লিলিথ অন্তরা

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী। প্রগতিশীল আন্দোলন সমূহের সক্রিয় কর্মী। নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক মানবিক সমাজ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছি। বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন এর কেন্দ্রীয় সদস্য।

মি টু : আমি ও আমরা

ভোগবাদী, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় আমি, আমরা যে ভয়াবহ যৌন নির্যাতনের মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করি, তা কি আসলেই যাপন করা হয়ে ওঠে? রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মস্থল, কিংবা নিজের বাড়ি, কোথায় নেই নির্যাতনের ছাপ? 

যখন ছোট ছিলাম, একবার গ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলাম। ক্লাস থ্রিতে পড়ি। পাশের বাসার এক আপু নাম রুনু, সে তখন ক্লাশ নাইনে পড়ে, কোনো এক পশ্নের উত্তরে, সে বলেছিলো পৃথিবীতে হিংস্র পুরুষের চেয়ে ভয়ংকর কোনো জন্তু নাই। আমি ঠিক তখন বুঝি নাই, সে কি মীন করেছিলো! কিন্তু অনেক পরে ঠিকই বুঝেছি, সেদিন তিনি ধর্ষকদের কথাই  বলেছিলেন।

 

ক্লাশ ফোর এ পড়ি, নানুদের পারিবারিক মসজিদ। তো, আমার নানা ইত্তিকাফে বসতেন। তাকে মসজিদে ইফতারি দিয়ে আসতে হতো। যেহেতু কোনো মেয়ে মসজিদের ভেতর ঢুকতে পারে না, তাই সিঁড়ি পর্যন্ত গেলেই, ভেতর থেকে কেউ না কেউ নিয়ে যেতো। আমি আর আরেক বান্ধবী, দুইজন মিলে গেলাম ইফতারি দিতে। নতুন এক মুয়াজ্জিন নিতে আসলো। সে ইফতারির প্লেট নেয়ার ছলে, আমার হাত ধরছিলো, জীবনে প্রথমবার গুড টাচ, আর ব্যড টাচ এর পার্থক্য বুঝলাম সেদিন। এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিয়ে, বান্ধবীসহ বাড়ী আসলাম। পরের বার নানুবাড়ি গিয়ে শুনতে পেলাম, সেই লোক আরবী পড়ানোর নাম করে শিশুদের হ্যারেসম্যন্টের দায়ে জুতাপেটা হয়ে এলাকা ছেড়েছে। 

 

দারুচিনি দ্বীপ ছবির শুভ্র'র মতো বড়ো হওয়া ছিলো আমার। স্বাভাবিকভাবেই এস এস সি'র পর কিছুটা স্বাধীন। একা একা প্রথম শপিং এ বের হলাম। প্রথমদিন ই হাঁটার সময় অনুভব করলাম, চারপাশ থেকে অনেক ধাক্কাধাক্কি। কিছুক্ষণ পর বুঝতে বাকি রইলো না, যে ওই ধাক্কাগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে দেয়া হচ্ছে। পেছন ফিরে গাল বরাবর মধ্যবয়সী ওই লোকের গালে কষে চড় মারলাম। ওইটাই আমার জীবনে প্রথম প্রতিবাদ।

আমার ধারণা এমন কোন নারী নেই, যিনি রাস্তাঘাটে, কোনো না কোনোভাবে হেনস্থার শিকার হন নি। এমনকি আজো যখন রাস্তায় কোনো বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করি, তখন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরতে হয়। আর পরিবহনে ভোগান্তি আর নাই ই বা বললাম! আর এখানে তো ৬ মাসের শিশু থেকে শুরু করে ৮০ বছরের বৃদ্ধা ও ধর্ষণের শিকার হন! তবু বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে! শিশু থেকে শুরু করে  শিক্ষার্থী, নারী শ্রমিক, কর্মজীবী নারী, গৃহকর্মী, শিল্পী-অভিনেত্রী, এমনকি আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর নারী সবাই কোনো না কোনো ভাবে যৌন নির্যাতনের শিকার। 

আমি মনে করি, এই কাহিনী আরো দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে, যদি না এই পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থার পচা-গলা সমাজকে  আমরা পাল্টাতে না পারি। আর এই পরিবর্তনে নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রতিবাদ প্রতিরোধ জরুরি।

 

 

1899 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।