লাবণী মণ্ডল

নারীবাদী লেখিকা।

বন্ধুরা, লিঙ্গ থেঁতলিয়ে দিতে হবে, এক ইটে রেখে আরেক ইট দিয়ে!

এ কোন দেশে বাস করছি! ভাবতে পারছি না আর! কি লিখবো, লিখে কি হবে? এখন থেকে একঘণ্টা আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা লিখবো বলে টাইপ করা শুরু করলাম। প্রচণ্ড ধুলো ঝড়ের মাঝে রাস্তায় হাঁটছি। ধুলোতে চোখ, মুখ অন্ধকার। ওড়না দিয়ে কোনো রকমে নাক চেপে স্রোতের বিপরীতে হাঁটার মতো হাঁটছি। কতজনের কত কথা উপেক্ষা করেই। কোনো কথাকেই কানে নেই নি আজ! কেননা, আগে গন্তব্যে পৌঁছতে হবে, প্রকৃতি বিপরীত দিকে অবস্থান করছে। 

যাহোক, ধুলো ঝড়, বৃষ্টি মাথায় নিয়ে হাঁটছি। শরীরটা অসুস্থ। তবুও চলতে হয়, জীবনসংগ্রামে লিপ্ত থাকতে হয়।

মূল ঘটনা : 

আজিমপুর পার হওয়ার পর আমি স্বস্তিবোধ করছিলাম। নিজের বাসার কাছাকাছি আর যাইহোক, হাইকোর্ট, পলাশী তো পার হয়েছি। ভিকারুননেছা কলেজ পার হওয়ার পর, রাস্তার অপজিট আজিমপুর কবরস্থানের দিকে চোখ দুটো ফিরলো, কেনো বুঝতে পারলাম। অবশ্যই পুরো রাস্তায় এদিক, ওদিক তাকিয়ে হাঁটছিলাম। বিশ্বাস করুন, চোখদুটো এমন সময় কেনো রাস্তার অপজিটে গেলো? 

একটা মেয়ে হাঁটছে, মাথায় ছাতা। থ্রিপিছ পরা, ওড়নাও ছিলো। খুব ধীরগতিতেই হয়তো হাঁটছিলো! পিছন থেকে ৩৬-৩৮ বছর বয়সী এক শূয়োর (পুরুষ) দৌঁড়ে গিয়ে মেয়েটির দু'স্তনে দু'হাত দিয়ে চাপ দিয়েই দৌঁড়। মেয়েটি চিৎকার দিয়ে পিছনে ফিরতেই জানোয়ারটা দৌঁড়ানো শুরু করেছে। আমি রাস্তার অপজিট থেকে দৌঁড়ে ওপারে মেয়েটির কাছে যেতে যেতে জানোয়ারটি কোথাও পালিয়ে গেলো। চরম মেজাজ গরম হলো মেয়েটির ওপর কেনো দৌঁড় দিলো না? 

যাহোক, দু'মিনিট দুজনেই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। চোখ ফেটে জল বেরুচ্ছিলো। আর মেয়েটির একই প্রশ্ন 'আপু কেনো এরকম হলো, ওর ফেস দেখেছেন। আমি তো হতভম্ব আপু!'

সামনে একটা ট্রাক দাঁড়ানো। মনে হলো ট্রাকে উঠেছে। ট্রাকে উঠে খুঁজলাম না নেই। দশ মিনিট ধরে পুরো এপার, ওপার খুঁজলাম। আর মেয়েটিকে বললাম, আজ ধরতে পারলে গামছা দিয়ে (গামছা জানোয়ারটা গলায় ছিলো) গলা পেঁচিয়ে টান মারতাম, পরে রাস্তায় ফেলে ওর অণ্ডকোষ ইট দিয়ে থেঁতলে দিতাম। বিশ্বাস করুন, আর কোথাও টাচ করতাম। দেখতাম, ওর লিঙ্গের পাওয়ার কতটুকু! মেয়েটির একই প্রশ্ন, আপু ফেস চিনছেন....? 

দু'জনে কিছুক্ষণ ভিজলাম। মেয়েটি ইডেনের ছাত্রী। হলে ফিরছিলো। নাম লায়লা। বলছিলো, 'আপু এরকম নিপীড়নের শিকার হই নি কখনো, আপু আমি বুঝতে পারছি না- এ কোন দেশ? 

আমার একই প্রশ্ন এ কোন দেশ? হাজার হাজার পুরুষও বৃষ্টিতে ভিজে হাঁটছিলো। তাদের প্যান্ট, টাওজার, টিশার্ট ভিজা ছিলো। টিশার্ট ভিজে স্তনের নিপল দেখা যাচ্ছিলো, টাওজার ভিজে লিঙ্গ বোঝা যাচ্ছিলো- ওদেরকে তো আমরা গিয়ে চেপে ধরছি না, খামচে ধরছি না! তার মানে আমাদের কাম-বাসনা নেই? নাকি, ওদের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি আছে? 

মেয়েটি আমাকে কন্ট্রাক্ট নম্বর দিলো। বললো, 'আপু সমবায়ে, হলে আমার বন্ধুর অভাব নেই। ওরে ধরতে পারলে খবর ছিলো'। আমি বললাম, মন খারাপ করবেন না, এটাই পুরুষতান্ত্রিক, ভোগতান্ত্রিক সমাজের চিত্র। আমরা নারীরাও এটাকে ধারণ করি। নম্বর রাখেন, কথা হবে, দেখাও করবো। 

হাতে, হাত রেখে বিদায় নিলাম। মেয়েটির চোখ ছলছল। আমারটা নাই বলি! কেনো পারবো না আমরা ভিজতে, চলতে, হাঁটতে? 

খুব ভারাক্রান্ত মন নিয়েই হাঁটছিলাম। ঠিক ব্রীজ পার হবো তখন এক শূয়োরের টিজিং 'বড় দেখাচ্ছে, খেতে ভালো লাগবে' বলেই মিলিয়ে গেলো। কি করবো? এই দেশ আমার না! এই একদিনে কতজনের দ্বারা টিজিং হলাম? কেনো হলাম? পোশাকের দোষে? আজ অন্যদিনের চেয়ে পোশাক ছিলো পুরো ভিন্ন। কামিজ, ওড়না, প্যান্ট। আর মেয়েটির পুরো থ্রিপিছ! তোরা যারা বলিস পোশাক দায়ী, চাল, চলন দায়ী। তোদের স্পষ্ট করে বলি তোদের লিঙ্গ দায়ী। বন্ধুরা, লিঙ্গ থেঁতলিয়ে দিতে হবে, এক ইটে রেখে আরেক ইট দিয়ে। কেননা, জানোয়ারদের গায়ে হাত দিলে হাতও নোংরা হবে। 

জানি না, মেয়েটি কি ভাবছে! কল দেই নি! কি বলবো- টেনশন করিয়েন না, পৌঁছেছেন, খেয়েছেন? এসব সুশিলীয় সান্ত্বনা দিতে ইচ্ছে করছে না।

মেয়েটির আরো প্রশ্ন, 'আপু স্তনে, পাছায় হাত দিয়ে লাভটা কী?' ওদেরকে ধরে মারতে মারতে প্রশ্ন করতে হবে, সেই প্রস্তুতি নিন বলেছি। 

এই লেখ তার দৃৃষ্টিতে পড়বে হয়তো! তাকেও বলেছি লিখতে। জানি না, তার লেখার মতো সৎ সাহস আছে কি না! তবে, ধিক্কার পুরুষ জাতিকে। আমি সোনার দেশও বলতে পারছি না সরি! হুম, সোনার দেশ গড়ার জন্যই পূর্বসূরীরা রক্ত দিয়েছিলেন- কিন্তু তাদের উত্তরসূরীরা বর্বর থেকে বর্বর! এর মাত্রা আরো ভয়ংকর হবে- আমি নিশ্চিত। এখনই রুঁখে দাাঁড়াবার সময়। নচেৎ, গা থেকে পোশাক খুলে নিবে।

আপনারা যারা মহা আরামআয়েশে থেকে, এসির নিচে বসে দুু'কলম লিখে নারীদের পক্ষে অবস্থান করেন তাদের বলছি, মূলে আঘাত করুন, সামাজিক অবক্ষয়ের কথা বলুন, পুরুষতন্ত্রের সাথে পুঁজিবাদ, ভোগবাদী সংস্কৃতির কথা বলুন। নারীবাদী আন্দোলনই করুন তবে সব নারীদের অসুবিধা নিয়ে কথা বলুন- শ্রেণিসংগ্রামের কথা বলছি না কিন্তু! কেনো, আপনাদের বলছি জানেন, এই পুঁজিবাদী সমাজে আপনাদের বেশ কদর, পুঁজিবাদী সংস্কৃতি আপনাদেরকে প্রয়োজনে ব্যবহার করে। তাহলে, আপনারা কেনো করবেন না? আপনারাও সুযোগে পুঁজিবাদী সিস্টেমকে আপনাদের নারী সমাজের কথা বলুন প্লিজ! রাগ, গোস্সা করবেন না, যদি 'নারীবাদ' তবে সকল নারী কথা বলুন। তবে, 'নারীবাদী' বসে থাকবেন না।
পৃথিবীর কোথায় নারী নিরাপদে আছে? আমার বড় জানতে ইচ্ছে করছে! 
আমি হতাশ। আমি পুরো সমাজের অবক্ষয় নিয়েই হতাশ। 
নারী শুধু একটা ব্যাপার। সবকিছু নিয়েই এ দেশে স্বপ্ন দেখতে পারছি না।

1793 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।