বয়স এখনো ১৮ পেরোয়নি আমার। তবে জীবনের কিছু বিভৎসতা অনেক কিছু শিখিয়েছে। ছোটবেলায় বড্ড ছিঁচকাঁদুনে ছিলাম। হঠাৎ কান্না গুলো আগুন হয়ে যেতে শুরু করলো। একটি ঘটনা এখনো মনে পরলে চোখটা ধোঁয়াশা হয়ে যায়। তখন আমি ক্লাস এইটে। আমরা ঢাকা থেকে নাটোর নিজ বাড়িতে চলে আসি। আত্মীয় স্বজনরা বাড়িতে আসা যাওয়া শুরু করলো। এর আগে খুব একটা কানেকশন ছিলো না এদের সাথে।
বড় মামার ছেলে। বয়স আনুমানিক ৩৩। এক সন্তানের বাবা। একদিন সন্ধ্যেবেলা এলো। সেদিন বিকেল থেকে আমার প্রচন্ড জ্বর ছিলো। শুয়ে ছিলাম। এসে মায়ের সাথে কথা বলছিলো সে। আমি বাইরে এলাম। কেমন আছি, জিজ্ঞেস করলো। অসুস্থ দেখে বললো, যা ঘরে গিয়ে বিশ্রাম কর। আমি চলে গেলাম। সন্ধ্যে বেলা মা গেল চা বানাতে। আমার বড় ভাই ছিলো বাইরে। তখন সে ঘরে এলো। আমি উল্টো দিক ঘুরে কম্বল জড়িয়ে শুয়েছিলাম। হঠাৎ কপালে কেউ হাত দেওয়ায় চমকে উঠলাম। দেখলাম আমার মামাতো ভাই। আমার বিছানার পাশে একটা সোফায় সে বসলো। বললো, "তোর তো খুব জ্বর রে! ওষুধ খেয়েছিস? বললাম "হ্যাঁ, খেয়েছি"। এই বলে আমি আবার অন্যদিকে ঘুরে শুয়ে পড়লাম। ঘুম ঘুম লাগছিলো। হাল্কা চোখ এঁটে এলো। আমার মা রান্নাঘরে রান্না করছিলো তখনও। কয়েক মিনিট পর টের পেলাম একটা হাত আমার কপাল বেয়ে ঘাড় বেয়ে পিঠের দিকে নামছে। আমার জ্বর বেড়ে গিয়েছিলো তার আগে। কষ্ট হচ্ছিলো। তখন আমি বুঝতে পারছিলাম না কি করবো। হাত নামছে পিঠ অব্দি। ভাবলাম চিল্লাই। কিন্তু চিল্লালে যদি অন্যভাবে অসভ্যতামি করে! ভয়ে আতঙ্কে চিল্লাতে পারিনি। চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছিলো। হাতটা এবার গাল থেকে গলায় পৌছোলো। এবারে আর সহ্য করতে না পেরে দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আমার বড় ভাই কে ফোন করে বাড়ি আসতে বললাম। মাকে বললে না বুঝে প্যারানয়েড হতো। ও আসার পর একটু ভরসা পেলাম। সুযোগ পেলেই অসভ্য জানোয়ার টা ছোঁয়ার চেষ্টা করতো। এভাবে দু’দিন ঘটেছে। তৃতীয় দিন প্রচন্ড রেগে বলেছিলাম, এরপর এরকম করতে এলে জেলে তো যাবিই এবং আজীবনের মতো বিশেষ অঙ্গ টা হারাতে হবে তোকে! আই ওয়ার্ন য়্যু!
শুধু যে পুরুষদের কাছেই শিশুরা ভিকটিম হয় তা নয়, অনেক সময় মেয়েদের দ্বারাও এধরনের এবিউজ হতে পারে। আমার মামাতো বোন। বয়সে ৯ বছরের বড়। ওদের বাড়িতে বেড়াতে গেলে বা ও আমাদের বাড়িতে এলে আমাদের রাতে এক সাথে শুতে হতো। আমি ঘুমিয়ে পড়তাম। একদিন রাতে ও আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গার হাত দিতে লাগলো। কিছু বুঝলাম না। ক্লাস সেভেনে পড়তাম। ভাবলাম, হয়তো ঘুমের ঘোরে আদর করছে। কিন্তু যেভাবে স্পর্শ করতে লাগলো প্রচন্ড অস্বস্তি হচ্ছিলো। খারাপ লাগছিলো। আমি হাত সরিয়ে দিচ্ছিলাম। পরের দিন আবার একই ঘটনা। হঠাৎ খুব রেগে চিল্লালাম, "এসব কী? আমার অসহ্য লাগছে "তারপর থেমে গেলো। এরপর এরা দু’জন আর আমার সামনে মাথা তুলে দাঁড়ানোর সাহস পায়নি। তবে রাস্তাঘাটে কোনোদিন কোনো প্রকার এবিউজ সহ্য করিনি। আওয়াজ তুলেছি, হাত তুলেছি, জুতো তুলেছি। নিজের সাথে বা যেকোনো মেয়ের সাথে কোনো প্রকার হ্যারাজমেন্টের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি। এদের বেলায় কেঁদেছিলাম। ঘৃণায়। এরপরও এদেরকে আমার আত্মীয় বলে পরিচয় দিতে হবে!