অঞ্জন রায়

সংবাদকর্মী

অঞ্জন রায় এর কবিতা-মানুষ সিরিজ- দ্বিতীয় পর্ব

মানুষ- ১০

চিন্তা মরে না-এতো দূর্বল না বিশ্বাসের ভিত
প্রতিটি মৃত্যুতে জন্ম নেয় হাজার অভিজিৎ।
যে যতোই বিস্মৃত হোক, মুক্তচিন্তা কি হারায়?
চিন্তার আরেক নামই জেনো অভিজিৎ রায়।

#২৬ ফেব্রুয়ারি ১৭, ঢাকা।

 

মানুষ- ১১

(কর্পোরেট মিডিয়ার স্মৃতি বড় কম-প্রতিদিনই নতুন ইভেন্ট, সেখানে লাশের নাম থাকে না, স্মৃতি থাকে না- যেমন আজ নাম ছিলো না রাজীব হায়দারের।)

নাম নাই -আছে দগদগে ক্ষতের স্মৃতি। আসহিষ্ণুতায় খুন
এ মাটিতে নতুন নয়- যেমন নতুন নয় মানুষের প্রতিরোধ,
মানুষই ইতিহাস গড়ে-সেই ইতিহাস আলো আর নির্মাণের।
সেইখানে যতই রাবার ঘষতে থাকো। ভোলাতে কর প্রাণান্ত-
ইতিহাস রাজীব হায়দারের নাম জানে। চিন্তা মরে না কখনো
তাই মরে না কখনো রাজীব-জারি প্রতিরোধ এখনো সজীব।

মেরেছে সবখানে তারাই-যারা আখলাক বা কুলবর্গীরখুনী।
মেরেছে- ফের মারবে আরো, খুন ছাড়া কিছুই জানে না তারা?
খুনে কি কখনো পরাজিত হয় চিন্তারা? হয় নি, হবেওনা কখনো,
তবু চলে চাপাতির উৎসব-ফলাফলে ঢাকার রাস্তা থেকে রক্ত
ছোটে মালদ্বীপে-সেখানেও লাশ পরে, কমে না মগজের বারুদ।

খুব শান্ত ভদ্রলোক, এসব সকল থেকে আছেন অনেক তফাতে
আপনি কতটা নিশ্চিত-বোমা গুলি চাপাতির আঘাতের থেকে?

না। কেউ নিরাপদ নন-যেমন অনিরাপদ এই লাল সবুজ দেশ,
তেমনই আপনিও জনাব, যতোই মাথা লুকোন হেলমেট বা গর্তে।
প্রতিবাদহীন হলে রক্ষা মেলেকি অন্ধকার চাপাতির কোপ থেকে?
এখানেও বাঁচে নি নিরীহ পুরোহিত যাজক পীর, রক্ষা পায় নি সেই
বিদেশি- স্বদেশী ভদ্রজন। রক্ষা পায় নি দফায় দফায় সংবিধান-

সেখানেও চাপাতির আঘাত চলেছে, বুড়িগঙা পদ্মা যমুনার জল
মুক্তিযুদ্ধের শেষে ফের লাল হয়ে গিয়েছে-আমার সংবিধান থেকে
ঝড়ে পড়া রক্তে, স্বদেশ ডানে ঘোরাতে ঘাতকদের রক্ষার হীনতায়।

#ঢাকা ১৫ ফেব্রুয়ারি।

 

মানুষ- ১২

ইতিহাস কানে কানে বলে- প্রচীন সক্রেটিসই
শেষ সক্রেটিস নন। একজনকে হত্যা করা হলে
সেই রক্ত থেকে জন্ম হয় নতুন সক্রেটিসের
প্রতি বসন্তে তারা বাতাসে ছড়িয়ে দেয়
আরো নতুন সক্রেটিসের বীজ-
নতুন বৃক্ষ মাথা তোলে
জানান দিয়ে বলে-
মুক্তচিন্তার মৃত্যু নাই, চিন্তারা মরে না কখনও।

*অমর একুশের বইমেলার সামনে বাংলাদেশের মুক্তচিন্তার লেখক অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ ২০০৪ সালের আজকের দিনে জঙ্গীদের চাপাতির আঘাতে রক্তাক্ত হয়েছিলেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি।

 

মানুষ- ১৩

বলেছিলে যুদ্ধশেষ-চারপাশে শুধু ফসলের মাঠ
শোনাবে রবীন্দ্রনাথ, গোর্কী আর দান্তের অনুবাদ,
বলেছিলে এবারে যুদ্ধের বন্দুক আস্তাকুঁড়ে যাবে-
যে কোনও অপমৃত্যু হবে অতীত ইতিহাস।

অথচ এখনও লাশের খবর পাই প্রতিদিন,
মাইকেলের ভাস্কর্যে চাপ চাপ রক্ত লেগে থাকে-
যুদ্ধের অস্ত্রগুলো বড় প্রাসঙ্গিক প্রতিটি শহরে-
আরাকানের আগুনে দগ্ধ হন তথাগত,
উঠানে আধাপোড়া ভাতের হাড়ির পাশে
এখনো কাঁদছে সভ্যতা নামের আধাবুড়ো মানুষ।

আমরা পরস্পর তাকিয়ে আছি প্রাচীন যুদ্ধক্ষেত্রে
রক্তাক্ত স্বজনের শবদেহ প্রতিদিন বাড়তেই থাকে
সেই রক্তপাত শুষে নেয় আধাপোড়া কালো মাটি-
কমলা লেবুর দোকানের পাশেই বিষ্ফোরণের দাগ,
মৃত্যুই এখন সহজলভ্য হয়- মগজ চিন্তাশীল হলে

ভয় না, শেষরাতে ঘুমাতে যাই স্বপ্ন দেখবো বলে-

গ্রহটার কোথাও কি সূর্য উঠছে?
কোথাও নিশ্চয়ই আছে আলো?

 

মানুষ-১৮

কখনো সমাজ কখনো ধর্ম দিয়ে তোমাকেই খুন করেছে
কখনও তোমাকে পুড়িয়ে মেরেছে চার্চ-কখনও সতীদাহ
শুধু তোমাকে বাঁধতে কতশত বিধানের শেকল গড়েছে
পাথর-আগুনে রক্তাক্ত আর দগ্ধ হতে হতে তুমি বাঁচো
অথচ পৃথিবীর আদি ইতিহাস তোমার হাত ধরেই গড়া
প্রথম হলকর্ষ কার হাতে-ইতিহাস স্বাক্ষী বলে সে তুমিই
সময় এগোয় বাড়ে অন্ধকার বিশ্বাসের হাত পা বহুগুন
ভুল সময়ে বসতি দেখি-সমাজের উত্থিত হয় পুরুষদন্ড

অথচ রাষ্ট্র সমাজ সবকিছু তোমার গর্ভে ছিলো দশমাস
যে পথে মাটি ছোঁয়া-সেই পথেই রক্তপাত, এ শুধু পুরুষ
পারে- তাহলে পুরুষদন্ড হাতে পথে হাঁটো জ্ঞাত ইডিপাস

1654 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।