কোথাও কোন দুর্ঘটনা ঘটলে এবং তা যদি শিশুদের বা আমার সন্তানের বয়সী কারো সাথে ঘটে উদভ্রান্ত লাগে। খুব মনোঃকষ্টে ভুগি। ঠিক হতে সময় লাগে।
সবাই উপদেশ দেয় ফেসবুক ব্যবহার না করতে। ঘটনার এত ভেতরে না ঢুকতে। খবরটবরগুলো না দেখতে এবং না পড়তে। আমি উপদেশ মানতে পারি না। খুঁটে খুঁটে পড়ি বরং। আরো মুষড়ে পড়ি।
তাসফিয়াকে খুন করা হয়েছে নিঃসন্দেহে। কারণ আত্মহত্যা করতে হলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে অতদূরে পতেঙ্গা বিচে গিয়ে পাথরে মুখ থুবড়ে পড়তে হয় না। নিজেই নিজের একটি চোখ খুবলে বের করে নিতে হয় না। নিজের গালে, শরীরে আঁচড়ে জখম করতে হয় না। এইগুলো পাগলেও বুঝবে। আশার কথা, বাংলাদেশের পুলিশ পাগল না। কিন্তু নিরাশাও আছে .....
বাংলাদেশ আইন শৃঙ্খলা, পুলিশের কথা বরং থাক। বাংলাদেশের অভিভাবকদের কথাই বলি। অভিভাবকরা নতুন করে ভাবতে শুরু করুন সময়ের পরিবর্তিত হাওয়ার এই ঝড় ঝাপটা থেকে সন্তানকে কী করে রক্ষা করবেন।
তাসফিয়ার মতো এইভাবে খুন হয়ে যাওয়া আর আদনানের মতো খুনি হওয়া থেকে সন্তানকে কী করে রক্ষা করবেন।
শুধু মেয়ে নয় ছেলে সন্তানটিকেও বাঁচাতে হবে। যে ঝড় তাসফিয়ার বাবামায়ের বুকে সেই ঝড় তো আদনানের বাবামাকেও লণ্ডভণ্ড করে দিচ্ছে।
কন্যাসন্তানকে শুধু ধর্ষণ, খুন হওয়া থেকে রক্ষা করতে হবে তা তো নয়। ছেলেটিকেও তো ধর্ষক বা খুনি হওয়া থেকে বাঁচাতে হবে।
সবাই বলছেন আপনার সন্তানের সাথে মিশুন। বন্ধু হোন। কোয়ালিটি টাইম কাটান। খোঁজ রাখুন কার সাথে মিশছে, কোথায় যাচ্ছে।
আমি মনে করি, এসব মেনে চলেন এরকম সচেতন অভিভাবকই বেশি।
অসচেতন বা অতি-আধুনিক হবার চেষ্টায় রত কিছু অভিভাবক অবশ্যই আছেন। তারা ক্লাশ এইট নাইনে পড়া কন্যাটি সময় অসময়ে বন্ধুর বাড়ি যেতে চাইলে স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হবে বলে বাধা দেন না। যখন তখন বন্ধুদের নিয়ে হ্যাঙআউট নামক ঘুরাঘুরি করতে চাইলে এটাকেই ট্রেন্ড ভেবে অমত করতে পারেন না। এমনকি স্কুল কলেজে পড়া ছেলেটি বন্ধুর বাড়ি রাতে ঘনঘন থেকে যেতে চাইলে এটাও খুব একটা আমলে নেন না।
বলি কী, বাধা দিন অমত করুন আমলে নিন। ওইটুকু বয়সে অত স্বাধীনতার দরকারই বা কী? স্বাধীনতা তো ছেলের হাতের মোয়া নয়। ওটা শক্ত জিনিস। যখন প্রাপ্তবয়ষ্ক হবে তখন নিজেই বুঝবে। তার আগ পর্যন্ত আপনি হাত ধরে চলতে শেখান।
নিজের সন্তানকে চোখে চোখে রাখবেন তো বটেই। অন্যের সন্তানের কোনো অস্বাভাবিক আচরণ চোখে পড়লে সেই অভিভাবককে জানান। তাকে আন্তরিকভাবে সাহায্য করুন। হয়তো সেই অভিভাবক ও তার সাময়িক বিপথগামী সন্তানটিও বেঁচে যাবে আপনার একটুখানি সাহায্যের জন্য। তবে জানি, এপথে বিস্তর বাধা আছে। আর আমাদের তো ওইটুকু বাধা জয় করতেই হবে।
সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ওরা অনেকটাই আমাদের চেয়ে এগিয়ে গেছে। আমাদের ফাঁকি দিতেও শিখেছে। চোখ এড়িয়ে তাই তো কেউ কেউ মাদকাসক্ত, পর্ণ আসক্ত হয়। নানা অপরাধে জড়ায় ঘনঘন বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড পাল্টায়।
আমাদের চোখের সামনেই সব বদলে যাচ্ছে দ্রুত। তবুও কিছু জিনিস কখনো বদলায় না। বাবামায়ের দায়িত্ব, তাদের শাসনবারণ এগুলো আমাদের দেশ থেকে অতো সহজেই উঠে যাবে না। দেশটা ইউরোপ আমেরিকার মতো নিরাপদও তো নয় সকলের জন্য।
রাষ্ট্র শুধু আপনার বেডরুম কেন, স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় এমন কী রাস্তাতেও সরকার আপনার এবং আপনার সন্তানের দ্বায়িত্ব নেবে না। তাই যতটুকু পারেন আপনিই নিন।
সতর্ক হয়ে সামলে চলুন।