তাড়াইলের ভাস্কর্যে নারী মুক্তিযোদ্ধার প্রতিকৃতি বিকৃত করার প্রতিবাদের মাত্র সাতদিনের মাথায় কতৃপক্ষ সিদ্ধান্ত বদল করেছেন। ভাস্কর্যে নারী থাকছেন। তবে উত্তর থেকে দক্ষিণে যাবেন নারী। একই নকশায় দুটি ভাস্কর্য নির্মাণ হয়েছিলো কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ আর তাড়াইল উপজেলায়। করিমগঞ্জ উপজেলায় গৌরবে মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়ে আছে দু’জন পুরুষ ও একজন নারী মুক্তিযোদ্ধা। সমস্যা হলো তাড়াইলে। স্থানীয় ধর্মীয় নেতারা দাবি করেছিলেন নারী থাকবেন না। কারণ সামনেই মাদ্রাসা, মসজিদ। মূর্তি থাকলে অজু ভেঙ্গে যায়। তাই শিল্পী প্রশাসনের মৌখিক চাপে নারীকে বদলেও ফেলেছিলেন। শাড়ি, ব্লাউজ, স্তনের আদল, চুল ছেটে করেছিলেন পুরুষ। স্থানীয় সাংবাদিক বিষয়টি সংবাদে আনেন। প্রতিবাদে নেমেছিলাম মহিলা পরিষদ, কিশোরগঞ্জ। সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছিলো। দেশের লেখক, বুদ্ধিজীবী, প্রগতিশীল মানুষের প্রতিবাদ শুরু হয়। আজ প্রশাসন মেনে নিয়েছেন। নারী থাকছেন। মূল নকশার মতোই থাকছেন, পতাকা হাতে।
প্রশ্নটা হলো, নারীকে উত্তর মূখী থেকে দক্ষিন মুখী করলে কি সমস্যা মিটলো? যারা বলেছিলেন নারীকে দেখলে অজু ভাঙ্গে, দেখতে খারাপ লাগে, এবং না থাকার দাবী তুলেছিলেন তাদের কি হবে? তাদের চেতনা কি পরিবর্তন হবে? সম্মূখ না দেখে পশ্চাৎ দেখলে সমস্যা নেই?
সমস্যা যাবে না। কারণ তারা কখনো গায় না যে,"মা তোর বদনখানি মলিন হলে আমি নয়ন জলে ভাসি।" তারা ভাসে না। মায়ের মুখ, বদন, চুল পরিবর্তনে তারা বেদনা অনূভব করে না। তারা নারীকে দেখে যৌনবস্তু রূপে। তারা নারীর উদ্দত দাড়িঁয়ে থাকায় নিজের জাহান্নাম দেখে, তারা নারীর স্তনে যৌনতা দেখে। পতাকা হাতে দাড়িঁয়ে থাকার বাস্তবতা তাদের মগজে যায় না। কারণ তারা নারীর যুদ্ধকে স্বীকার করে না, নারীর অবদানকে মানে না, নারীর বিজয়কে সম্মান করে না। আজ ভাস্কর্যে নারী থাকছেন এটা আমাদের বিজয়। ভাস্কর্যে নারীর দিক পরিবর্তন তাদের বিজয়। আর আমি বলি স্বাধীনতার মুক্তি মেলেনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মুক্তি পায়নি। অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের চেতনা জাগ্রত হয়নি।
আসলে এই জোড়াতালির চেতনা কদ্দিন? তাদের চেতনায় আঘাত না করে মেনে নেয়া কদ্দিন? তারা কারা? তাদের চিনতে এখনো কেনো দেরী?
তারাই দাবি তুলে, যারা এই রাষ্ট্রটি চায় নি। তারা আজো এই পতাকা মানে না। এই রাষ্ট্রের গৌরবকে স্বীকৃতি দেয় না। তাই নানা অজুহাতে বার বার মুক্তিযুদ্ধ কে, তার স্মারককে বিতর্কিত করে। তাদের চেনাটা যেমন জরুরি, তেমনি তাদের এসব অযৌক্তিক দাবীকে ঘৃনাভরে প্রত্যাখ্যানও জরুরি।
আরেকটি কথা না বলে পারছি না, এই আন্দোলনে শামিল হতে অনেকের দারস্থ হয়েছিলাম। তারা কথা দিয়েও আসেনি। অনেকে ফোন বন্ধ করে দিয়েছিলেন। অনেকে বলেছিলেন, তোমরা বাড়াবাড়ি করছো। তাদের সবিনয়ে বলতে চাই, এটি নারীর আন্দোলন নয়। এটি আপনার আমার সকলের আন্দোলন। আপনার আমার পূর্বপুরুষের রক্তের শপথ। এটির সাথে থাকা উচিত সকলের। কারণ মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে ঘৃনার চোখে দেখে তারা আমাদের শত্রু।
সংহতি প্রকাশ করেছিলেন, গণতন্ত্রী পার্টি, ছাত্রলীগ, মানবাধিকার আইনজীবী পরিষদ ও নারীপক্ষ। কিশোরগঞ্জের সংবাদকর্মী বন্ধুরা। সবাইকে অভিনন্দন। প্রগতিশীল সংগঠন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের দাবী আবারো প্রমাণ করলো, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অসাম্প্রদায়িক চেতনা।