তনু যখন রেপড হলো, তখন আপনি বললেন, ওর চরিত্র ভালো না, ২১ টা মোবাইল সিম ছিলো মেয়েটির।
আদিবাসী মেয়েটিকে যখন ছো মেরে রাস্তা থেকে তুলে নিলো ক্ষমতাসীন দলের পঙ্গপালেরা, তখন আপনি নিজের কাজে ব্যস্ত, চাচা আপন প্রাণ বাঁচা নীতিতে বিশ্বাসী।
ছোট্ট মেয়ে পূজার যোনী ছিন্নভিন্ন করলো যে পুরুষ, তাকে বললেন সে শুধুই ধর্ষক।
হজরত আলী যখন তার ছোট্ট মেয়ে আয়েশাকে ধর্ষণের বিচার না পেয়ে মেয়েসহ রেলের নীচে আত্নহত্যা করলো, তখন সকলের বিবেক জেগে উঠেছিল। বেঁচে থাকা সমাজের প্রত্যেকের মুখে সপাটে কষে চড় মেরেছিল সে। কয়েকদিন খুব 'আহারে' হলো। কিন্তু সে তো পুঁজিবাদী সমাজের শিকার। শেষ হলো আহাজারি।
আমিন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে আর তার বন্ধু সাদমান-নাঈমের রেইপ কেসে, মেয়েগুলি বেশ্যা ছিলো। এত রাতে কোনো ভালো মেয়ে হোটেলে যায় নাকি পার্টি করতে! এইগুলা আমিন জুয়েলার্সের মালিকের ভোলাভালা ছেলেকে ফাঁদে ফেলার পায়তারা।
সুমাইয়া নামের ৭ বছরের মেয়েকে প্রতিবেশী ইফতারের লোভ দেখিয়ে রেপড করলো, মেয়ের এত লোভ কেন, খাবার খেতে যায়! হ্যাঁ পুঁজিবাদী সমাজের আরেকজন শিকার।
সংগ্রামী মেয়ে রুপা চাকরীর পরীক্ষা দিয়ে রাতে বাসে বাড়ি ফিরছিলো। তাকে একা পেয়ে বাস ড্রাইভারসহ পাঁচজনে মিলে ধর্ষণ করে ঘাড় মটকে জঙ্গলে ফেলে রাখলো। এত সাহস কেনো মেয়ের, অত রাতে বাসে উঠতে গিয়েছিল কেনো সে? এইসব মেয়েদের এমন হওয়াটা স্বাভাবিক।
মাদ্রাসার শিক্ষক ১০ বছরের মেয়েটিকে একা পেয়ে ধর্ষণ করেছে, মৌলবাদী সমস্যা।
ভিখারুন্নেসা স্কুলের শিক্ষক পরিমলের, ধর্ষক পরিচয়ের থেকে হিন্দুত্ববাদী পরিচয় বড় হয়ে দাঁড়ায়।
২২ মাসের শিশু রেইপড, আপনি একটু নড়েচড়ে দু'কলম লিখে দায়িত্ব শেষ করলেন, ব্যস।
সারা পৃথিবীর সভ্য দেশগুলোতে স্বামীর দ্বারা স্ত্রী রেইপের বিচারের শাস্তি আছে। আপনার দেশের গুটিকয়েক নারীরা এই নিয়ে একটু আধটু কথা বলা শুরু করলো, আপনি খেঁকিয়ে উঠলেন। স্বামীর দ্বারা কখনো রেপ হয় নাকি! নারীর শস্যক্ষেত্র শরীরে স্বামী যখন যেমন খুশি চাষ করবে, তার আবার আইন আদালত কেন! এইসব নারীরা ভদ্র নারীদের সংসার নষ্ট করছে।
সারা পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া নির্যাতনের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে কোটি কোটি মানুষ। নির্যাতিতরা একা হয়ে যাচ্ছে। এই নির্যাতনের জন্য কোথাও রাষ্ট্র দায়ী, কোথাও পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা, মৌলবাদী, হিন্দুত্ববাদী, নারীর পোশাক, লোভ সব দায়ী, কিন্তু কোথাও পুরুষ এবং পুরুষতন্ত্র দায়ী নয়! কারণ আপনার জেন্ডারের আধিপত্য হাজার হাজার বছর ব্যাপী যে দুরাচার তৈরি করেছে এই সমাজ ব্যবস্থায়, তা স্বীকার করে নিতে আপনার ভয় হয়, লজ্জা হয়।
আপনার এই নিজেকে স্বীকার করে নেওয়ার অক্ষমতার কারণেই ক্যান্টমেন্ট থেকে বস্তি, রাজকীয় ফ্লাট থেকে পাহাড়, মাদ্রাসা থেকে হাসপাতাল, মায়ের কোল থেকে বাসের সিট কোথাও মেয়েরা নিরাপদে নেই। এখনো এদেশে ধর্ষকের নাকি কোনো জেন্ডার হয় না!
আপনি নিরাপদেই থাকুন, শুধু প্রার্থণা করুন আপনার ঘরে যেন কোনো মেয়ে সন্তান জন্ম না নেয়।।