ফরিদ আহমেদ

লেখক, অনুবাদক, দেশে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। দীর্ঘ সময় মুক্তমনা ব্লগের মডারেশনের সাথে জড়িত ছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়ের অনুবাদ করেছেন। বর্তমানে ক্যানাডা রেভেন্যু এজেন্সিতে কর্মরত অবস্থায় আছেন। টরন্টোতে বসবাস করেন।

বঙ্গমহিলার জাপানযাত্রা

উয়েমন তাকেদা একজন জাপানি। ভাগ্যান্বেষণে জাপান ছেড়ে ঢাকায় চলে আসে এই ভদ্রলোক। ১৯০৩ সালের দিকে ঢাকায় একটা সাবানের কারখানা চালু করেন তিনি। নাম ইন্দো-জাপানিজ সোপ ফ্যাক্টরি।

ঢাকায় থাকার সময় ঢাকার এক মেয়ের সাথে পরিচয় হয় তার। পরিচয় থেকে ভাব-ভালোবাসা। এই মেয়ের নাম হরিপ্রভা মল্লিক। ১৯০৬ সালে উয়েমন এবং হরিপ্রভা বিয়ে করেন। হরিপ্রভা মল্লিক হয়ে যায় হরিপ্রভা তাকেদা। তিনিই ইতিহাসের প্রথম বাঙালি মেয়ে যিনি বিয়ে করেন একজন জাপানিকে। বাঙালি-জাপানি বিয়েও ইতিহাসে এটাই প্রথম।

উয়েমন তাঁর বাবা-মাকে বাঙালি বধূ দেখানোর জন্য ১৯১২ সালে জাপান যাত্রা করে। ঢাকা থেকে ট্রেনে প্রথম নারায়ণগঞ্জ যান তাঁরা। সেখান থেকে স্টিমারে কোলকাতা। ৫ই নভেম্বর কোলকাতা থেকে জাহাজে করে রেঙ্গুন, সিঙ্গাপুর, হংকং, সাংহাই হয়ে জাহাজ পৌঁছায় জাপানে। সেটা ডিসেম্বরের ১৩ তারিখ। নাগোয়া স্টেশনে হরিপ্রভা ও তাকেদাকে বরণ করে নিতে এসেছিলো তাকেদার দুই ভাই। শুধু দুই ভাই-ই যে ছিলো তা নয়। অসংখ্য লোক ভিড় করেছিলো তাকেদার বাঙালি বধূ ইন্দোজিনকে দেখার জন্য। স্টেশন থেকে তাকেদার গ্রামের বাড়ি ছিলো বেশ কিছুটা দূরে। সেখানেও লোকজন ভিড় করে হরিপ্রভাকে দেখতে লাগলো।

প্রায় চার মাস জাপানে থাকার পর ১২ই এপ্রিল তাঁরা জাপান থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। দেশে ফিরে আসার প্রায় দুই বছর পর হরিপ্রভা তাঁর এই জাপান ভ্রমণ নিয়ে একটা বই লেখেন। বইটার নাম বঙ্গমহিলার জাপানযাত্রা। এই বইয়ে হরিপ্রভা জাপানের যে সব অঞ্চল ভ্রমণ করেছেন, সেগুলোর বর্ণনা দিয়েছেন। একই সাথে জাপানের সমাজ এবং সংস্কৃতিকেও তিনি তুলে এনেছেন তাঁর বাঙালি চোখ দিয়ে। হরিপ্রভার বই পড়ে একজন জাপানি ওয়াতানাবে লিখেছেন, “হরিপ্রভার লেখার মধ্যে এমন জিনিসের উল্লেখ পাওয়া যায়, যা এখন কদাচিৎ চোখে পড়ে অথবা আদৌ দেখা যায় না। কিন্তু, যেটা আরো গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয় সেটা তাঁর লেখায় বর্ণিত তখনকার জাপানিদের মানসিকতা। তাঁর অসাধারণ পর্যবেক্ষণশক্তি সত্যি অবাক হওয়ার মতো।

জাপান ভ্রমণ নিয়ে বাংলায় দ্বিতীয় বই আসে রবীন্দ্রনাথের হাত দিয়ে, জাপান যাত্রী। এর চার বছর আগেই প্রকাশ হয়ে গিয়েছিলো বঙ্গমহিলার জাপানযাত্রা। জাপান ছিলো ভারতবাসী বা বাঙালিদের কাছে অজানা এক দেশ। হরিপ্রভা আর রবীন্দ্রনাথের লেখার মাধ্যমে সেই অজানা দিকে আলো এসে পড়লো। মঞ্জুরুল হকের মতে, হরিপ্রভার গ্রন্থটি বাংলা ভাষায় রচিত জাপান সংক্রান্ত প্রথম পূর্ণাঙ্গ কোনো গ্রন্থ।

হরিপ্রভা এবং উয়েমন আরেকবারও জাপানে গিয়েছিলেন। সেটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে। সেই সময় নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুও জাপানে গিয়েছিলেন। এই দম্পতির সাথে নেতাজীর দেখাও হয়েছিলো জাপানে।

2534 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।