ডা. রুমানা বিনতে রেজা

মেডিকেল অফিসার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

বাক্সবন্দি শৈশব

স্টার ওয়ার দেখতে গিয়েছিলাম। স্লো মুভি, গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি। ত্রিশ মিনিটের মতো ঘুমানোর পর উঠছি পাশের সিটের বাচ্চার কান্নায়। ছোট মানুষ, কাঁদতেই পারে।
-আহারে বাচ্চা!

সমস্যা হইলো বাচ্চা নাকি শুরু থেকেই কাঁদছে। ছোট একটা বাচ্চাকে অন্ধকার মুভি হলে বড়দের মুভি দেখতে আনার যুক্তি আমি কোনোদিনই পাই না। একটা বাচ্চা একটু স্টাবল হলে তাকে আনা যায়, যখন সে বাসায় একটু একটু করে পুরো সিনেমা টানা দেখে অভ্যস্ত তখন আনা যায়।

পাবলিক হলে মাঝে মাঝেই বিদেশী শিশুতোষ মুভি আসে, এনিমেশন মুভি আসে। একটু বড় বাচ্চাদের এগুলোতে প্রথমবার দেখিয়ে একটু অভ্যস্ত করে নেয়া গেলেই বাচ্চাটার আর সমস্যা করার কথা না।

অনেকের বাসায় বাচ্চা দেখার কারো নেই, এইটা আসলেই বড় সমস্যা। এটার সমাধান কি আমি জানি না, কিন্তু এক দেড় বছরের বাচ্চাকে সাথে করে অন্ধকার সিনেমা হলে আনাটা শিশুর জন্য যেমন ভীষণ আতংকজনক, বাবা-মায়ের জন্য বিব্রতকর, আর অন্যদের জন্য কিছুটা যে বিরক্তিকর হয়ে উঠে না এটা বলা যায় না। 

ঢাকা এটাক দেখছিলাম কিছু দিন আগে, আমার পাশে চার/পাঁচ বছরের ছেলে ছিলো একটা।
সিনেমাতে বোমা বিস্ফারণ এর ঘটনায় নিহত শিশু দেখে সে তার মা’কে জিজ্ঞাস করছে

-মা ওরা কি মারা গেছে? ওরা কি আর স্কুলে যাবে না? বিব্রত মা উত্তর দিলেন

-না, ওদের হাসপাতাল এ নিয়ে যাচ্ছে, সবাই ভাল হয়ে যাবে।

আমারি মন খারাপ লাগলো। শেষ কবে বাংলাদেশ-এ এই বয়সী শিশুদের উপযোগী সিনেমা হয়েছে আমি জানি না। কিন্তু আপাত বিনোদনহীন এই শহরে শিশুদের বড়দের সিনেমা হলে সিনেমা দেখতে নিয়ে যাওয়ার /নিজেরা দেখার সময় সাথে করে নিয়ে যাওয়াটা আমার কাছে খুব ভীতিকর মনে হয়।

আমি টিভি তেমন একটা দেখি না, তবে রিমোট টিপতে বসলে আজকাল 'দুরন্ত' নামের চ্যানেলে আটকে যাই। বেশিক্ষণ দেখি না তাই এদের অনুষ্ঠানের আসল মান কেমন জানি না, তবে যতটুকু দেখেছি বেশ মানসম্মত শিশুতোষ চ্যানেল-ই মনে হয়েছে। ডোরেমন, মটু-পাতলুর চেয়ে অনেক গুন ভাল মনে হয়েছে।
আমরা তো মীনার প্রজন্ম। আমাদের মীনা যতটা আত্ননির্ভরশীল আর নির্ভরযোগ্য ছিলো, তার মতো অতোটা বুদ্ধিদীপ্ত কার্টুন চরিত্র আর একটাও হয় নি। আর কোনোদিন হবে কি না সন্দেহ আছে!

নানার বাসায় গেলে আমাদের পিচ্চিগুলা--মৌপু মোবাইলে গেম বের করে দাও। নাই বললে বলে -দাও, আমরা ডাউনলোড করে নেবো প্লেস্টোর থেকে!! ইউটিউবে ছড়া-কবিতা না হলে ভাত-ই নাকি খায় না বাচ্চারা এখন।

সেটাও মন্দের ভাল, কিছু জিনিসতো শিখছে দেখতে দেখতে! কিন্তু একটা বাড়ন্ত প্রজন্ম, এদের বেড়ে উঠার সহায়ক কোনো মাধ্যম নেই এটা আসলেই ভীষন পীড়াদায়ক। এর থেকেও পীড়াদায়ক নিকট ভবিষ্যৎ এ হবার মতো কোন প্ল্যান-ও দেখি না।

অথচ রাষ্ট্র চাইলে শিশুবান্ধব বিনোদনের পরিবেশ তৈরি করা খুবই সহজ। শিশুদের মতো এত অল্পে তুষ্ট, এত সামান্যে খুশি, এত সহজে শিখতে আগ্রহী আর কেউ-ই হয় না।

আজকের সামান্য সময়োপযোগী চিন্তা গড়ে দিবে আগামীর সুন্দর ভবিষ্যৎ!

3691 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।