অন্টারিওতে বলতে গেলে মধ্যপ্রাচ্যের লোক এসে ভরে গিয়েছে। এখন বাহিরে যেখানে সেখানে আরবী ভাষার দাপট লক্ষণীয়। কিন্তু সমস্যা সেখানে নয়। সমস্যা হলো অন্যখানে; মধ্যপ্রাচ্যের পুরুষের পুরুষালী মানসিকতার। এরা কানাডাকে মনে করে ফ্রী সেক্সের দেশ। ইচ্ছে করলেই যখন তখন তাদের মনমতো নারী পেয়ে যাবে। তাই তাদের চাহনী, আচরণ, কথাবার্তা সেই ইঙ্গিতটাই বহন করে অন্য এক নারীর প্রতি। জোর গলায় বলতে পারি, মধ্যপ্রাচ্যের পুরুষদের মধ্যে নারীর প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধাবোধ নেই। এই বিষয়টা হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছি।
আমার কাজের জায়গায় দুটো মধ্যপ্রাচ্যের লোককে নিয়োগ দেওয়া হয়। আমাদের আছে চারজন রিসেপ্সনিস্ট। চারজনই মেয়ে, তাঁরা যেমন সুন্দরী, তেমনি বিনয়ী, ভদ্র এবং মার্জিত। এরা রিয়েল কানাডিয়ান। মাধ্যপ্রাচ্যের এমন আচরণ তারা বুঝতে পারে না। যখন তখন চোখের চাহনী উদ্ভট আবেদনময়ী করে তোলে, যা দেখে মেয়ারা ভিরমি খায়। কখনো কখনো গা ঘেষে কাছে গিয়ে দাঁড়াবে, শরীরের ছোঁয়া নিতে চাইবে। তার উপর বাইরে নিয়ে যাওয়ার বিভিন্ন অফার দেওয়া, ফোন নাম্বার চেয়ে রাতে বিরাতে ম্যাসেজ পাঠিয়ে সেক্সচুয়াল অফার দেওয়া। এমন কি আমিও তার থেকে মুক্ত থাকিনি। তাই মেজাজটা সপ্তম আকাশে ওঠে যায়। এসব যে কানাডিয়ান পুরুষরা করে না তা নয়। করে, তবে তার মধ্যেও শালীনতা আছে। উপর্যুপুরি বিরক্তির উদ্রেক থাকে না।
শেষ পর্যন্ত সহ্যের বাঁধ যখন ভেঙ্গে গেলো, তখন দুটোকে ডেকে নিয়ে বললাম, "এটা কাজের জায়গা। ফান করার জায়গা নয়। ফান করার জন্য অনেক জায়গা আছে, কাজের বাহিরে সেসবের সন্ধান করো। এখানে আমরা সবাই কাজ করি জীবন জীবিকার জন্য। আমাদের সবার উচিত প্রত্যেকের প্রতি প্রত্যেকের শ্রদ্ধাবোধ দেখানো। আমি নারী আর তুমি পুরুষ বলে মনে করো না এখানে এর কোনো পার্থক্য আছে! এটা কানাডা, নারীপুরুষ উভয়ের সম অধিকারের দেশ। এখানে সবাই মানুষ, নারী বলে ভিন্ন প্রজাতি ভাবা হয় না। কিন্তু তোমাদের দুজনের আচরণে এই ওয়ার্কপ্লেসে আমরা নারীরা অস্বস্তিতে ভুগছি। জাস্ট বিহেভ ইয়োরসেলফ। আদারওয়াইজ আই উইল কমপ্লেইন ইন হেড অফিস। সেক্সচুয়াল হেরেসমেন্টের আইনের আওতায় এনে তোমাদের শাস্তির ব্যবস্থা করবো।" আমার এমন কথায় দুটোই ভড়কে যায়। প্রথমে ভাবটা দেখায় তারা কিছুই করেনি, এমনকি আমার কোনো কথাও বুঝেনি। তারপর সব ভেঙ্গে যখন চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিলাম তখন দু্টোরই আক্কেল গুড়ুম। চোখ বড়বড় করে কপালে তুলে একটুখানি যেনো কেঁপে ওঠে।
বললাম দুজন পুরুষকে অথচ আঁতে লাগলো সবকটা পুরুষের।
জানেন তারপর কি হলো! আরো পাঁচটা পুরুষকর্মীসহ সবকটা আমাদের নারীদের সাথে স্বাভাবিক কথা, এমন কি সকালের গুড মর্নিংটাও দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তবে আমরা আমাদের প্রফেশনালিজম বজায় ব্রেখেই তাদের সাথে স্বাভাবিক আচরণ করছি। আর রিসেপ্সনিস্ট মেয়েরাও আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসে।
তবে অবাক করার বিষয় হলো, বললাম দুজন পুরুষকে অথচ আঁতে লাগলো সবকটা পুরুষের। কী আশ্চর্য পুরুষের মেলবন্ধন ! সেক্সের ব্যাপারে এরা সবাই যেনো সবার সওয়ারী।