ফাহরিয়া ফেরদৌস

এডভোকেট , বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট।

ভালোবাসাই হোক নারী পুরুষের সম্পর্কের বন্ধন

দুই বা ততোধিক ছেলেদের সাথে যখন পরিচয় হয় তখন কে কি করে তা জানার পর যার যার পেশা ভিত্তিক আলোচনা শুরু হয়ে তা দেশ, বিদেশ, রাজনীতি ও অর্থনীতি পর্যন্ত গড়ায়। কথার প্রসঙ্গে বাচ্চা সংক্রান্ত কোনো বিষয় আসলে তবেই বিবাহিত জীবন বা সন্তান বিষয়ক আলোচনা হয়। 

 

দুই বা ততোধিক মেয়েদের সাথে পরিচয় হয় তখন নিজেদের পরিচয় পর্বের পরই শুরু হয় বিয়ে হয়েছে কিনা? মাঝে মাঝে কেউ কেউ কিছু করে কিনা জিজ্ঞাসা করে, তবে এর প্রের প্রশ্নও সেই বিবাহ বিষয়কই হয়! ভাই কি করে অথবা সাহেব কি করে? বাচ্চা আছে কিনা? এক বাচ্চা থাকলে আরেক বাচ্চা নিচ্ছে না কেনো? আর যদি বাচ্চা না থাকে তবে তো কেনো বাচ্চা হচ্ছে না সে বিষয়ে গবেষণা! আর যদি বিয়ে না হয়ে থাকে তবে তো কথাই নেই! এখনো বিয়ে করছো না কেন? বেশি বয়স হয়ে গেলেতো বাচ্চা নিতে কষ্ট হবে! অনেক রিস্ক!

মানলাম! একটা মেয়ের জীবনে কি বিয়ে, বাচ্চা জন্ম দেয়া ছাড়া আর কোনো কাজ নেই? একজন মেয়ের জীবনের অন্য কোনো অর্জন কি অর্জনের আওতায় পড়ে না? একটা মেয়ে সমাজে যতই স্ট্যাবলিস হোক না কেনো, যতই সুন্দর হোক না কেনো, যতক্ষণ বা যতদিন পর্যন্ত তার গায়ে কোনো পুরুষের সাইনবোর্ড না থাকবে ততদিন তার সব সাকসেস এর শেষেও একটা “কিন্তু” শব্দ স্থান পায় এবং দেখেছি সেই নারী নিজেও তার সাকসেস বা সৌন্দর্য্য নিয়ে আমতা আমতা করে। আজ অব্দি কোনো নারী সার্কেলের প্রধান আলোচনার বিষয়বস্তু রাজনীতি বা অর্থনীতি হয়নি। খুব অজান্তে হলেও নারী এখনও ভাবে যে সে যদি তার স্বামী বা বাচ্চা নিয়ে আলোচনা না করে তবে তার নারীত্ব পুর্ণতা পায় না, অথবা তিনি একজন নারীর যে সকল দায়িত্ব তা সে সঠিক ভাবে পালন করছে না!   

কত দম্পত্তি আছে যাদের সন্তান হয় না, তারা চিকিৎসা সহ মসজিদ, মন্দির, মাঝার কোনো জায়গা বাদ রাখে না সন্তান প্রাপ্তির প্রার্থনায়। অনেক সাধনার পর অনেকের ঘর আলোকিত করে সন্তান আসে, সেই সন্তান বড় হয়ে আবার বাবা মায়ের চোখের পানির কারণও হয়। সে সন্তান আবার বুড়ো বয়সে বাবা-মা কে রেখে চলেও গেছে, তখন সেই বুড়ো আর বুড়িই একে অন্যের সঙ্গী হয়ে থাকছে। 

বাবার মৃত্যুর পর এক ঘরে বসে কোনো মাকে একাকী সময় পার করতেও দেখেছি জি বাংলায় সিরিয়াল দেখে! বউ সন্তান নিয়ে ভ্যাকশনে ঘুরতে যাবার সময় মাকে একাকী বাড়ীতে রেখে যেতে অথবা অন্য ভাইবোনের বাসায় রেখে যেতে। ভাগাভাগি করে সে মাকে রাখতেও দেখেছি। যে মা এক সময় গয়না বিক্রি করে সন্তানদের পড়িয়েছে সে মাকে দেখতে আসতে পারে না, নিজের ব্যাক্তিগত গাড়ি এভেইলেবেল না থাকার জন্য! যে মা তার মেয়ের জন্য সব করেছে সে মা যখন অসুস্থ তখন ঐ মেয়ের কাছে মায়ের চেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে তার ছেলের বা মেয়ের ঘরের নাতিনাতনীর সুস্থতা। অনেক দম্পত্তিকে দেখেছি শুধু সন্তানের জন্য একই ছাদনা তলায় থাকতে; আবার কোনো নিসন্তান দম্পত্তিকে দেখেছি অনেক অনেক ভালোবাসা আর সম্মানের সাথে সংসার করতে। সন্তান না থাকায় স্ত্রী যেন কষ্ট না পায় তাই পুরুষটিকে দেখেছি স্ত্রীর প্রতি মায়ামমতা আর কেয়ারিং হতে।

ভাবছেন আমার সন্তান নেই তাই এতো কথা বলতে পারছি! যেদিন নিজের সন্তান হবে সেদিন বুঝবো সন্তান কি জিনিস! ভুল। আমি উপলব্ধি করেই বলেছি। সন্তান যখন থাকে না তখনই মানুষ সন্তানের বিষয়টা বুঝতে পারে বলেই সন্তান না হলে মানুষ কাঁদে। সাথের মানুষ যদি ভালোবাসার হয়, নির্ভরযোগ্য হয়, ভালো হয় তবে পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে আর অন্য কোনো হাতের দরকার হয় না; মানুষের স্মৃতি নিয়ে জীবন পার করে দিয়েছে আমাদের সমাজে এমন মানুষও আছে।

আমি চাই না শুধু সন্তান জন্ম দেবার জন্য বিয়ে করতে, আমি চাই না শুধু বুড়ো বয়সে আমার দেখাশোনার জন্য সন্তান লাগবে তাই বিয়ে করতে, আমি একা হয়ে যাবো সে জন্য বিয়ে করতে। আমি চাই না কোনো পুরুষ আমাকে স্পর্শ করুক তার বংশ আগে বাড়ানোর জন্য, আমি চাই না আমাকে কোনো পুরুষ সম্মান করুক কেবলমাত্র আমি তার সন্তানের মা বলে! আমি চাই আমার পুরুষ আমাকে ভালোবাসুক তার ভালো লাগার জন্য, আমার জন্য, আমাদের জন্য, আমাদের সন্তান পৃথিবীর আলো দেখুক আমাদের ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে। আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ আমার ভালোবাসার মানুষ, আমার পুরুষ!    

 

2223 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।