অনুরণন সিফাত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেছেন। পেশায় চাকুরে তবে পাশাপাশি বাংলাহাব নামক অনলাইন পোর্টালের একজন লেখক হিসেবে কাজ করছেন।

বিশেষ কোনো নারী অধিকার চাই না

নারী অধিকারের পোস্ট দেখতে দেখতে এখন হাসি পায়। নারী পুরুষ নির্বিশেষে তারা যা লিখে বা বলে সেটা নিজেরা বিশ্বাস করে তো? বাসে যখন একটা মেয়ে মলেস্ট হয়... প্রতিবাদ করে ক'জন নারী বা পুরুষ তার পাশে দাঁড়ান শক্তি হয়ে?

অনেক নারী তো আজকাল নিজেই পন্য হতে পছন্দ করে.. 'আইটেম' হতে চায়। আবার সেটা গর্ব করে বলতেও পিছপা হন না।

এই তো বছর কয়েক আগেও নারী দিবসের দিন রাতে হলে ফেরার সময় সিএনজিতে পেছনে সিট না থাকায় সামনে ড্রাইভারের পাশের সিটে বসায় ছেলেরা টিটকারি মারলো।

সেই প্রথম বর্ষে রাতের ট্রেনে হলে ফিরতাম আমরা ৫/৬ জন মেয়ে। নিরাপত্তার অভাব বোধ করতাম বলেই একসাথে ফেরা হতো...তখন থেকেই ড্রাইভারের পাশে বসেই এক সিএনজিতে আমরা আসতাম। এখন মেয়েদের সংখ্যা অনেক...কই এই ৫ বছরেও দৃষ্টিভঙ্গির তো পরিবর্তন দেখি না। আমাদের দিকে অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে থাকা কেন?

না... আমি আলাদা  কোনো নারী অধিকার চাই না। আমি চাই...আমার পাশে একদিন নারী ড্রাইভার সিএনজি চালাবে।

টিউশন থেকে ফিরছিলাম....রাত আটটা…ষোলশহর স্টেশন হয়ে ফিরছিলাম...বিশ্রী ভাবে ধাক্কা দিলো এক লোক। কিচ্ছু বলি নি...শুধু তার পেছন পেছন হাঁটা শুরু করছিলাম...তাতেই ভোঁ দৌড়।

কিন্তু আজকাল ওরা অনেক সংঘবদ্ধ। ছক আগে থেকেই কষে রাখে। তাই টিওশনফেরত মেয়েরা ঘরে আসার আগ পর্যন্ত বোধকরি তনুর মতো হারিয়ে যাওয়ার আতংকে থাকে।

এখন আর চট্টগ্রাম শহরে থাকা হয় না। আমার ক্যাম্পাসটা কেমন সেটাও জানা নেই। শুনেছি ক’দিন আগেও ক্যাম্পাসের মেডিকেল অফিসার এর নামে যৌন হয়রানীর অভিযোগ উঠেছে। আমাদের মেয়েরা প্রতিবাদ ও করেছিলো। সঠিক সুরাহা হওয়ার আগে প্রথম ধাক্কাতে আঘাত কিন্তু মেয়েদের চিকিৎসা সেবার উপরই এসেছিলো। বলাবাহুল্য... তারা সুবিচার পায় নি। কিন্তু ঢাকা শহর ও কি মুক্তি দিতে পেরেছে আমাকে? কেন নির্দ্বিধায় আজ আর কোন পুরুষ মানুষকে বিশ্বাস করতে পারি না বলতে পারেন?

শুধু আমি নই... বাংলাদেশের কোনো মেয়েই বোধহয় পারছে না আর।

আমাদের তনুকে ভালুক মেরে রেখে যায়। আমার ৪ বছরের শিশু ধর্ষিত হয় শিক্ষকের হাতে। আমার ঘরের সামনে পিস্তল উঁচিয়ে আমার বোনের সম্ভ্রমহানি করেন।

না আমি আর কারও কাছে নিরাপত্তা চাই না... ছোট্ট একটা পিস্তল কিনবো ভাবছি।। আমাদের দায়িত্ব যখন কারো নয়... আমিই নিজের দায়িত্ব নিবো।

কিবা করার আছে? রাষ্ট্রযন্ত্র ভাবতে বাধ্য করছে আমাদের। হয় আইন নিজের হাতে তুলে নিতে হবে অথবা অদিতির মতো বলতে হবে.. থাকবো না আমি এমন দেশে আর! ঠিকই তো কেনো থাকবে..  যেখানে ভরদুপুরেও সসম্মানে ঘরে ফেরার নিশ্চয়তা নেই।

নাহ... আমি কোনো বিশেষ নারী অধিকার চাই না। নারী হিসেবে আমার আলাদা কোনো সুবিধার দাবিদার আমি নই।

আমি চাই....নারী আগে মানুষ হয়ে উঠুক।

চিন্তায়...মেধায়... মননে নারী আগে নিজেকে মানুষ ভাবতে শিখুক।

তবে... মানুষ হিসেবে আমি আমার পূর্ণ অধিকার চাই।।

1325 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।