বিয়ের আনুষ্ঠানিক চুক্তির আড়ালে অলিখিত ধারা-উপধারা বিশিষ্ট অগণিত শর্ত সন্নিবেশিত থাকে। অলিখিত হলেও শর্তগুলোতে এত জোর দেয়া থাকে যে কোনো একটি শর্তও স্ত্রী বা মেয়েদের পক্ষে অগ্রাহ্য করা সম্ভব হয় না বা অগ্রাহ্য করতে পারে না। যদি কোনো স্ত্রী তা করার চেষ্টা করে তবে গোটা সমাজ তাকে ছিঁড়ে খায়, অকথ্য নির্যাতন নেমে আসে তার ওপর যা দেখে সমাজের অন্য মেয়েরা ভয়ে কুঁকড়ে যায়।বিয়ের পরে যেসব শর্তের আবর্তে নারীকে বেঁধে ফেলা হয়-
১। বিয়ের পর নারীকে চিরচেনা পরিবেশ, আজন্ম আপনজনকে ছেড়ে স্বামীরূপী সম্পূর্ণ অচেনা-অপরিচিত মানুষের বাড়ীতে উঠতে হবে।
২। নিজের পদবী ত্যাগ করে নিজের নামের সাথে স্বামীর পদবী বা নামের অংশ জুড়ে নিয়ে সারাজীবন স্বামীর পরিচয়েই বাঁচতে হবে, যত শিক্ষিত বা অর্থশালীই হোক না কেনো। উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ, বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়া ও জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদ উল্লেখ্যযোগ্য। আরো পেছনে গেলে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত নামটিও একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করা যায়।
৩। নারীকে শাঁখা-সিঁদুর পরতে হবে। কারো মাথায় সিঁদুর ও হাতে শাঁখা থাকা মানে তার একজন পতি (প্রভু, মালিক) আছে।
৪। স্বামীর মঙ্গল কামনা করে স্ত্রীকে নানা তিথিতে নানা ব্রত পালন করতে হবে।(স্বামীর মঙ্গল কামনা করতে করতে নিজের মঙ্গলের দিকে নজর দেয়ার আর ফুরসত থাকে না)
৫। পড়াশোনা ছাড়তে হবে।
৬। নিজের পছন্দের পোষাক বাদ দিয়ে স্বামীর পছন্দের পোষাক পরিধান করতে হবে, তা যদি বোরকা, হিজাব, নেকাবও হয় তাতে কোনো ওজর আপত্তি চলবে না।৭। খেলাধুলা বন্ধ করতে হবে।
৮। বন্ধু-বান্ধব ছাড়তে হবে।
৯। মোটা অংকের যৌতুক দিতে হবে। এবং নতুন সংযোজন-
১০। ফেসবুক একাউন্টের পাসওয়ার্ড স্বামীকে দিতে হবে।
এইসব শর্তের বাইরে একটি প্রধান শর্ত রয়েছে, তা হলো বিয়ের পর স্ত্রীকে স্বামীর দাসত্ব করতে হবে। স্ত্রী শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী বা গরীবের সন্তান, গ্রাম অথবা শহরের যাইহোক না কেনো তাকে স্বামীর দাসত্ব করতেই হবে। এই দাসত্বের শর্তকে আবার চারটি কর্তব্যে ভাগ করা হয়েছে-
১। স্বামীর সেবা করা।
২। স্বামীর মনোরঞ্জন করা।
৩। স্বামীর বংশ রক্ষা করা।
৪। বিনা প্রশ্ন ও বিনা প্রতিবাদে স্বামীর যাবতীয় আজ্ঞা ও নিষেধাজ্ঞা পালন করা।উক্ত কর্তব্যগুলো পালন করার জন্য নারীকে শিশু অবস্থাতেই সংসারধর্মের দীক্ষা দেয়া হয় এবং মগজে কতক মন্ত্র ঢুকিয়ে দেয়া হয়- স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেস্ত, পতিই সতীর গতি, সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে ইত্যাদি। বিয়ের আগে নারীকে এই কথাটি শিখে নিতে হয় যে, সংসার সুখে রাখার দায় শুধু স্ত্রী বা পত্নীর, স্বামী বা পতির কোনো দায় নেই। আর সংসারের সুখ মানেইতো বোঝায় স্বামীর সুখ। এজন্য নারীকে আগেই শিখিয়ে দেয়া হয় যে, পতি বা স্বামী অসন্তুষ্ট হয় এমন কোনো কাজ যেন স্ত্রী'রা না করে, স্বামীর অনুমতি ছাড়া যেন একটি পাও না ফেলে, স্বামী প্রহার করলেও তারা যেন মুখ বুজে সহ্য করে।
( চলবে ) (প্রথম পর্বের জন্য এখানে ক্লিক করুন)