আমার এ্যাবাউডে দেয়া আছে আমি নারী নাকি পুরুষ। এর মধ্যে নতুন নতুন বন্ধু যারা এ্যাড হচ্ছেন তারা অনেকেই মনে করেন এই "অপ্রিয় কথা"র আড়ালের মানুষটি বোধহয় সুন্দরী, সুশ্রী, ব্যক্তিত্ব সম্পুর্ণা একজন মেয়ে মানুষ। মাঝে মাঝে হাসি পায় নতুন নতুন কিছু মেয়ে বন্ধু যখন আমার বন্ধু লিস্টে যুক্ত হয়, তখন মেসেজে প্রথমে সম্বোধন করে বসে দিদি কিংবা আপু বলে। এই সম্বোধন আমাকে অনুপ্রেরণা দেয়। কারণ আমার প্রোফাইলে male লেখা থাকার পরও তারা বিশ্বাস করতে চায় না আমার লিঙ্গটি পুরুষ লিঙ্গ। এতে আমি কিছু মনে করিনা। উলটো এটাকে আমি আমার নারীবাদের লেখনীর শক্তিশালী একটি দিক মনে করি। না হলে male লেখা থাকার পরও তারা কেনো আমাকে মেয়ে বলে ভাববে?
অনেক মেয়ে বিশ্বাসই করতে চায় না যে আমি একজন পুরুষ। সবচেয়ে আশ্চর্য হই তখনই, যখন কোনো ছেলে আমাকে মেয়ে মনে করে ইনিয়ে বিনিয়ে মেসেজে ভাব জমাতে আসে। আমি তাদের সরাসরি বলি না, আপনি কি গে? আমি সম্ভবত নাস্তিক্যবাদ ও মানববাদের চেয়ে নারীবাদী লেখা বেশি লিখেছি। বোধহয় আমার বন্ধুরা বিভিন্ন সময়ের কিছু নারীবাদী লেখা দেখে তারা আমাকে নারী ভাবতে শুরু করেছে। কিছু কিছু লেখা আগেও এই আইডিতে দিয়েছিলাম। এখানে নারীবাদ নিয়ে আমার আগের টুকরো টুকরো অল্প কিছু লেখা নিচে দিলাম----ইচ্ছে হলে পড়তে পারেন।
এক.
-আরে আমার মেয়ের জামাই ব্যংকে চাকরী করে। মাসে হাজার চল্লিশেক মাইনে পায়। আমার মেয়েকে কোনো কাজ করতে হয় না। ঘরে দুটো কাজের মেয়ে রেখেছে। অনেক সুখে থাকে মেয়ে।
-আমার মেয়ের জামাই ব্যবসায়ী। অনেক টাকা ওদের। আমার মেয়েকে ওরা রাজরানী বানিয়ে রেখেছে। একেক ঈদে লাখ টাকার শাড়ি-থ্রিপিচ কিনে দেয়।
-ঐ ছেলেটা দেখ দেখ কি কর্মঠ। মেশিনের মতো টাকা কামায়। আমার মেয়ের জন্য যদি এরকম একটা পাত্র পেতাম, তাহলে মেয়েটা চিরজীবন সুখে থাকতো।
-আমার (খুব গর্বের সাথে) মেয়ে এখন ইংলিশ অর্নাস পড়ে। সে তো বলেই দিয়েছে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার ছাড়া বিয়ে করবে না। মেয়ে আমার নিজেরটা ভালো বুঝে।
-আমার মেয়ের চাই সরকারী চাকরীজীবি পাত্র। যাতে ভবিষ্যতের চিন্তা করতে না হয়। মেয়ে আমার চালাক! এগুলো হলো আমাদের বাঙালি সমাজের অধিকাংশ অভিভাবকদের কথা। বিয়ের পর প্রতিটি বাবা-মা চায় তাদের মেয়ে যেন সুখে থাকে। জামাই যেন মেয়েকে পুতুলের মতো সাজিয়ে ঘরে লক্ষী বউ করে রাখে। যেন মেয়েকে জীবনে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে না হয়। -যেসব মেয়েরা বিবাহের পর স্বামীর কাছে এই সুখি জীবন পেতে চায়। তারা শুধু নিষ্কর্মাই নয়, তারা একেকটা মুর্খ অপদার্থ জীব! যৌনদাসী হয়ে থাকতে ও তাদের আপত্তি নেই!
দুই.
দীর্ঘদিন প্রেম করার পর একটা ছেলে তার প্রেমিকার সাথে যখন সহবাস করতে চায়, তখন সহবাসে মেয়েটির তেমন সম্মতি থাকে না। যদিও মেয়েটির তার প্রেমিকার সাথে সহবাস করার ইচ্ছে থাকলেও করার সাহস পায় না। এই ক্ষেত্রে মেয়েটা ছেলেটিকে বলে, -আগে বিয়ে করো, তারপর যেমন ইচ্ছে তেমন করো। তার মানে ছেলেটি হলো মেয়েটির কাছে ভরসাস্থল। বলতে গেলে মেয়েটি একটি আশ্রিতা। কারণ মেয়েটা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী নয়। তাই বিয়ে নামক একটা চুক্তি করে ছেলেটির কাছে আজীবন যৌনদাসী হয়ে থাকতেও মেয়েটির আপত্তি নেই। মেয়েটির মাথায় একথা কখনো আসে না যে, ছেলেটি যদি বিয়ের আগের যৌনমিলন করতে চায়, তো আমি কেনো পারবো না? আমাকে কেনো বিবাহে আবদ্ধ হবার পর যৌনাকাঙ্খা মিঠাতে হবে? আমারো ও ইচ্ছা জাগে... হ্যা মেয়েরা এখানে দুর্বল। মেয়েদের স্বাধীনতা অর্জন করতে হলে প্রথমে তাদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে। সেই যেন তার প্রিয়জনের উপর আর্থিকভাবে নির্ভরশীল না হয়। নারী-পুরুষের সমতা আনতে গেলে একটা নারীকে পুরুষের সমান পারদর্শী হতে হবে। শুধু বরের (আমার ভাষায় যৌনসঙ্গী) উপর হা করে চেয়ে থাকলে কেউ এসে আপনার হাতে স্বাধীনতা তুলে দেবেন না। হ্যাঁ নারী, লড়াই করে আপনার অধিকার আপনাকেই আদায় করতে হবে!
তিন.
দু’জন তরুন-তরুণী একসাথে থাকতে চাইলে, একটা সংসার করতে চাইলে আসলে বিয়ে করাটা কি খুব জরুরী? বিয়ে তো একটা স্রেফ সামাজিক প্রথা ছাড়া কিছু নয়। গত মঙ্গলবার জেঠাতো বোনের বিয়ে গেলো। পাত্র পক্ষের (সমাজের ভাষায়) কোনো দাবী ছিল না। আসলে এই ভদ্র সমাজে মেয়ের পক্ষ থেকে পাত্রকে ফার্নিচার, ফ্রিজ, ফ্লাট টিভি, ভরি পাঁচেক স্বর্ণালংকার, আরেকটা লক্ষ টাকা বাজেটের ক্লাবে বিয়ে দেয়াকে যৌতুক বলে না। এটা মেয়ের বিয়েতে এমনি এমনি দিতে হয়। এটাকে বলে সৌজন্যবোধ। আসলে আমাদের কোনো দাবী নেই। বিয়ের পরে তোমার মেয়ে ঘরে বসে সময় কাটানোর জন্য একটা ফ্লাট টিভি লাগবে। গরমকালে তোমার মেয়ে একটু ঠান্ডা পানি খেতে চাইলে একটা ফ্রিজ লাগবে। তোমার মেয়ে থাকার জন্য সেগুন কাঠের একটা বক্সখাট লাগবে। কাপড়-চোপড় রাখার জন্য একটা কাঠের আলমারি লাগবে। খাওয়া দাওয়া করার জন্য ডাইনিং টেবিল আর চেয়ার লাগবে। ড্রেসিং টেবিল, শোকেস লাগবে এই। আর বিয়েতে হাজার খানেক বরযাত্রী খাবে, আর কিছু না। এগুলো দাবী না, এগুলো সৌজন্যতা! অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই সৌজন্যতা কিন্তু শুধু মেয়ের পক্ষকে দেখাতে হয়। পাত্র পক্ষের তেমন দায় নেই। ওরা আসবে খাবে মেয়েকে বউ করে নিয়ে যাবে। এই রীতি আমাদের বাঙালি সমাজের শিক্ষিত (সার্টিফিকেট শিক্ষা) অশিক্ষিত প্রতিটি মেয়ের ক্ষেত্রে আছে। ঐদিকে মেয়ের বাবা কিংবা বড় ভাই অর্থের দিক থেকে কতোটা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সেই ব্যাপারটা কেউ দেখে না। তারা কি জমি বিক্রি করে দিচ্ছে, নাকি দোকান বিক্রি করে দিচ্ছে এটা দেখার বিষয় নয়। একটা দম্পতির মনোমালিন্য হলে বিয়ের পরেও হতে পারে। এমন কি বিয়ের পরেও ছাড়াছাড়ি হতে পারে। মতবিরোধ থাকলে ছাড়াছাড়ি হওয়াটা স্বাভাবিক। তো বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা কি এদের বন্ধনকে অটুট রাখতে পারবে? আমার কেনো জানি মনে হয়, বিয়ে একটি পুরুষতান্ত্রিক প্রথা।
আমাদের সমাজে ছেলেরা বিয়ে করে আর মেয়েদের বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ে শেষে বাবা তার মেয়েকে ছেলের হাতে, ছেলের বাবা-মার হাতে তুলে দিয়ে অসহায়ের মতো বলেন, -আজ থেকে আমার মেয়েকে তোমাদের হাতে তুলে দিলাম। কি হাস্যকর আর অসাম্য সিস্টেম! সমস্যা হলো আমাদের মেয়েদের মনমানসিকতার। আমাদের মেয়েরা বিয়ে করা ছাড়া সংসার করার রিস্ক নিতে চাই না। বিয়ে না করে সংসার শুরু করলে যদি ছেলেটা দু’দিন পর অন্যত্র চলে যায়? তখন কি হবে? সমাজ তো আমাকে বেশ্যা বলবে! ছেলে যদি ছেড়ে চলে যায় সেই তো বিয়ের পরেও যেতে পারে নাকি? আরেকটা কথা, ছেলে যদি আপনাকে ছেড়ে চলে যায়, আপনি কেনো কাঁদছেন? আপনি কি কোনোভাবেই আপনার জীবনটা দাঁড় করাতে পারবেন না? আপনি কিছু একটা করে কি নিজের জীবনটা চালিয়ে নিতে পারবেন না? এই হিম্মৎ কি আপনার নেই? আমি দীর্ঘদিন থেকেই বিয়ে প্রথার বিরোধী। এই প্রথা শুধু মেয়ের পক্ষের অর্থ ক্ষতিগ্রস্থ করে না, এই প্রথা একজন নারীকে আবদ্ধ জীবন দেয় আর স্বামীর দাসীত্বে পরিণত করে। এখন এটা নিয়ে আমাদের সোচ্চার হওয়া দরকার।
চার.
মিরাক্কেল টু নাকি থ্রিতে ঠিক মনে পড়ছে না, তবে একটি বালিকা জোকসটা বলেছিলো। তার নাম মনে পড়ছে না! জোকসটা এরকম-- হলিউডের কোনো মুভিতে একটি মেয়েকে ছয়জন ধর্ষন করতে এলে মেয়েটির হাতে যদি ছয়টি বুলেট ভরা পিস্তল থাকে, তখন মেয়েটি বলবে, -এখানে ছয়টি বুলেট আছে, আমার কাছে আসলে ছয় জনকে মেরে শেষ করে দেবো! আর আমাদের বাঙালি সিনেমার মেয়েরা হলে তখন ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে কাঁদতে বলবে, -এখানে ছয়টা গুলি আছে, তোমরা কাছে আসলে আমি কিন্তু নিজেকে মেরে শেষ করে দেবো.... ভ্যাঁ ভ্যাঁ ভ্যাঁ.... মতামতঃ যদিও এটা একটা জোকস, তারপর ও বাস্তবতার সাথে মিল আছে। তো আমাদের সিনেমা পরিচালকরা মেয়েদের ভ্যাঁ ভ্যাঁর বেশি ভাবতে দেয় না।
পাঁচ.
আমাদের ছেলেরা বিয়ে করে। আর আমাদের মেয়েদের সাজিয়ে গুজিয়ে ছেলেদের হাতে তুলে দিতে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ে শেষে মেয়ের বাবা-মা কান্না করে জামাইকে বলে, -বাবা আজ থেকে আমার মেয়েকে তোমার হাতে তুলে দিলাম। আমার মেয়েকে একটু দেখো বাবা। কিছুদিন আগে এক নিউজে দেখলাম, বিয়ের আগে মেয়েরা নিজেকে কিভাবে প্রস্তুত ও আকর্ষনীয় করে তুলবে তার বর্ণনা। প্রথমে লোম তুলে শরীর তুলতুলে কোমল করবে। ডায়েটিং করে চিকনা কোমর করবে, বক্ষ উন্নত ও টান টান রাখবে। চিকন ভ্রু প্লাক করে মুখের সৌন্দর্য্য বাড়াবে। সবকিছু মিলিয়ে একটি সেক্সিময় শরীর উপস্থাপন করবে মেয়েটি। যাতে বাসর রাতে সেই স্বামীর মন পায়, বেশি বেশি ভালোবাসা পায়। এই বরের কাছে কনেটিকে যেন এক সুস্বাদু খাবারের আইটেম বানিয়ে পাঠানো হচ্ছে। যাতে বর খেয়ে দেয়ে একটু তৃপ্তি পায়। দুঃখের বিষয় ঐ নববধুটিকে এভাবে উপস্থাপিত হতে সবচেয়ে বেশি উৎসাহিত করে মেয়েরাই। আমার মতে, বিয়ে একটি পুরুষতান্ত্রিক প্রথা, সেই সাথে এটা নারীকে পরাধীন করে রাখার নিয়মও বটে। এই প্রথা না ভাঙ্গলে নারীর স্বাধীনতা, মুক্তি কখনো সম্ভব নয়। এখানে প্রথমে নারীকেই এগিয়ে আসতে হবে, এবং বলতে হবে, বিয়ে নামক এই পরাধীনতার পিড়িতে আর বসবো না!
ছয়.
আমাদের মেয়েরা খুব অসহায়, পরাধীন। তাদের হাত খরচের টাকার জন্য বাবার দিকে, ভাইদের দিকে, স্বামীর দিকে, সন্তানের দিকে হা করে চেয়ে থাকতে হয়। তারা নিজের সিদ্ধান্তে চলতে পারে না। তারা কি করবে না করবে আমরা পুরুষরাই সেই সিদ্ধান্ত নিই। এখানে নারীস্বাধীনতা কিন্তু নারীর এই অর্থাভাবের কাছে অনেকটা হেরে যাচ্ছে। --নারীর স্বাধীনতা পাওয়ার প্রথম ধাপ হলো তাদের আগে যেকোনো মূল্যে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে। আমার মনে হয় এখানে নারী বেশ্যারা সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা উপভোগ করছে। নিজের যৌনাঙ্গটি নিজের মতো করে ব্যবহার করছে। যার সাথে ইচ্ছে তার সাথে শুচ্ছে। কারো কোনো খবরদারী নেই। তসলিমা খুব ক্ষোভের সাথে বলেছিলেন, -নারীদের স্বাধীনতা পেতে এই সমাজে তাকে প্রথমে বেশ্যা (বেশ্যা শব্দটা শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হতে হবে) হতে হবে। কারণ স্পষ্টভাষী বা স্বাধীনচেতা বা রাতের শহরে একা ঘুরে বেড়ানো কোনো নারী দেখলে আমরাই তো বলি, -মেয়েটা একটা মাগী, মেয়েটা একটা বেশ্যা!
সাত.
নারী স্বাধীনতা বিষয়টা বোধহয় আমাদের বাঙালি নারীদের জন্য আসে নি। আমাদের অধিকাংশ বাঙালি নারীরা বিয়ে করে স্বামীর উপর নির্ভরশীল হয়ে জমিয়ে সংসার করতে চাই। দিনশেষে তাঁরা একজন ভালো গৃহিনী ও মাতৃত্বকে গৌরব মনে করে। স্বামীহীন তাঁরা নিজেকে অস্তিত্বহীন মনে করে। প্রভু (স্বামী) যা বলবে তা শিরোধার্য মনে করে। তারা এটা চিন্তা করে না যে নিজের একটা মস্তিষ্ক আছে, নিজের সিদ্ধান্তে চলার তার ও যে অধিকার আছে, এই কথা সেই বেমালুম ভুলে বসে আছে। তার ও যে কর্মক্ষমতা আছে সেই জানেই না। আমার মায়ের কথাই বলি, তাঁকে কখনও দেখি নি বাবার সাথে দ্বিমত করতে, বাবার সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে। মাকে একবার বলেছিলাম- আচ্ছা মা তোমার কি কখনো ইচ্ছে করে না আমাদের মতো কোথাও ঘুরতে যেতে? স্বাধীন ভাবে চলতে? দু’দিন রান্না ঘরের কাজ বন্ধ রেখে, সংসারের দায়-দায়িত্ব ভুলে গিয়ে কোথাও বেড়াতে যেতে? ইচ্ছে করে না নিজের মতো করে চলতে? আমি মাকে বোঝাতে চেয়েছিলাম তাঁর স্বাধীনতার কথা। আমার কথাগুলো বোধহয় মা'র বোধগম্য হয় নি। মা নির্লিপ্তভাবে শুধু বললো- আমি কোথায় যাবো? তোদের নিয়েই তো আমার সংসার। আমার স্বাধীনতা কিসের জন্য? মাকে আর কিছু বলি নি।
আসলে এদেশের অধিকাংশ মেয়ের মানসিকতা আমার মায়ের মতোই। তারা নিজের অধিকারের জন্য সচেতন নয়। তারা স্বামী-সন্তান নিয়ে মস্তিষ্ক-এর চেতনায় তালা মেরে নিশ্চিতে নিদ্রা যেতে চায়। -জানি না এঁরা কখন নিজের অধিকারের পক্ষে সজাগ হবে? তারা যতো তাড়াতাড়ি সজাগ হবে তত দ্রুত মানব সভ্যতার জয় হবে।
আট.
আমাদের অধিকাংশ মেয়েদের মনমানসিকতা হ্যাপির মতো। তারা কোনো ভুল করেও যদি প্রেমিকের সাথে সঙ্গম করে ফেলে, তারা মনে করে পরবর্তীতে সেই প্রেমিককেই তার বিয়ে করা উচিত। হোক সেই প্রেমিক ধর্ষক প্রতারক কিংবা লম্পট। তাকে আমার বিয়ে করা চাইই চাই। তারা ভাবে, সেই তো আমার মধু খেয়ে ফেলেছে! আমি তো নষ্টা হয়ে গেলাম! এখন আমাকে কে বিয়ে করবে? কোন পুরুষটা আমাকে বিয়ে করে ঘরে বউ করে তুলবে? আমাদের মেয়েরা এই সহজ সমীকরণটা বোঝে না যে, পুরুষরাও তো পতিতালয়ে যায়। তারাও আবার বিভিন্ন মেয়ে চেখে দেখার ইচ্ছা পোষন করে। তারা পারলে আমরা পারবো না কেনো? আমরাও তো মানুষ। বিয়ের আগে পুরুষরা যদি যৌনতার স্বাদ গ্রহণ করতে পারে, আমরা কেনো পারবো না? আমাদেরও তো ইচ্ছে হয় যৌনস্বাদ গ্রহণ করার। একজন পুরুষ হয়ে এসব আবাল মুর্খ মেয়েদের অনেক বুঝেয়েছি, অনেক লিখেছি। তবুও তারা বোঝে না, তারা বুঝে শরীরের কোনে লুকিয়ে থাকা ছোট্ট এক টুকরো যৌনীই তার সম্বল, তার জীবন। এটা একবার ব্যবহার হয়ে গেলে এই বুঝি তার সবকিছু শেষ হয়ে গেলো! কি তুচ্ছ মানসিকতা! চিন্তার দৈনতা দেখে তোমাদের প্রতি অশেষ করুণা হয় আমার। -এসব মেয়েদের কোনো আত্মসম্মান নেই, আত্মসম্মানের সংজ্ঞা এরা বুঝে না। এদের সমস্ত চিন্তা- ব্যক্তিত্ব-আত্মসম্মান, ঐ ছোট্ট যৌনীকে ঘিরেই। মন আর ব্যক্তিত্বের আত্নমর্যদাবোধ এদের কাছে বড় নয়।
নয়.
জীবনে এই একটি মাত্র মেয়েকেই (যদিও স্বচক্ষে দেখিনি) দেখেছি। মুখে যা বলে তা বাস্তব জীবনেও প্রতিষ্টা করে। নারী স্বাধীনতার কথা বলেছে, নিজের জীবনে তা অর্জন করে দেখিয়েছেন। নারী-পুরুষের সমতার কথা বলেছেন, তিনিও সমতার সাথে ঠিক তাল মিলিয়ে পুরুষের মতো বীরদর্পে বার বার এগিয়ে গিয়েছেন। তিনি নারীকে পরনির্ভরশীল না হয়ে স্বনির্ভর হতে বলেছেন। এবং তিনি তা করে দেখিয়েছেন। তিনি শিক্ষার্থী জীবনে ডাক্তারী পড়েন বলে তাঁর চেয়ে কোনো উচ্চ পদস্থ ডাক্তারকে তিনি ভালোবাসে নি, ভালোবেসেছিলেন ছন্নছাড়া এক সাহসী কবিকে। আমাদের দেশের অধিকাংশ মেয়েরা অনার্স বিবিএ মাস্টার্স শেষ করলে বসে বসে হিসেব কষে কাকে বিয়ে করলে লাভবান হবে। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার নাকি ব্যাংকারকে? তিনি কালের স্রোতে গা ভাসান নি। যেমনি কথা তেমনি তাঁর কাজ। তিনি তার নারী পাঠকদের সাথে কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করেন নি।
আমরা তো অনেক বড় বড় লেখক দেখি, আদর্শের বুলি কপচাতে। আদর্শের বুলি কপচানো সেই লেখকরা নিজের জীবনে আবার তা প্রয়োগ বা চর্চা করতেন না। কিন্তু তিনি মুখে যা বলতেন, তা করতেন। তাঁকে আমি লেখক হিসেবে যতটা না শ্রদ্ধা করি, তার চেয়ে বেশি শ্রদ্ধা করি একজন সত্যবাদী মানুষ হিসেবে। তিনি নিজের ভুল ভালো খারাপ নোংরা কুৎসিত সুন্দর অসুন্দর সবকিছু তার আত্নজীবনীতে নির্দ্বিধায় বলে গেছেন। কোনো বেঈমান লেখকের মতো তিনি নিজের কুৎসিত দিকগুলো লুকিয়ে রাখেন নি। তাঁর বিষয়ে কোনো তর্কের সময় তার নাম যতবার মুখে নিয়েছি, ততবার গর্বে আমার বুক ভরে গিয়েছে। চোখের সামনে কেউ তাঁকে গালি দিলে, তাঁর অপপ্রচার চালালে গলার রগ ফুলিয়ে ঔদাত্ত কন্ঠে তার প্রতিবাদ করেছি। এই নিয়ে রাস্তা ঘাটে কয়েকবার মারও কম খাইনি। তবুও তাঁর আদর্শকে মনে প্রাণে ধারন করার চেষ্টা করি। সেই মহামানবীটি আর কেউ নন, তিনি "তসলিমা নাসরিন"। হে মহামানবী, তোমার দীর্ঘায়ু কামনা করি। এই পৃথিবীতে আরো অনেক কাল তোমার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। যেখানে থাকো, ভালো থেকো।
দশ.
নারীরা পুরুষতন্ত্রের চাকার নীচে পড়ে হাজার হাজার বছর ধরে নিষ্পেষিত হয়ে আসছে। তবুও তারা পুরুষের তৈরি ধর্মগুলোকে পরম শ্রদ্ধায় পরম ভক্তিতে আগলে রাখে। পুরুষকে (স্বামীকে) প্রভুজ্ঞান করে। যে ধর্মগুলো তৈরি করেছে পুরুষরা। কি গো নারী, আপনি ধর্মকে মাথায় তুইল্যা রাইখা পুরুষতন্ত্রের কাছ থেইক্যা কোনো ধরনের নারী মুক্তির স্বপ্ন দেখতাছেন। এটা তো মরুভুমিতে জল অন্বেষণ করার মতো বৃথা চেষ্টা মাত্র!
এগারো.
আমাদের অধিকাংশ বাঙ্গালি নারীরা মন মজিয়ে পতি সেবা করে বেহুলা হতে চায়, তারা দুঃস্বপ্নেও তসলিমা নাসরিন হতে চায়না।
বারো.
এদেশের মেয়েরা যদি বিকিনি পড়ে রাস্তায়, বীচে, কিংবা পার্কে হাঁটে, আমি তাঁদের হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানাবো। মেয়েরা রেখে ঢেকে বোরকা পরে হাঁটলে তখন তো তাঁদের প্রতি তীব্র কৌতূহল থাকবেই। ভিতরে কি আছে তা দেখার জন্য আগ্রহের তীব্রতা তো বাড়বেই! যেখানে ইসলামের অনুশাসনে মেয়েরা বোরখা পড়ে চলাফেরা করছে সেখানে ধর্ষনের হার আদৌ কমেছে কি? পশ্চিমা বিশ্বের মেয়েগুলো তো প্রায় বিকিনি পড়ে রাস্তায় বেড়াচ্ছে, সিবীচে যাচ্ছে, সেখানের ধর্ষণের খবর শোনা যায় কি? খালি মাঝে মাঝে আরবীয় পুরুষরা তাদের দেখলে প্রচন্ড কামুক চোখে তাকিয়ে চোখ দিয়ে ধর্ষণ (তারা তো আজীবন বস্তার মতো বাঁধা বোরখা পড়া মেয়ে দেখেছে, হঠাৎ দেখেছে তো তাই এরকম করছে!) করে এই যা! এদেশের মেয়েরাও যখন ছোট কাপড় আর বিকিনি পড়া শুরু করবে, তখন মৌল্লাদের ঈমানদন্ড প্রথমে একবার দাঁড়াবে, দুইবার দাঁড়াবে, তৃতীয় বার একটু স্তিমিত হয়ে আসবে। দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে একসময় ঈমানদন্ড আর দাঁড়াবেই না! সো বোরকা পড়লে যে ধর্ষণ রোধ হবে এই যুক্তিটা আমার কাছে পুরোপুরি হাস্যকর!
তেরো.
বিদেশের মেয়েরা যখন পুরুষদের সাথে সমানে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তখন আমাদের দেশের মেয়েরা তার বুকের দিকে, তার নিতম্বর দিকে, তার চেহেরার দিকে কে কে তাকাচ্ছে, এই চিন্তার অস্থির! বিদেশের মেয়েরা যখন ঠেলাঠেলি করে প্রতিযোগিতায় নেমে পুরুষদের পেছনে ফেলে সামনের গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যায়, তখন আমাদের দেশের মেয়েরা দশটি বাস মিস করেও একটি খালি মহিলা সিটের আশায় স্টেশনে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে। যদি কারো শরীর তার গায়ে লাগে!
বিদেশের মেয়েরা যখন কাজ করে, মনে প্রাণে কাজে মগ্ন থাকে। আর আমাদের দেশের মেয়েরা কাজের সময় বুকের ওড়না, মাথার কাপড়, বোরকাটা ঠিকঠাক গোছগাছ আছে কিনা এই চিন্তায় মগ্ন থাকে।
মন্তব্যঃ এসব মেয়েরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে। অথচ এরা নিজেদের নারী ভাবে, মানুষ ভাবে না। এদের ছেলেদের সাথে পাল্লা দিয়ে যেকোনো কাজ করার কোনো মনোভাব নেই। আবার এরাই তোতা পাখির মতো বলে, -আমি তো নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাসী! আসলে এরা নারী স্বাধীনতা কি, শিক্ষা কি, সভ্যতা কি জানেই না! ডিসগাস্টিং!