত, নিপীড়িত ও অবহেলিত। আমরা সভ্যরা তাদের ভূমি কেড়ে নিয়েছি, তাদের সমাজ, সংস্কার, পেশা, সংস্কৃতি সবকিছু কেড়ে নিয়েছি। এজন্য তারা সবসময় চেষ্টা করেছে আমাদের মতো সভ্য জঙ্গিদের থেকে দূরে থাকার। আমাদের প্রবর্তিত একাডেমিক শিক্ষায় তারা অভ্যস্ত হতে পেরেছে কেবলই দু'এক প্রজন্ম হলো। তাই শিক্ষা, চাকুরি সবখানেই তাদের রিপ্রেজেন্টেশন কম।

যেহেতু ইতিহাসজুড়ে তাদেরকে আমরা কেবল বঞ্চিতই করে গিয়েছি, তাই তাদেরকে জাগিয়ে তোলার দায়িত্বও আমাদের। আর তাই আদিবাসী কোটা সারা পৃথিবী জুড়ে এখনও খুবই প্রচলিত একটি কোটা পদ্ধতি।

পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশের নারীরাও নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘুদের মতোই দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে বেঁচে ছিলেন। শিক্ষায়, প্রফেশনে তাঁদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে একশ বছরের কিছু বেশি হলো। তাই তাদের রিপ্রেজেন্টেশনও একসময় খুব কমই ছিলো। যেসব দেশে সমতা এসেছে, সেখানে বহু আগেই এ ধরণের কোটা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। শিক্ষায় বাংলাদেশে এখন নারী ও পুরুষের হারে খুব পার্থক্য আছে বলে মনে হয় না। ব্যানবেইসের ডাটা অনুশীলন করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ জরুরি এখন।

প্রতিবন্ধী কোটাও খুবই প্রচলিত একটি কোটা পদ্ধতি। এটা একটা মানবিক বিষয় এবং বিষয়ে কারো কোনো আপত্তি আছে বলে মনে হয় না। জেলা কোটার আদৌ কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। বাংলাদেশ এতো ছোট একটা দেশ যে, এখানে জেলা আর দেশের পার্থক্য খুবই কম।

কোটা নিয়ে কথা বলতে গেলে সবচেয়ে বেশি কথা ওঠে মুক্তিযোদ্ধা কোটা প্রসঙ্গে, কারণ মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যার তুলনায় এই কোটাটি খুব বেশি বলেই মনে হয়। সেটাও আসলে বিষয় নয়। এখানে যেটা দেখার দরকার, বাংলাদেশের চাকুরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের রিপ্রেজেন্টেশন কি কম আছে? গত আড়াই দশকে তাদের জন্য ৩০% কোটা বরাদ্ধ থাকার পরেও এমনটা হওয়া অসম্ভব। তাহলে তাদের জন্য কোটা রাখা কি তাদের জন্য প্রিভিলেজ দেয়া নয়? হ্যাঁ, নিহত বা আহত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য বিশেষ কোটা রাখা যেতে পারে, তবে সুস্থ-সামর্থ্য মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য আর কোটা থাকার আবশ্যকতা একদমই নেই বলে মনে করি।

মোদ্দা কথা, চাকুরিতে কোটা প্রথার খুব বড় ধরণের সংস্কার প্রয়োজন। সেই সাথে প্রয়োজন বিসিএস পরীক্ষাটাও তুলে দেয়া। এটা একটা ব্রিটিশ আমলি সিস্টেম, যা ব্রিটিশরা বহু আগে ত্যাগ করলেও উপমহাদেশে যে এটা কেনো জিইয়ে রাখা হয়েছে, তা বোধগম্য নয়।

1339 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।