সাগর লোহানী

সাংবাদিক

আলোর মিছিল

মার্চের ২৫ তারিখ রাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আলোক প্রজ্বলন কোনো সাম্প্রতিক আয়োজন নয়। ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে গণআদালতের সফল আয়োজনের পর '৭১ এর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি' থেকে আমরা ১৯৯৩ সালের ২৫ মার্চ রাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আলোক প্রজ্বলনের প্রথম আয়োজন করেছিলাম, সেদিন প্রথম মশালটি প্রজ্বলন করেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম।

সকলে মোমবাতি জ্বেলে "মুক্তির মন্দির সোপানো তলে", "এ আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে" ইত্যাদি গান গাইতে গাইতে জগন্নাথ হলের গণসমাধিতে গিয়ে সেখানে আলোক স্থাপনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্বালে গণহত্যার স্মরণে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধের কালকে শ্রদ্ধা নিবেদনের এই রেওয়াজের এবার ২৫তম বর্ষ।

১৯৯৩ সালের সে আয়োজন আজ ব্যপ্তি পেয়েছে, লোকমুখে "আলোর মিছিল" নাম পেয়েছে। প্রতি বছর এ রাতে পরিবারের প্রায় সকলেই ছুটে চলে যাই শহীদ মিনার আর জগন্নাথ হল গণসমাধিতে। এমনকি আজ থেকে ২৩ বছর আগে ১ মাস ২৫ দিন বয়সে আমার মেয়ে শুচিস্মিতাও এ রাতে শহীদ মিনার থেকে জগন্নাথ হলে গণকবরে গিয়েছিলো “আলোর মিছিল” এ আমাদের সাথে।

আজ একটু আগে আমার এক বান্ধবীর সাথে ভিডিও কলে ৭১, ২৫ মার্চ, ২৭ মার্চ, কার্ফ্যু, শহীদদের নিয়ে কথা হচ্ছিলো। কথা যা হলো তার চেয়ে বেশী হলো কান্না, চোখের জল বাধা মানছিলো না যেন দুজনেরই। মনে পড়ছিলো এ রাতে এই কটা দিনে মাত্র ৯ মাসে আমরা যাঁদের হারিয়েছি, আমার খুব প্রিয় দুজন অসাধারণ মানুষের কথা বড় বেশী মনে পড়ছিলো, আমার মায়ের শিক্ষক ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব আর জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার কথা। ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরী স্কুল ছুটির পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস বিল্ডিঙে ফিলসফি ডিপার্টমেন্টে মায়ের ক্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে দেখা হতো জিসি দেবের সঙ্গে, কিম্বা তাঁর শিববাড়ীর বাসায় গেলেই কোলে বসিয়ে হাতে ধরিয়ে দিতেন মোয়া। মনে পড়ছিল বাবার/আমাদের পরিবারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ড. ফজলে রাব্বি, ড. আলিম চৌধুরী আর আলতাফ মাহমুদের কথা।

ড. রাব্বি আর ড. আলিমকে তো বাবা-মা আমাদের চিকিৎসার দায় দিয়ে নিশ্চিন্ত থেকে ছিলেন যেন। সেই ছোট্ট বেলায় আমার চোখে ছিলেন হিরো রুমী ভাই .... ৭২ এর জানুয়ারীতে ঢাকা ফিরে যখন শুনলাম ওঁদের আর দেখবো না তখন গুমরে গুমরে কেঁদেছিলাম।

আহ .... বুকের মাঝে চাপা ব্যথা মথিত হয়ে উঠছে এখনও। আর লিখতে পারছি না, আসলে লেখা যায় না, স্বজন যে হারায় সেই কেবল বোঝে স্বজন হারাবার বেদনা কি!

1763 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।