জাকারিয়া হোসাইন

অনলাইন একটিভিস্ট ও হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার।

চাকরী হলো পূর্ণিমার যোগ্যতায়, প্রশংসায় ভাসছেন তারানা

কলেজের এক অনুষ্ঠানে বাংলার প্রভাষক আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন- কোন ঔপন্যাসিক আপনার পছন্দ?
উত্তরে বলেছিলাম একক কেউ নাই।

প্রশ্নকর্তা আমাকে চমকিয়ে দিয়ে আবার প্রশ্ন করলেন- শরৎচন্দ্রকে আপনার কেমন লাগে?
উত্তরে বলেছিলাম - উনি সাহিত্যিক হিসেবে দারুণ। তবে ঔপন্যাসিক হিসেবে ততটা নয়; যতটা একজন ঔপন্যাসিকের হওয়া প্রয়োজন।

আসলেই শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় খুব ভালো লিখতেন। কিন্তু প্রায় সব লেখাতেই তার নারী এবং পুরুষের চরিত্রগুলো ছিলো আলাদা। যেখানে পুরুষ খুব স্বাধীন। বেপরোয়া। কিন্তু নারী চরিত্রগুলো ছিলো কোমল। পরজীবী। পরাধীন।

নারীর আবেগজাত অভ্যেসকে কেন্দ্র করে শরৎবাবু নারীকে আকাশ ছাড়িয়ে মহাকাশে উঠিয়েছেন। এটা ভালো। অন্তত আমাদের সিজনাল নারীবাদীদের জন্য আদর্শ। তবে শরৎবাবু নারীদের আকাশ কিংবা মহাকাশে আটকে রাখতে পারেন নি। ধপাস করে ফেলে দিয়েছেন। মাটিতে নয়, প্রায় কাদায় ফেলে দিয়েছেন।

(একান্ত ব্যক্তিগত মত। লেখককে আহত করা আমার উদ্দেশ্য নয়)।
বাঙালির ইস্যুপ্রিয়তা নিয়ে আমার কিছু আপত্তি আছে। যৌক্তিক কিংবা অযৌক্তিক কিছু ইস্যু পেলেই এরা লাফাবে। হোক সেটা ফেসবুকে কিংবা বাস্তবজীবনে। অনেকটা মুমিন হলে আমিন না বলে যাবেন না টাইপ। একজন খুব ঘনিষ্ঠ। আজ দুপুরে মেসেঞ্জারে ছবি দিলেন; প্যারাসিটামলে বিষাক্ত পদার্থ পাওয়া গেছে। এটা খাওয়া যাবে না। এবং ছবিটি/মেসেজটি শেয়ার করুন। চার মিনিট উনত্রিশ সেকেণ্ড এর মাথায় একই মেসেজ জমা হলো পঁয়ত্রিশবার।

হুমায়ুন আযাদ যথার্থই বলেছিলেন--"বাঙালিকে একটি লাইব্রেরি দাও, বাঙালি ওটাকে গোয়ালঘর বানিয়ে ছাড়বে"।

যশোর রোডস্থ গাছের ছায়ায় বসে তার ইতিহাস পড়তে বসে নারায়ণগঞ্জ, হকার, আইভি হায়াত এবং ওসমানী খেলাফত পড়ছিলাম। হঠাৎ হালুম করে নাযিল হলো তারানা হালিম। সাবেক ব্যর্থ থ্রিজিমন্ত্রী।
শানে নূযুল না দেখলে ভাত হজম হবে না। খোঁজ করলাম nari.news এ।  পড়লাম। পূর্ণিমা শীল নামক একজন সাহসী মানুষের আকাঙ্ক্ষা, প্রচেষ্টা এবং সফলতার গল্প। খুব দারুণ!
পূর্ণিমা শীল সেই মেয়ে, যাকে গনিমতে পাওয়া যুদ্ধবন্দী দাসীদের মতো ধর্ষণ করেছিলো জামাতে ইসলামের উম্মাদেরা। কিশোরী পূর্নিমাকে শিক্ষা এবং নতুন জীবনে আহবান জানান ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কোনো এক মহাত্মা ব্যক্তি। উনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
বিচারের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছেন স্বশিক্ষিত পূর্ণিমা শীল। সম্পূর্ণ নিজ যোগ্যতায় তারানা হালিমের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে নিয়োগ পান তিনি।
উনার সাহসীকতাকে শ্রদ্ধা জানাই। আন্তরিক অভিনন্দন ও ভালবাসা বরাবরের মতোই। 
বাংলাদেশে সম্পূর্ণ নিজ যোগ্যতায় কোনো মন্ত্রী কিংবা আমলার পিএ হিসেবে নিয়োগ পেলে যোগ্যতাসম্পন্ন ঐ ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য বিচার না করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী কিংবা আমলারই প্রশংসা করা আমাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয় নি।

কিন্তু স্বভাবজাত ভাবেই আমরা নারীকে অন্যের আশ্রিত দেখে শান্তি পাই। নারীকে জীব হিসেবে নয়; পরজীবী হিসেবেই দেখতে পছন্দ করি। আর তা ছাড়া আর উপায়ও দেখি না। আরে ভাই, জন্মগতভাবে নারী সম্পর্কে আমার আপনার যে ধারণা, সেটা একদিন দু'দিন গলা উঁচিয়ে নারীবাদ নারীবাদ বলে চিল্লালেই বদলে যাবে, তাইতো! তারানা হালিমের প্রশংসা দেখে মনে হচ্ছে উনি দয়া করে চাকুরী দিয়েছেন। পূর্ণিমা শীল এর যোগ্যতা বলতে কিছুই নাই।
বিশেষ করে: বিশিষ্ট নারীবাদী এবং মুক্তমনাদের পোষ্টগুলো দেখে এমনটাই মনে হচ্ছে। তারা দলকানা আগে নারীবাদী পরে।

1520 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।