আলহাজ্ব মুফতি আব্দুল্লাহ আল মাসুদ

অনলাইন একটিভিস্ট।

আমার ইয়োগা টিচার

যখন থেকে আমি মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসী হতে থাকলাম তখন থেকে আমার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হতে লাগলাম। মনে হতে লাগলো, আমার সুস্থভাবে বেঁচে থাকার দরকার। মানসিক শক্তি ও সাহস প্রচন্ডরকম দরকার। ইসলামিক দেশের নাগরিক হয়ে ইসলাম ত্যাগ করলে তার সাথে কিরূপ আচরণ করা হয় সেব্যাপারে আমি সম্যকরূপে জ্ঞাত ছিলাম।

২০১৪ সালের একটি ঘটনা, তখনো পুরোপুরি ধর্মে অবিশ্বাসী হতে পারি নি, তবে অবিশ্বাসের পারদ ক্রমেই চড়ছিলো।

বালুঘাটের (ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায়, আমার সাবেক কর্মস্থল) একটি জিমে গেলাম শরীরচর্চা করতে ভর্তিও হলাম। ইমাম হয়ে জীমে যাওয়ার মতো হিম্মত সবার হয় না, আমার হয়েছিলো। ইসলাম ধর্মে জিম করা, ইয়োগা করা, মেডিটেশন করা হারাম। ইমাম সাহেবের জন্য তো ভয়ানক হারাম!

(ইমামের জন্য ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, ক্রিকেট খেলাও হারাম। আমি ইমাম থাকাকালীন অবশ্য শীতকালে প্রতিদিন ব্যাডমিন্টন খেলতাম।)

জিমে একদিন ট্রেডমিল করছিলাম, ড্রেস অবশ্য পাজামা-পাঞ্জাবিই ছিলো - হঠাৎ শুনলাম সালামের আওয়াজ, পেছন ফিরে দেখি, খুব ভদ্রভাবে দাঁড়িয়ে এক ছেলে সালাম দিচ্ছে আমাকে! সে আমারই মুসুল্লি।

এ জিম বাতিল, টাকা ফেরত দেয়া হলো। আমি বললাম ইনস্ট্রাক্টরকে, টাকা ফেরত নেবো কেনো? ভর্তি ফি তো অফেরতযোগ্য!

তার জবাব -হুজুর, আপনার সাথে এ হিসাব চলবে না। টাকা ফেরত নিতে হবে, নইলে কষ্ট পাবো। এরপর মিরপুর ১০ নাম্বারের একটি জিমে ভর্তি হলাম। দূরত্বের কারণে বেশি যাওয়া আসা হতো না, সপ্তাহে দু’একবার যাওয়া হতো।

তখন ইউটিউব সার্চ করে যোগা বা ইয়োগা সম্পর্কে জানলাম, বাংলাদেশে যোগা করাটা বেশ টাফ, ইমাম সাহেবের জন্য তো মারাত্মক টাফ!

এখন যে দেশে আছি সেখানে এসে প্রথমে একটা জিমে ভর্তি হলাম। ছেলেদের ইন্সট্রাক্টর আলাদা, মেয়েদের ইন্সট্রাক্টর আলাদা। আমার ইন্সট্রাক্টর মশাই মেয়েদের কাছে গিয়ে সেধে সেধে শিখিয়ে দেন, মাগার আমি জিজ্ঞেস করলে বেচারা তড়পাতে থাকেন! অবিবাহিত প্রেমপাগল ইন্সট্রাক্টর আমার!

জিম বাদ দিলাম, যোগায় ভর্তি হলাম। টিচার খুব ভালো মানুষ, শেখানোয় কোনো কার্পণ্য নেই, উত্তর দিতেও কার্পণ্য নেই। কে জানে কি কারণে, তিনি আমাকে বিশ্বস্ত মানুষ মনে করে ফেললেন, তার সুখদুঃখের কথা আমাকে শেয়ার করলেন। তার জীবনসঙ্গীকে নিয়ে তার দুঃখগাঁথা জানালেন।

ধরুন আমার টিচারের নাম (ছদ্মনাম দিলাম) রুবি রায়, এবং তার সঙ্গীর নাম মি.চক্রবর্তী। রুবির পুরুষ সঙ্গী (বিয়ে রেজিস্ট্রি হয় নি, তবে সবাই জানে তারা বর-বধূ) তাকে মেন্টালি এবং ফিজিক্যালি টর্চার করে। ভগবানকে সাক্ষী রেখে তারা একে অপরকে বর-বধূ হিসেবে গ্রহণ করেছেন, চিরদিন ভালোবাসার প্রতিজ্ঞা করেছেন। তিনবছর লিভটুগেদার করার পর এখন চক্রবর্তীর কাছে পুরনো প্রেমিকা ভাল লাগছে না, নতুনত্বের সন্ধানে তিনি মরিয়া।

(ভগবান এখানে পুরুষের কাছে বড় অসহায়!) রুবিকে চক্রবর্তী বিয়ের প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, এখন সে প্রতিজ্ঞা ব্রেক করতে চাইছেন!

বিয়ের প্রতিজ্ঞা করে শারীরিক সম্পর্ক করা কি প্রতারণা নয়? নারী-পুরুষ উভয়ের শারীরিক চাহিদা আছে, এবং সেটা পূরণের প্রেমময় পন্থাও আছে। মিথ্যাচার এবং ধোঁকাবাজি কখনো প্রেমময় পন্থা হতে পারে না। আজ ভালো লেগেছে কাউকে, কাল ভালো না-ও লাগতে পারে, এটা খুবই স্বাভাবিক; কিন্তু শুরুতে মহাপ্রেম দেখিয়ে আল্লাহ-ভগবান-ঈশ্বরের নাম নিয়ে শপথ করে পরে রূঢ়তা দেখানো কি নীতিহীনতা নয়?

আপনি যদি উপমহাদেশীয় অধিকাংশ পুরুষদের একজন হন তবে আপনাকে বলছি -এতদিন শরীরের টানে প্রেম করেছেন, এখন শাসন করছেন। চাচ্ছেন, প্রেমিকা যেন আপনার হুকুমের দাসী হয়ে যায়। মার খেয়ে প্রতিবাদ করলেই সে খারাপ মেয়েমানুষ, উপমহাদেশীয় পুরুষের দৃষ্টিতে। আপনি যদি পেটোয়া পুরুষ হন তবে শুরুতে পেটোয়াগিরি না দেখিয়ে আপনার প্রেম দেখালেন কেনো? এটা কি হিপোক্রেসী নয়?

রুবি এবং চক্রবর্তী উভয়েই লিবারেল ধার্মিক। ঠাকুরকে সাক্ষী রেখেছিলো রুবি, কিন্তু অকর্মা ঠাকুর এখন কোনো উপকার করছে না তার ভক্তকে। ঠাকুরের বদলে যদি আইনানুগ পদ্ধতিতে যেতো তাহলে আজ আইন তাকে কিছুটা হলেও ফেভার করতো।

বয়সে ছোট হলেও রুবি ম্যাম আমার টিচার, অর্থাৎ গুরুজন। তিনি এখন ডিসিশন নিয়েছেন, পেটোয়া মাইন্ডের পুরুষের সাথে সম্পর্ক রাখবেন না। কথায় কথায় ভুল ধরা, গায়ের জোর দেখানো, মাঝেমধ্যে চড়-থাপ্পর মারা নাকি চক্রবর্তীর শখ! এ শখটা আগে ছিলোনা, এখন এ শখ চেপেছে তার মাথায়। পরিবার, সমাজ, সম্মান সবকিছু হারাতে বসেছেন রুবি রায় (তার বিশ্বাস অনুযায়ী।)

আমি অবশ্য বলেছি এ ধরনের পুরুষকে নিজের জীবন থেকে ঝেঁটিয়ে বিদেয় করতে। পৃথিবীতে ভালো পুরুষের অভাব নেই। একজন ভারতীয় নারী হয়ে কি পারবেন তিনি ঝাঁটাতে?

তিনি আমাকে বলেই ফেললেন, মাসুদ জেনে রেখো এটা ইউরোপ নয়, এটা ভারত। এখানে একটা ব্রেকাপ একজন নারীর জীবনকে তছনছ করে দেয়, সমাজ তার জীবনটাকে নরক বানিয়ে ছাড়ে।

আমি বলেছি, সমাজ আপনাকে ডমিনেট করবে কেনো? আপনি বরং সমাজকে বদলানোর চেষ্টা করুন।
আপনি অশিক্ষিত, মুর্খ, চালচুলোহীন গৃহপালিত বধূ নন, আপনার ঘুরে দাঁড়ানোর কোয়ালিটি আছে। ঘুরে দাঁড়ান, লম্পটদেরকে সজোরে চপেটাঘাত করতে শিখুন।

মি. চক্রবর্তীকে দেখে মনে হয় নি তারমধ্যে কোনো প্রেম, মমত্ব, কাব্য থাকতে পারে। নিরামিষ একটা পুরুষ। অপরদিকে রুবি রায় একজন প্রকৃতিপ্রেমিক, ছড়াকার ও লেখিকা। মি. চক্রবর্তীর চাইতে কোনো অংশেই কম নন তার প্রেয়সী।

মেয়েদের সাইকোলজি মেয়েরাই ভালো বুঝবে। আমি আমার টিচারকে আমার ভারতীয় বোনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম, আশা করি সুপরামর্শ এবং শান্তনা তিনি পাবেন।

পরামর্শ : মানুষ চিনতে ভুল করা অনুচিত। পেটোয়া পুরুষকে সঙ্গী বানালে কাঁদতে হয়। পেটোয়ারা মূলত কাপুরুষ। একজন পারফেক্ট পুরুষ কখনো নারী নির্যাতক হতে পারে না। একজন পারফেক্ট নারী কখনো পেটোয়ার সাথে আপোষ করে না।

বিঃদ্রঃ মুমিনরা যেহেতু ছুঁচো থেকে বিবর্তিত হয়ে এসেছে, তাই তারা এখানেও গন্ধ শুঁকবে! মুমিনকুলের অসুবিধে হলে, অনুভূতি তীব্র হলে সিরিয়ায় গিয়ে মরুন। এখানে দুর্গন্ধ ছড়াবেন না!

1872 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।