সুষুপ্ত পাঠক আজ একটি স্ট্যাটাস নিয়ে হাজির হয়েছেন। নারীবাদ নিয়ে যেখানে তিনি হালের নারীবাদীরা কী কেমন, তারা কোন তন্ত্র চায়, এতদিন ধরে কী চর্চা করে আসছে এই নিয়ে মোটাটামুটি একটি ধারণা দিয়েছেন। তবে শেষটা ছিলো দুর্দান্ত এটাই হয়ত টেকনিক। লেখাটির শেষে পাগলা কুকুর নামের পয়েন্টটি আর দু’একটি বাক্য ছাড়া পুরোটাই আমার অর্থহীন অবাস্তব বিশ্লেষণ মনে হয়েছে।
প্রথমেই দাদা পাগলা কুকুর নামে যে পয়েন্টি দিয়ে তিনি লিঙ্গ কর্তন বিষয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেছেন তার জন্য আলাদাভাবে ভালোবাসা ও ধন্যবাদ রইল, শুরুটা তো ভালো দিয়েই করতে হয়। এই নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই আমার।
দ্বিতীয়ত তিনি বলেছেন “পুরুষ মাত্রই ধর্ষক হলেও নারীবাদের মাথা ঘামানোর কিছু নেই এখানে” আসলেই তো ধর্ষণের মতো গর্হিত অপরাধ নারীবাদের মধ্যে পড়ে না। কখনো আলাদাভাবে আর এই নিয়ে কথা বলার জন্য নারীবাদী হতে হয় না। খুব খুব সিম্পল সাধারণ বিবেকধারী মাত্রই ধর্ষণের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে, এমনকি একজন মোল্লাও পারে। এর জন্য নারীবাদী হতে হয় না। কিন্তু আদতে আমরা কী দেখছি কোনো ধর্ষণ সংগঠিত হলেই ৮০% নারী পুরুষ মেয়েটির পোশাকের দোহাই দিয়ে ধর্ষণকে জায়েজ করার চেষ্টায় থাকে। সে ক্ষেত্রে এটা নিয়ে কথা বলা এক ধরনের দায়িত্ব হয়ে পড়েছে সবার জন্যই, সেটা হোক নারীবাদী বা যে কারো জন্যই। ধর্ষণের বিচারের জন্য আলাদা ভাবে কথা বলতে হয় এবং অনেকে একে নারীবাদের মধ্যে ফেলে দিয়েছে এর চেয়ে হাস্যকর বা দুঃখজনক কি হতে পারে?
কয়েকদিন আগে আমার এক বন্ধু ধর্ষনবিরোধী মানব বন্ধনে দাঁড়ায়নি সেখানের কয়েকজন নারীবাদীকে দেখে তার ভাল লাগেনি বিধায়, কাছে দাঁড়িয়ে ছিলো। একে কতটা নারী সম্পর্কিত আন্দোলন ধরে নিচ্ছি আমরা ভাবতেই গা শিউরে ওঠে।
তো ধর্ষণ নিয়ে কারা কথা বলবে? কেনো কথা বলবে? বলছে না কেনো? দেশে কি হারে ধর্ষণ হচ্ছে এগুলো নিয়ে দু’একটি বাক্য বা কোনো রকম ক্লিয়ার না করেই তিনি বিভিন্নভাবে নারীবাদিরা কোন তন্ত্র চর্চা করে সেটি বোঝানোর জন্যই বিশদ বর্ণনা দিলেন। খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি হলে যা হয় আরকি।
তিনি আরো বলেছেন -পুরুষ যদি নারীর জন্য সত্যি সত্যি হিংস্র হয় সেটাও নারীবাদের সাবজেক্ট নয়, সেটাও সত্যি, সম্পূর্ণ একমত। নারীর উপর পুরুষের যে হিংস্র অপরাধগুলো প্রয়োগ হচ্ছে প্রতিদিন, এগুলোর বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য আলাদাভাবে নারীবাদী হতে হবে কেনো? প্রত্যেকটি সাধারণ গণমানুষের দায়িত্ব এই ঘৃণ্য অপরাধ গুলোর বিরুদ্ধে কথা বলা, সোচ্চার হওয়া, কিন্তু আমরা বাস্তবে কী দেখছি? নারী নির্যাতনগুলো ডালভাত হয়ে গেছে কাউকে বদার করছে না মোটেও এবং অনেকেই মনে করে এটা একান্তই নারীঘটিত নারীবাদীদের বিষয়! তাই আজও নারীবাদীদের সমতার কথা না বলে, সাইকেল চালানোর মতো মামুলি অধিকারের কথা না বলে, বলতে হচ্ছে হিংস্র নির্যাতন নিয়েই। পড়ে থাকতে হচ্ছে নারীবাদের অনেকটুকু সময় জুড়ে ধর্ষণ, গণধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, যৌতুক, পুড়িয়ে মারা, প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হলে কোপানো এসব নিয়েই লিস্ট যত লম্বা করবো ততই বাড়বে। কারণ এসব নিয়ে চিল্লানোর কেউ নেই, সবাই মনে করে এসব নারীবাদীদের কাজ।
এবারো সুষুপ্ত দা এসব নিয়ে নারীবাদের মাথা ঘামানোর কিছু নেই বলেই চলে গেলেন আবারো নারীতন্ত্র টপিকে! মনে হয় ধর্ষণ, পুড়িয়ে, কুপিয়ে মারা বিষয়গুলো পানিভাত তৈরির মতোই সহজ সাধারণ একটি রেসেপি, এটি নিয়ে বেশি কথা না বলে বরং নারীতন্ত্র নিয়ে কিছু জ্ঞান দিই। তিনি এ বিষয়য়টির ভয়াবহতা ক্লিয়ার না করে এমনভাবে বলে গেলেন, মনে হয় এসব নিয়ে চিল্লানো নারীবাদীদের কাজ নয় বরং ওদের কাজ কিভাবে নারীতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না হয় সেদিকে নজর দেওয়া, ওদিকে যা হবার হোক। নারী নির্যাতনের ভয়াবহতা না দেখে সোসাইটিতে তিনি দেখতে পাচ্ছেন নারীতন্ত্রের ভয়াবহতা যে কারণে জ্ঞান সব ওদিকেই ঝুকে পরে যাচ্ছে.....।
ধর্ষণ নিয়ে তোমরা কথা বলবা বল। বাপু হাসাইলে তোমরা নারীতন্ত্রই খোঁজ সব কিছুর মধ্যে!
তিনি আরো দুটি বিষয় বিভিন্নভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন এক হলো নারীবাদীরা প্রেম ভালোবাসার মতো বিষয়টি নারীবাদ আন্দোলনের মাধ্যমে অস্বীকার করছে এবং মা হওয়া বা সন্তান জন্মদান বিষয়টি নিয়ে একচেটিয়া নির্যাতন বলে তুলকালাম কান্ড করে যাচ্ছে, রাস্তায় নেমে গেছে! কতটা ছোট সীমাবদ্ধ চোখে উনি নারীবাদকে বিশ্লেষণ করেছেন, মনে হয় যেন প্রেম ভালবাসা, সন্তান জন্মদানে আকাল পরে গেছে দেশে। দেশের জনসংখ্যা, বিয়ে সব উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাচ্ছে বাংলার হাজার বছরের সংস্কৃতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে! উদ্ভুত সব বিশ্লেষণ প্রক্রিয়া.....
আবার এসব নিয়েই আরেক শ্রেণি বলবে আজকের নারীবাদীরা তো ভোগ আর ফ্যাশন আর যৌন স্বাধীনতা নিয়ে ব্যস্ত। কোথায় কোন নারীর কী হলো, ধর্ষণ হলো নাকি মরলো, তাদের তা দেখার প্রয়োজন আছে? শহুরে নারীবাদী, ভোগবাদী, পূঁজিবাদী ব্লা ব্লা ব্লা... ধর্ষণ, হিংস্রতা নিয়ে কথা বললেও সেটি নারীবাদীদের কাজ নয়, না বললেও শুধু শুয়ে বেড়ানোর ধান্ধা.....
উনার যে বিষয়টির সাথে সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করছি তা হলো মহিলাতন্ত্র! এই শব্দটি অত্যন্ত দৃষ্টিকটুভাবে ব্যবহারের চেষ্টা প্রবলভাবে, শুধুমাত্র কটাক্ষ করার জন্যই! বেশিরভাগ অনলাইন পুরুষকেই দেখি নারীবাদকে ঘায়েল করার জন্য তারা নারীতন্ত্র শব্দটি ব্যবহার করে প্রচুর পরিমাণে, নারীবাদকে হেয়, ছোট, খেলো, বির্তকিত করার জন্য। বিষয়টি পুরোপুরি সেরকমই লেগেছে আমার কাছে। একই পন্থা অবলম্বন করেছেন তিনিও।
পুরো লেখাটিতে তিনি শধু নারীতন্ত্রের আভাস দেওয়ার চেষ্টা করেছেন প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে! এই নারীবাদ শব্দটিকে এক নিমিষেই ধূলোয় মিশিয়ে দেওয়ার জন্য কৌশলে ধূর্ত পুরুষকূল এই শব্দ ব্যবহার করে আসছে বহুদিন ধরে। তিনি বলেছেন স্বাধীনতায় উগ্রতা নম্রতা বলে কিছু নেই।
অন্যেরা উগ্রতাকে নারীতন্ত্র বলে তাহলে তিনি কিসের ইঙ্গিতকে নারীতন্ত্র বলেছেন? নারীরা বহুবিবাহ, খুন, ধর্ষণে নেমে গিয়েছে? অনলাইনে অনেকদিন ধরেই নারীবাদ চর্চার সাথে যুক্ত, সে কারণে অনেকটাই ধারণা আছে অনলাইন নারীবাদীরা আসলে কী চায় বা কতটুকু নারীতন্ত্র ধারণ করে। সেদিক দিয়ে বিবেচনা করলে আমি এটিকে শিশুতোষ, উদ্দেশ্যমূলক মন্তব্য বলব। আমি অন্তত দেখিনি আর তা যদি থেকেও থাকে দু’একটি সেটা দিয়ে সমগ্র নারীবাদকে হেয় করে সেটিকে অস্ত্র ধরে নারীবাদকে প্রশ্নবিদ্ধ করার স্থুল চেষ্টা বৈকি? দু’একটি তো ব্যতিক্রম সব জায়গাতেই থাকে। সেটা দিয়ে ঘায়েল করার চেষ্টা করবো আমরা নাকি দু’একটি ভুল ত্রুটিকে বড় না করে, আমরা দেখবো আসলে সমাজে রাষ্ট্রে কতটুকু নারীবাদ প্রয়োগ হচ্ছে, নারীরা কতটুকু এগিয়ে যাচ্ছে?
পুরুষতন্ত্র থেকে যদি কেউ পুরোপুরি বের হতে না পেরে, সেই চোখ দিয়েই নারীবাদকে বিশ্লেষণ করে, তো তার নারীতন্ত্রই চোখে লাগবে বেশি, সেটাই স্বাভাবিক, এর ব্যতিক্রম হলেই অবাক হতাম। বরং পিছিয়ে পরা জাতির বসে বসে ভুল গুলো বিশ্লেষণ না করে দেখা উচিত তারা কতটুকু উন্নতি করেছে। উন্নতি যত তাড়াতাড়ি হবে, করে আসা ভুল গুলোও তত তাড়াতাড়ি সলভ হবে। নারীতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে দেখাতে পারবেন না কোন উগ্র নারীবাদী কোন পুরুষকে পালটা প্রতিশোধের নামে খুন ধর্ষণ করতে নেমে গিয়েছে.... যা করে সেটা ওই সামান্য কলমেই... দীর্ঘ দিনের ক্ষোভ বঞ্চনা অত্যাচার নিপীড়ন থেকে! এ টুকু না বুঝে যদি নারীবাদের শিক্ষক হন, আর ওই ভুল নিয়েই তটস্থ থাকেন, আড়ালে পুরুষতন্ত্রের শাণই হবে শুধু আপনাদের দ্বারা...