বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রাণপুরুষ অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার আগামী জুন ২৯, ৩০ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সাহিত্য উৎসবের উদ্বোধন করতে আজ বিকেলে নিউইয়র্ক এসেছেন। কিছুক্ষন ঘুমিয়ে ক্লান্তি কাটিয়ে এখন তিনি গল্পের মুডে রয়েছেন।
কিছুক্ষণ আগে কথা হলো। রসিকতায় স্যারের জুড়ি মেলা ভার একথা আর কে না জানে! আজ বললেন স্যারকে এত যে ভালোবাসি সেই ভালোবাসা আমি নাকি পায়ে দলে দেশ ছেড়ে চলে এসেছি! হাসতে হাসতে স্যারকে মনে করিয়ে দিলাম, 'আমি তো আসতাম না স্যার, আসার আগে আপনাকে গিয়ে বলেছিলাম, স্যার আমাকে একটা চাকরি দেন করি। মাসে বিশ হাজার টাকা দিলেই আমার চলে যাবে, কিন্তু আপনি বললেন -চাকরি তো আছে, কর! বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে চাকরি আছে কিন্তু বেতন নাই!
-তো কেমন করে হবে স্যার! সেই দু:খে দেশ ছাড়লাম।
দেশ থেকে যখন আমার আপনজনেরা আসেন আনন্দে চোখ ভরে ওঠে জলে। একবার শাহাদত ভাই (বিচিত্রার শাহাদত চৌধুরী) নিউইয়র্ক থেকে দেশে ফিরে যাবার আগে আমার বাড়ির মেপল গাছের নিচে দাঁড়িয়ে কেঁদেছিলেন। সন্ধ্যার আলোছায়া থম থম করছিলো তাঁর মুখে। বলেছিলেন "ওতো আমার বোন, আমাদের প্রীতিলতা! আমার বোনটাকে যদি আজ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারতাম!"
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় একবার হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে গান গেয়ে শুনিয়েছিলেন '…..হিথায় তোকে মানাইছে না গো ইক্কেবারে মানাইছে না গো।'
একদিন যখন চোখের জল মুছে দেশ ছেড়ে এসেছিলাম, ওঁরা কিন্তু কেউ জানে নি কোন বেদনায় দেশান্তরী হলাম। আর এতদিন পরে দেশের এই যে তরুণ ছেলে মেয়েগুলো লিখে লিখে, লিখে লিখে সারা দেশে একটা সচেতনতার ধান বুনে দিয়েছিলো! যাদের নিরলস চেষ্টায় দেশ জেগে উঠেছিলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়! ক্ষমতায় ফিরে এসেছিলো বঙ্গবন্ধু কন্যা! সেই ছেলেগুলো জবাই হয়ে গেলো! সেই ছেলে মেয়েগুলো দেশান্তরী হয়ে গেলো! সেই ছেলে মেয়েরা মৃত্যু পরোয়ানার নিদারুণ যন্ত্রণা মাথায় নিয়ে হাঁটে! আর আমাদের সকল জ্ঞানী, গুণী, লেখক, কবি, সাহিত্যিক সব চুপ। একে একে ঝরে যাচ্ছে ওদের ভেতর থেকেও কেউ কেউ তবু ওরা চুপ। ওদের মুখে কুলুপ এটেছে কে! ওদের পদক। ওদের লোভ। লালসা। ওরা মৃত। আমি ওদের ঘৃণা করি। শ্রেফ ঘৃনা!
"এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নয়
যে শিক্ষক বুদ্ধিজীবী কবি ও কেরাণী
প্রকাশ্য পথে এই হত্যার প্রতিশোধ চায় না
আমি তাকে ঘৃণা করি.."
আজ প্রণমি তোমারে নবারুণ ভট্টাচার্য। শুভ জন্মদিন!