আসাদ নূর কি কাউকে খুন করেছিলো? না। ধর্মের নামে সহিংসতা চালিয়েছিলো? না। অমুলিম নাগরিকদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছিলো? না। কাউকে কুপিয়ে মারার হুমকি দিয়েছিলো? না। কারো কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে দুর্নীতি করেছিলো? না। রাষ্ট্রের সম্পদ লুন্ঠন করেছিলো? না। ব্যাংক ডাকাতি করেছিলো? না। এসব তো কিছুই করে নি আসাদ নুর। সেই ছেলেটা ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, অন্যায়, অবিচার ও ধর্মের সহিংসতার বিরুদ্ধে বলতো। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হলে সেই প্রাণবন্ত তরুনটি ইউটিউবের নিজের চ্যানেলে অভিরাম চিৎকার করতো। লিখতো। তবে তাকে কেনো গ্রেপ্তার করা হলো? শুধু কথা বলার অপরাধে? যে দেশে একজন মানুষের কথা বলা অধিকার থাকে না, ধর্মান্ধতা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করার অধিকার থাকে না, সেদেশে গনতন্ত্র থাকে কি করে? সেই বাংলাদেশ গণপ্রজাতন্ত্রী দেশ হয় কি করে? সেদেশ গণতান্ত্রিক হবার কোনো যোগ্যতা রাখে কি?
আসাদ নুর তার কথা বলার বাক স্বাধীনতাকে ব্যবহার করেছেন মাত্র। মোল্লাদের মতো কাকে হত্যা করার উদ্দেশে তো নিজের হাত রক্তে রাঙায় নি। বর্তমান এই আধুনিক সভ্য গণমানুষের অধিকারের যুগে একজন তরুণকে ব্লাসফেমী সম মধ্য যুগীয় বর্বর (৫৭ ধারা কালো আইন) আইনে ফাঁসিয়ে দিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে রাষ্ট্রচালকরা আমাদের কি বোঝাতে চাচ্ছেন? এটা কোনো উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র-ব্যবস্থার আইনের শাসন হতে পারে? দেশটা বাকস্বাধীনতার জন্য উপযোগী হতে পারে? দেশটার মূল সংবিধানে যখন "বাংলাদেশ একটি গণপ্রজাতন্ত্রী দেশ" হিসেবে লিপিবদ্ধ করা আছে, তখন কেনো এই প্রশ্ন তোলা যাবে না, আসাদকে গ্রেপ্তার করা এটা অন্যায়! এটা অবিচার! ব্যক্তির বাকস্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করা এটা রাষ্ট্র্বের রীতিমতো অপরাধ!
একটা গণতান্ত্রিক দেশে যেমন একজন ধর্ম বিশ্বাসীর ধর্ম পালন করার, ধর্মের জিকির করে আল্লার গুণগান করার অধিকার থাকে, ঠিক একই গনতান্ত্রিক দেশে একজন ধর্ম অবিশ্বাসীরও ধর্ম পালন না করার, ধর্মের সমালোচনা করা অধিকারও থাকে। আর আসাদ নুর তো শুধু মুখ দিয়ে কথাই বলেছে। মানে তার বাকস্বাধীনতার অধিকারটুকু ব্যবহার করেছে। কারো তো বিন্দুমাত্র শারিরীক ক্ষতি করেনি! তাহলে রাষ্ট্র কোন আইনের বলে ভিডিও ব্লগার আসাদ নুরকে অপরাধী বলে? এই বর্তমান সভ্য ও আধুনিক গণতন্ত্রের বিশ্বে একটা দেশের রাষ্ট্র চালকরা মিলে হুট করে মধ্য যুগীয় বর্বর আইন ৫৭ ধারা পাশ করে ফেললে তা আমরা মানবো কেনো? আমরা তো এই অপ্রগতিশীল বর্বর ৫৭ ধারা আইনকে স্বীকৃতি দিই নি!
শুধু নাস্তিক্যবাদ, সাম্যবাদ, মানবতাবাদ নিয়ে কথা বলায় আসাদ নুরকে গ্রেপ্তার করে রাষ্ট্র শুধু ভুলই করে নি, এটা রাষ্ট্র এই পুরো সভ্য পৃথিবীর বুকে রীতিমতো একটা অপরাধ করেছে! রাষ্ট্র একজনকে তখনই গ্রেপ্তার করতে পারে, যে ব্যক্তি দ্বারা রাষ্ট্রের অন্য মানুষগুলোর ক্ষতির সাধন হয়। রাষ্ট্রে তাকেই গ্রেপ্তার করতে পারে, যে ব্যক্তি দ্বারা রাষ্ট্রের অন্য মানুষের জান-মান ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। রাষ্ট্র তাকেই বিচারের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করতে পারে। শান্তি শৃংখলা বজায় রেখে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এটা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্বও বটে। কিন্তু রাষ্টের প্রশাসন মুক্তচিন্তক ভিডিও-ব্লগার আসাদ নুরের প্রতি কি আচরণটাই না করলো! রাষ্ট্রের প্রশাসন আসাদ নুরকে গ্রেপ্তার করে তার কাছ থেকে মরণাস্ত্র পেয়েছিলো? কিংবা তার কোমর থেকে মানুষ হত্যা করার একে ৪৭ রাইফেল পেয়েছিলো? কিংবা তার জামার ভিতর আত্নঘাতী বোমা পেয়েছিলো? জানা যায় শাহাজালাল বিমানবন্দরের পুলিশ আসাদ নুরকে গ্রেপ্তার করার সময় সন্ত্রাসী কার্যকর্মের এসব কোনো উপকরণই তার কাছ থেকে পায় নি। হয়তো আসাদের কাছে একটা মোবাইল পেয়েছিলো। যে মোবাইলের নোটবুকে আসাদ নুর তার নাস্তিক্যবাদের কথা লিখতো, ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লিখতো। যে মোবাইলের ছোট্ট কীবোর্ডে আঙ্গুলের চাপ দিয়ে দিয়ে নিজের মতো করে অন্যায়ের প্রতিবাদ লিখতো।
একজন মুক্তচিন্তক যেকোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করতেই পারে। একজন মুক্তচিন্তক যে কোনো পবিত্র গ্রন্থ কিংবা ১৪০০ বছর আগের মহান কোনো প্রফেটের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই পারে। যে প্রফেট আবার এই পৃথিবীর ১৬৭ কোটি মানুষের ধর্মীয় প্রবর্তক কিনা। যে প্রফেটের অসাম্য, অমানবিক, সহিংস, কুৎসিত নোংরা মতাদর্শ দিয়ে ১৬৭ কোটি মানুষকে আক্রান্ত করেছে কিনা। আসাদ নূর তার জায়গা থেকে সেই প্রফেটের সমালোচনা করেছে। আসাদ নুর তার জায়গা থেকেই ১৪০০ বছর আগের ধর্মীয় রীতি এই সময়ের জন্য যে অনুপোযোগী তা নির্দ্বিধায় বলেছে। এটা তার বাক-স্বাধীনতা। এটা তার গণতান্ত্রিক পুর্ণ অধিকার। কিন্তু রাষ্ট্র ১৪০০ বছর আগের পুরোনো জীর্ণ পঁচা গলা হাড়কে প্রাধান্য দিয়ে কোনো সভ্যতার আলোকে আসাদ নূরকে গ্রেপ্তার করেছে? এটা তো রাষ্ট্রচালক, রাষ্ট্রের প্রশাসন রীতিমতো অপরাধ করেছে! হ্যাঁ হ্যাঁ অপরাধ করেছে! হে রাষ্ট্র, হে রাষ্ট্রের মাননীয় আদালত, আপনাদের বলছি। আসাদকে ভালোই ভালোই মুক্তি দিয়ে দেন। এটা রাষ্ট্রের জন্যও ভালো, সভ্যতার জন্যও ভালো।
--- মাননীয় আদালত, আমি কোনো খুনি, দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোরের মুক্তি চাইতে আসি নি, আমি এসেছি একজন সভ্য চেতনার মুক্তিচিন্তার মানুষের মুক্তি চাইতে। যে তরুণটি কারো কোনো ক্ষতি না করে নিজের কথাই বলতো। যে তরুণটি নিজের মতাদর্শের কথাই বলতো। শুধুমাত্র আসাদকে কথা বলার অপরাধে জেলখানার গরাদে আটকে রাখা, এটা অন্যায়! এটা অবিচার! এই দাবী আমার নয়, এই দাবী আধুনিক বিশ্ব সভ্যতার!