দিলশানা পারুল

জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যানে পড়াশোনার পাশাপাশি লম্বা সময় ধরে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সাথে যুক্ত ছিলেন দিলশানা পারুল। দশ বছর বামপন্থি রাজনীতির সাথে ‍যুক্ত ছিলেন, তারপর দশ বছর এনজিওতে শিক্ষা গবেষনা এবং বাস্তবায়ন নিয়ে কাজ করেছেন। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় এডুকেশন সেক্টরে কাজ করছেন। এর পাশাপাশি অনলাইনে লিখালিখি করেন।

আমাদের দেশের প্রত্যেকটা পুরুষ প্রথম নারীর অপমান দেখে নিজের মাকে দিয়ে

ধষর্ণ কেন হয়? এইটা কি বিকৃত পুরুষের মনো বিকার? না। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে অন্তত ধর্ষক পুরুষেরা মনোবিকার গ্রস্থ নয়। এরা সমাজে স্বাভাবিক ভাবে হেঁটে চলা মানুষ। এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এরা কোনো না কোনো ভাবে ক্ষমতার সাথে সম্পৃক্ত। হয় এরা র্নিদিষ্ট এলাকার অর্থবান, নয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, আত্মীয়তার জোরে অথবা যে ভাবেই হোক ক্ষমাতার আশে পাশে থাকা মানুষ।

ফেবুতে দুইটি ভিন্ন ভিন্ন ভিডিও ক্লিপ দেখেছি ছাদে এবং দোকানে দুইজন বালিকাকে শারীরিকভাবে মোলেস্টেড করছে দুই জন সমভ্রান্ত চেহারার ষাট উর্ধ ভদ্রলোক। এদের চেহারা দেখেই বুঝবেন এরা সমাজে গ্রহণ যোগ্য চরিত্র এবং এরা সম্ভাব্য না, সুযোগ পেলে এরা ধষর্ণ অবশ্যই করেছে এবং করে। যে পুরুষ ধর্ষক সে কি হঠাৎ করে ধর্ষক হয়ে উঠে? বা ধর্ষক হিসেবেই কি জন্ম নেয়? না।

একটা সমাজ ব্যাবস্থায় পুরুষের ধর্ষক হয়ে উঠার নিয়ামক বা উপাদান থাকেত হয়। বাংলাদেশ এবং ভারতের সমাজ ব্যাবস্থায় পরতে পরতে এই নিয়ামক সাজানো আছে। খেয়াল করেন একটা মুসলিম অধ্যুষিত সমাজ আরেকটা হিন্দু অধ্যুষিত সমাজ ব্যাবস্থা। কিন্তু নারী এবং ধষর্ণ প্রশ্নে কিন্তু তেমন কোনো র্পাথক্য পাবেন না। এখন বলবেন পরিবার বা সমাজে কেউ কি একজন পুরুষ কে ধর্ষক হতে শিখায়? হ্যাঁ শিখায়। একটা সমাজ ব্যাবস্থা নারী কে যেভাবে দেখে একজন ব্যাক্তি পুরুষ নারীকে ঠিক সেই ভাবেই দেখে। উল্টো করে বললে পুরুষ শাষিত সমাজ ব্যাবস্থায় গোষ্ঠিবদ্ধ পুরুষ নারীকে ঠিক যেভাবে দেখে সমাজ নারী কে ঠিক সেই ভাবেই দেখে।

আমাদের ধর্মীয় ভাবনা, গল্প, উপন্যাস, সাহিত্য, নাটক, সিনেমা, প্রত্যেকটা যায়গায় নারী স্রেফ তার জৈবিকতা নিয়ে উপস্থিত। যেন নারী প্রেম করার উপাদান ছাড়া আর কিছু না। এই যায়গায় ভারত আমাদের চেয়ে আগানো। আমাদের দেশের প্রত্যেকটা পুরুষ প্রথম নারীর অপমান দেখে নিজের মাকে দিয়ে। বাবা মাকে সেবাদাসী হিসেবে দেখে এবং দেখবেন এইটাই স্বাভাবিক। কাজেই নারী শব্দটার সাথে পারষ্পারিক শ্রদ্ধা বোধের কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে এইটাই আমদের সমাজের পুরুষেরা জানে না, শেখে না।

আমাদের দেশের অল্প বয়সী ছেলেরা প্রথম যৌন শিক্ষা পায় নীল ছবি দেখে অথবা চটি বই পরে। যৌনতার সাথে স্বাভাবিক মানবিক সম্পর্ক যে জড়িত এইটাই তো আমাদের দেশের পুরুষেরা জানে না। আমি ঢালাও ভাবেই বললাম পুরুষেরা। কারণ পুরুষ বলতে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির অল্প কিছু শিক্ষিত এবং রুচিশীল পুরুষ কে বোঝানো হচ্ছে না। আপনি নিরপেক্ষ ভাবে ঢালাও ভাবে দেখেন আমাদের দেশের পুরুষেরা আসলে নারীকে কি ভাবে দেখে? যেই পুরুষেরা ধর্ষণের সাথে যুক্ত এরা কিন্তু ধষর্ণ কোনো অপরাধ এইটাই মনে করে না। তুমি নারী আমার অধিনস্ত, আমাকে সেবা দিতে বাধ্য। ধর্ষণ এর পিছনে পুরুষ যে নারীর মালিক এই মালিকানা বোধই দায়ী আর কিছু না। আমি যখন তোমার মালিক তখন তোমাকে যেমন ইচ্ছে তেমন ব্যবহার করার অধিকার পুরুষ হিসেবে আমার জন্মগত অধিকার।

দুঃখ জনক এবং আতংক জনক ব্যাপার হলো সমাজে ক্রমাগত সেই নারী/পুরুষের সংখ্যা বাড়ছে যারা ধর্ষণের মতো একটা ভয়াবহ অপরাধ কে স্বাভাবিক ভাবে নিচ্ছে। এবং ধরেই নিচ্ছে ধর্ষণের পিছনে কোনো কারন থাকে। মেয়েরা যে সমাজে স্রেফ সেবাদাসী এবং শরীর সর্বস্ব ব্যাক্তি সত্বা সেই সমাজে ধর্ষণ সেবাদাসী থেকে জোর পূবর্ক যৌনসেবা পাওয়ার নাম। সেই সামজে ধষর্ণ স্বাভাবিক ঘটনা।

1914 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।