বিউটি আক্তার নামের একটা মেয়ের ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে ফেসবুক জুড়ে। সবুজ জমিনে দুই পাশে হাত ছড়িয়ে দিয়ে চিত হয়ে নিথর শুয়ে আছে সে। তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে বেশ কিছু কৌতুহলী মানুষ। বিউটি মৃত। ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে তাকে। এটা তার দ্বিতীয় দফা ধর্ষণের শিকার হওয়া। প্রথমবার ধর্ষণের পর বিচার চেয়েছিলো বিউটি। এই অপরাধে দ্বিতীয়বার তাকে ধর্ষণ করা হয়। শুধু ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত থাকে না ধর্ষণকারীরা, হত্যা করে সবুজ মাঠে ফেলে রেখে যায় তারা তাকে।
আমাদের সমাজটা ধর্ষণপ্রবন একটা সমাজ। এখানে পাঁচ বছরের শিশু থেকে শুরু করে পঞ্চাশ বছর বয়সের নারী, কেউ-ই নিরাপদ নয়। প্রতিটা নারীকে বাংলাদেশে দিন পার করতে হয় ধর্ষণের আশংকা এবং আতঙ্ককে মনের মাঝে পুষে রেখে। এটা যে কী পরিমাণ একটা যন্ত্রণা, সেটা নারীরা ছাড়া আর কেউ পুরোটা বুঝবে না। একটা সমাজে, যেখানে নারীর কোনো নিরাপত্তা নেই, সেই সমাজে বসবাস করাটা শুধু অসহনীয় নয়, বিপদজনকও বটে। আজকে বিউটির এই করুণ দশা হয়েছে, কাল যে আমার বা আপনার বোনের, কিংবা আমাদের মেয়ে সন্তানদের একই দশা হবে না, এর কোনো নিশ্চয়তা নেই।
এই নিশ্চয়তা যে নেই, সেটা বাংলাদেশের প্রতিদিনের সংবাদপত্রে চোখ বুলালেই চোখে পড়ে। পত্রিকার পাতা ভর্তি থাকে ধর্ষণের রগরগে খবর দিয়ে। কোথাও একা কোনো ধর্ষণকারী ধর্ষণ করেছে কাউকে, কোথাও বা কোনো নারী শিকার হয়েছে দলবদ্ধ ধর্ষণের। ঘরে-বাইরে সব জায়গাতেই নারীর জন্য অপেক্ষা করছে ধর্ষণ। এই ধর্ষক যে শুধু অপরিচিত পুরুষ হবে, তাও নয়। পরিচিত পুরুষ, আত্মীয়স্বজনদের মধ্যের কেউ-কেউও ঝাঁপিয়ে পড়ছে একাকী কোনো নারীকে সুযোগ পেলেই। এই সব ধর্ষণের আবার বেশিরভাগই পত্রিকার পাতায় আসে না। ধর্ষিতা নারীরা সামাজিক কলঙ্কের ভয়ে চেপে যায় তাদের নির্যাতনের কথা। এদের অনেকে পুলিশের কাছে যেতেও দ্বিধাগ্রস্ত এবং ভীত-সন্ত্রস্ত। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর মতো এর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও ধর্ষণপ্রবণ। এদের হাত থেকেও নারীরা রক্ষা পায় না। দিনাজপুরের ইয়াসমিন তার জ্বলন্ত প্রমাণ।
প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের সমাজ এমন ধর্ষণপ্রবণ কেনো? কেনো দুই লিঙ্গের মধ্যে একটা এমন আক্রমণাত্মক, আর অন্যটাকে তার ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত? ধর্ষণের ভয় মনের মাঝে নিয়ে প্রতিমুহূর্তে চলতে হয় দ্বিতীয় লিঙ্গকে। রাত তো বাদই দিলাম, দিনের আলোও নিরাপদ নয় তার জন্য। তার গতিবিধি সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হয় প্রবল ভয়ে। স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার অধিকারটুকু পর্যন্ত তার নেই। হিংস্র পশুর কারণে এরকম নিরন্তর ভয়ে একমাত্র বনের নিরীহ পশু-পাখিরাই বসবাস করে। আমাদের সমাজে হিংস্র পশু নেই, সেই জায়গা দখল করে নিয়েছে একদল হিংস্র পুরুষ মানুষ। আর এদের ভয়ে নারী সর্বদা আতঙ্কিত, জড়সড়। নিরন্তর ধর্ষণ ভীতির মধ্যে বসবাস করতে হয় বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটা নারীকেই।
ধর্ষণ আসলে কমবেশি সব সমাজেই বিদ্যমান। এর নষ্ট জন্ম সেই অনাদিকালে। যার রূপ আমরা দেখি পৌরাণিক কাহিনীর মধ্যেও। গ্রিক পুরান থেকে শুরু করে ভারতীয় পুরান, সব জায়গাতেই ধর্ষক দেবতাদের জয়জয়কার। পরাশর, জিউস, এরা সব একেকজন ধর্ষণে পটু দেবতা। আজকের দিনে এই ধর্ষক দেবতাদের জায়গা নিয়ে নিয়েছে বীরপুঙ্গব পুরুষেরা। আমেরিকা বলেন, ইউরোপ বলেন, কিংবা আমাদের বাংলাদেশ বলেন, কোথাও নারী মুক্তি পাচ্ছে না ধর্ষণের হাত থেকে। তবে, এর মাঝেও কোনো কোনো সমাজ আছে, যেখানে ধর্ষণের মাত্রা কম। কোনো কোনো সমাজ আছে যেখানে ধর্ষণের পরিমাণ প্রবল। বাংলাদেশ এই দ্বিতীয় গোত্রের মাঝে পড়ে। ধর্ষণের মাত্রার এই কম-বেশি হওয়াটা নির্ভর করে সংস্কৃতির উপর। কোনো কোনো সমাজের সংস্কৃতি ধর্ষণকে নিরুৎসাহিত করে, আবার কিছু কিছু সমাজের সংস্কৃতি একে অনুপ্রাণিত করে, উৎসাহিত করে।
বাংলাদেশেও যে ধর্ষককে ভালো চোখে দেখে হয়, তা নয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমাদের দেশে ধর্ষকের সাথে সাথে ধর্ষিতাকেও সেই অপরাধ করার উস্কানিদাতা হিসাবে অনেক সময় চিহ্নিত করা হয়। ধর্ষণের জন্য কখনো দায়ী করা হয় তার পোশাককে, কখনো বা দায়ী করা হয় তার চালচলন, কখনো বা দায়ী করা হয় তার অসময়ে ঘরের বাইরে আসাকে। বিচার-সালিশ বসলে, ধর্ষকের সাথে সাথে ধর্ষিতারও বিচার হয়ে যায় প্রায়শই।
পুরুষ কেনো নারীকে ধর্ষণ করে, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে চলেছেন পণ্ডিত ব্যক্তিরা বহু আগে থেকেই। সামাজিক বিজ্ঞানের বহু শাখার বহু বিদগ্ধ ব্যক্তি এ নিয়ে নানা গবেষণা করেছেন এবং শেষমেশ এটাই বলেছেন যে, ধর্ষণের জন্য একক কোনো কারণ দায়ী নয়, বরং অনেকগুলো কারণ একত্রিত হয়েই ধর্ষণের মতো নোংরা অপরাধটা সংঘটিত হয়ে থাকে।
এর মধ্যে নারীবাদী লেখকরা ধর্ষণের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁদের মধ্যে ধর্ষণ পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা থেকে উদ্ভূত। ব্রাউন মিলার ধর্ষণের স্বরূপ দেখাতে গিয়ে দাবি করেন যে প্রকৃত ধর্ষণকারী কোনো ব্যক্তি নয়, প্রকৃত ধর্ষক হচ্ছে পিতৃতন্ত্র। তাঁর মতে ধর্ষণ পিতৃতন্ত্রের জন্যে দরকার; কেননা ধর্ষণ পিতৃতন্ত্রের আধিপত্যের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ নয়, ধর্ষণ পিতৃতন্ত্রকে বিপন্ন করে না; বরং কাজ করে পিতৃতন্ত্রের সেনাবাহিনীর মতো।
নারীবাদীদের এই বক্তব্য অনুযায়ী ধর্ষণ হচ্ছে কিছু সুনির্দিষ্ট সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক পরিস্থিতি, যা নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতাকে উৎসাহ প্রদান করে। পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতাত্ত্বিক পেগি রীভস স্যানডে তাঁর ‘দ্য সোশিও কালচারাল কন্টেক্স অব রেপ: এ ক্রস কালচারাল স্টাডি’ গবেষণা গ্রন্থে এই দৃষ্টিভঙ্গির একটা পরীক্ষা চালান। পেগি ১৫৬টা ট্রাইবাল সমাজের উপর গবেষণা চালান এবং আশ্চর্যের সাথে লক্ষ্য করেন যে, এ সমাজগুলোতে ধর্ষণ নেই, বা থাকলেও তা একেবারেই সামান্য, বিরলই বলা চলে। পেগির মতে ধর্ষণমুক্ত সমাজগুলো, যে সমাজগুলোতে ধর্ষণ রয়েছে তার থেকে পুরোপুরিই আলাদা ধরনের। যে সমাজগুলোতে ধর্ষণ বিদ্যমান, সেগুলো মূলত পুরুষ আধিপত্যবাদী সমাজ এবং চরম বিশৃঙ্খলাময় সন্ত্রাসমৃদ্ধ সমাজ। অন্যদিকে ধর্ষণমুক্ত সমাজগুলোতে নারী-পুরুষের সমতা অনেক বেশি এবং নারী এবং তাদের কর্মকাণ্ডের প্রতি অধিক শ্রদ্ধা বিরাজমান সেখানে। পেগি এই উপসংহারে পৌঁছান যে, পুরুষ প্রকৃতিগতভাবেই আক্রমণাত্মক, কিন্তু তা সত্ত্বেও কিছু কিছু সমাজের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য পুরুষের এই আক্রমণাত্মক রূপকে আরো বিকশিত হতে অনুপ্রেরণা যোগায়।
ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন গবেষক ডায়ানা স্কালি এবং জোসেফ ম্যারোলা ধর্ষণের দায়ে কারাবন্দি বেশ কয়েকজন অপরাধীর সাক্ষাৎকার নেন। তাঁরা দেখেন যে, এই আসামীদের অনেকেই ধর্ষণকে ফলপ্রসূ এবং বেশ লাভজনক কাজ বলে মনে করে। তারা বিশ্বাস করে না যে তাদের এই কাজের জন্য শাস্তি পাওয়াটা উচিত। ডায়ানা এবং জোসেফের বক্তব্য হচ্ছে যে, এই লোকগুলো কিন্তু মানসিকভাবে অসুস্থ নয়, যদিও তাদের কথা শুনে সেরকমটাই মনে হতে পারে। এরা আসলে নারীর প্রতি সমাজের যে বৈষম্য এবং বিদ্বেষ, সেটাকেই শুধু চরমভাবে ব্যক্ত করেছে তাদের কথার মাধ্যমে।
নারীবাদী, সমাজবিজ্ঞানী এবং মনোবিজ্ঞানীদের বাইরে, ধর্ষণের বিষয়ে জীববিজ্ঞানীদেরও একটা তত্ত্ব রয়েছে। তাঁদের তত্ত্বের সারকথা হচ্ছে, বিবর্তনের ফলেই পুরুষের কামতৃপ্তির একটি প্রক্রিয়ারূপে উদ্ভূত হয়েছে ধর্ষণ। যদিও এটা বিবর্তনতত্ত্বেরই বিরোধী। এ মত অনুসারে ধর্ষণে লিপ্ত হয় অক্ষম পুরুষেরা। এরা শারীরিকভাবে যোগ্য নয়, এদের প্রয়োজনীয় সম্পদ নেই এবং পর্যাপ্ত মর্যাদার অধিকারী নয় তারা সমাজে। ফলে, কাঙ্ক্ষিত নারী সঙ্গিনী পেতে ব্যর্থ হয় এরা। আর এ কারণেই এরা তাদের প্রয়োজনীয় কাম চরিতার্থ করতে অগ্রসর হয় অপেক্ষাকৃত দুর্বল নারীর উপর শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে।
ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী ডেভিড লিসাক সামাজিক-সাংস্কৃতিক এবং মনোবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিকে একত্রিত করে একটা তত্ত্ব দিয়েছিলেন। তাঁর প্রবন্ধের শিরোনাম হচ্ছে, ‘সেক্সুয়াল এগ্রেশন, মাসকুলিনিটি এন্ড ফাদারস’। তিনি বলেন যে, সংস্কৃতি এবং ব্যক্তির মনস্তাত্ত্বিক ফ্যাক্টর, এই দুইয়ের সংমিশ্রণই ধর্ষণের মূল কারণ হিসাবে কাজ করে। লিসাক একদল কলেজ ছাত্রের উপর এই গবেষণা চালান এবং পরিষ্কারভাবে দেখেন যে ধর্ষক এবং অধর্ষক এই দুই গ্রুপের মধ্যে পিতা-মাতা, বিশেষ করে পিতার সাথে তাদের সম্পর্ক সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের। যারা ধর্ষণ করেছে, তাদের পিতার সাথে সম্পর্ক খুবই দুর্বল ধরনের। এদের বাবারা হয় তাদের কাছে থাকে না, বা বাবার আদরস্নেহ থেকে বঞ্চিত তারা কিংবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাবারা তাদের প্রতি নিষ্ঠুর অত্যাচারী হয়ে থাকে। অন্যদিকে, অধর্ষক দলের সদস্যদের পিতার সাথে সম্পর্ক অত্যন্ত ঘন, উষ্ণ এবং আবেগময়। লিসাক বলেন যে, বাবার সংস্পর্শ বঞ্চিতভাবে সন্তান লালন-পালন পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বৈশিষ্ট্য। এটা ক্ষতিকর মনস্তাত্ত্বিক পরিস্থিতি তৈরি করে পুরুষদের জন্য। কারণ, এর মাধ্যমে নারীর প্রতি আগ্রাসী এবং বৈরিতার মানসিকতা সঞ্চার করা হয় পুরুষদের মধ্যে।
ধর্ষণের কারণ যাই হোক না কেনো, নারীদের জন্য এর ফলাফল বড় ভয়াবহ এবং ভয়ংকর ধরনের। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে ধর্ষিত হওয়াটা নারীর কাছে মৃত্যুর চেয়েও মারাত্মক কিছু। ধর্ষিত হবার গভীর বেদনা এবং অনন্ত অপমানে অন্তহীন এক অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় একজন নারী। এই চরম তিক্ত অভিজ্ঞতা এক লহমায় তাকে ছুড়ে ফেলে দেয় তার পরিচিত সমাজের বৃত্তের একেবারে বাইরে। সে যেন তার এই চিরচেনা সমাজের আর কেউ নয়। তার পরিবার আর তার পরিবার থাকে না। বাবা-মা, ভাই-বোন আত্মীয়স্বজন সবাই পর হয়ে যায় ধর্ষিতা নারীর কাছে। সমাজ আর কিছু বুঝুক বা না বুঝুক, নারীর ইজ্জত ঠিকই বোঝে। ধর্ষিতা নারীটি তাদের চোখে ইজ্জত হারানো এক নারী। ইজ্জত হারানো নারী সমাজের ইজ্জতের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাকে দেখা হয় তখন ভিন্ন চোখে। সেটা অবশ্যই মমতা মাখানো কোনো চোখ নয়। তাকে দেখা হয় অশ্রদ্ধার চোখে। হীন দৃষ্টি লেগে থাকে সর্বক্ষণ তার শরীরে। সু-ব্যবহারটাও জোটে না তার কপালে, বিচার তো অনেক দূরের ব্যাপার। এ যেন আরেক ধর্ষণ। ধর্ষিতা নারী মমতা পাবার পরিবর্তে, করুণা পাবার পরিবর্তে সমাজের হাতে বারবার ধর্ষিত হয়। একারণেই আমাদের সমাজে বহু ধর্ষিতা নারী চেপে যায় তাদের ধর্ষণের কথা। যদি বা কখনো জানাজানি হয়ে যায়, খুব একটা সুখকর হয় না তা তার জন্য। বিচার পাবার পরিবর্তে যে পরিমাণ অপমান এবং নিগ্রহ তার জন্য বরাদ্দ থাকে, সেটাকে হজম করা সম্ভব হয় না সবার জন্য। ফলে, এর থেকে মুক্তির উপায় হিসাবে অনেক মেয়েই আত্মহত্যার মতো চরমপন্থা বেছে নিতে বাধ্য হয়।
বাংলাদেশের সমাজে ধর্ষণ এবং যৌন নির্যাতন অত্যন্ত সুলভ ঘটনা। ধর্ষিতা না হলেও, প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো নারীকে হতে হয় যৌন নির্যাতন বা ইভ টিজিং এর শিকার। একা একটা মেয়ের পক্ষে রাস্তায় বের হওয়াটা বেশ কষ্টকরই আমাদের সমাজে। একা বের হলেই চারিদিক থেকে ছুটে আসে তার উপর যৌন নির্যাতনের কদর্য ঢিল। দল বেঁধে কিংবা পুরুষ প্রটেকশনে চললেও যে নিস্তার আছে, তাও নয়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, বাসে, ট্রেনে, ভিড়ের মধ্যে অসংখ্য হায়েনার হাত এগিয়ে আসে নারীকে উত্যক্ত করতে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রগতিশীল জায়গাতেও বর্ষবরণেও নারী নির্যাতনের ভয়ানক চিত্র আমরা দেখেছি। গ্রামে গঞ্জে স্কুলে-কলেজে যেতে গিয়ে নারীরা শিকার হচ্ছে যৌন আক্রমণের। শহরের মেয়েরাও যে এর হাত থেকে মুক্ত, তা নয়। নানা অফিসে নারীকে হতে হচ্ছে লালসার শিকার। এ যেন নারীর প্রতি শত্রুভাবাপন্ন বিরূপ এক বিরান ভূমি। প্রতি পদে পদে তাকে পা রাখতে হবে সন্ত্রস্তভাবে, অতি সতর্কতার সাথে, চারিদিকে ভয়ার্ত চোখ রেখে। শ্বাপদসংকুল এক জঙ্গলের অনিরাপদ এবং বিপন্ন চিত্রা হরিণ সে। সব শ্বাপদের সমুজ্জ্বল চোখ সমুদ্যত থাকে তার চিত্রপটময় সৌন্দর্যের প্রতি।