ফারিয়া শাহরিন একজন মডেল, উপস্থাপক ও অভিনয় শিল্পী। যার মিডিয়াতে কাজ করার প্রতিবন্ধকতা বিষয় নিয়ে সরগরম ইন্টারনেট জগত টেলিভিশন ও পত্রিকা। কি ছিল তার কথায় যাতে পুরো মিডিয়া জগত ক্ষেপে সারা! সারমর্ম যা বুঝেছি তা হলো, ফারিয়া কম কাজের ব্যপারে বিভিন্ন অমার্জিত শর্ত বা প্রস্তাবে রাজী হতে পারেন নি। পারেন নি মিডিয়ার কিছু ফেক ফেসের সাথে তাল দিতে। পেমেন্ট নিয়ে প্রতারনা তো আছেই।
আমি মেয়েটিকে প্রথম দেখেছিলাম, বাংলালিংক অ্যাডে। ভেবেছিলাম, সত্যি বুঝি সে বাংলালিঙ্কের কাস্টোমার কেয়ারে চাকরি করে। পরে জেনেছি সে মডেল। তবে সে যে লাক্স সুপার স্টার থেকে এসেছে তা জানতাম না।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে তাকে চিনি না। কিন্তু আমি তার ভিডিওটি দেখলাম। আমি দেখলাম তার প্রথম আলোয় ইন্টারভিউয়ের বিপরীতে একজন প্রবাসী অভিনেত্রীর জ্বালাময়ী ভিডিও। সাথে প্রথিতজশা স্টারদের উল্লসিত সমর্থন। কিন্তু আমি বুঝতে পারলাম না, এই যুগে, একটা মেয়ে তার যন্ত্রণার কথাটা বলে কি অন্যায় করল? কেনো সবার ফোস্কা পড়ছে? এরকম কেনো বোধ হচ্ছে, যে মিডিয়ার আলো চকচকে পোশাকটার একটা অংশ বাঁচাতে মিডিয়ার বাঘাবাঘা কর্ণধার মরিয়া হয়ে উঠেছে। কারণটা কি? সেখানে কি সত্যি আছে দগদগে ঘা, যা আড়ালে ঢেকে রাখতে চান ওনারা? আমি জানি, আছে। পৃথিবীর এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে নারীকে অনৈতিক ভাবে ব্যবহার বা তাকে ঠকানো’র ব্যপারটি না ঘটে থাকে।
অভিনয়শিল্পী বা নির্মাতাগোষ্ঠী দাঁতে রাগ চেপে ভিকটিম ব্লেমিং করছেন। টক শো গুলোয় যতই পরিশীলিত ভাষা প্রয়োগ করুন না কেনো, ‘কেনো বললো, সবার সামনে, ভেতরে ভেতরে মিটিয়ে ফেলা যেত, প্রমান কি? সে এমন কোন বিশ্বসুন্দরী, অ্যারোগেন্ট’ ইত্যাদি কথা ওঠার সাথে প্রতিষ্ঠিত স্টারদের ভার্চুয়াল এবিউজ তো আছেই। অথচ, এই সময় ঐ সব কুপ্রস্তাবকারী বা অসৎ নির্মাতার বিরুদ্ধে কেউ জোরালো আওয়াজ তুলছে না, ফারিয়ার নিরাপত্তার বিষয়টাও জোর দিয়ে কেউ দায়িত্ব নিয়ে বলছে না। এরকম হওয়ার কারণ কি ধরে নেবো যে ঐসব অসৎ নির্মাতাদের সাথে মিডিয়ায় আজ যারা কাছা সামলাতে গলা ফাটাচ্ছেন তাদের গভীর সম্পর্ক।
মিডিয়ার চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র এমন দাবি বা বিশ্বাস কেউ কখনও করে নি। কে কিভাবে চলবে তা যার যার ব্যাক্তিগত ব্যাপার, কিন্তু একটা মেয়ে আপনার সাথে ঘুরতে যেতে বা বেডে যেতে রাজী হলো না বলে তার পেমেন্ট আটকে দিবেন, তাকে কাজ দিবেন না, এই বাণিজ্য আর কতো? আমি আজ বলছি, আমি বাংলাদেশ টেলিভিশনে গান গাই না বহুবছর হলো। কারণ, সেখানে চলে ঘুস বাণিজ্য। ইদের সময় তো রীতিমত মাছের বাজারের মতো ঘুসের দরদাম চলে। সেখানকার এক প্রযোজক বলেছিলেন, সেখানে নিচ থেকে উপর পর্যন্ত সবার পকেট গরম করতে হয়। এখন, আমাকে আবার প্রমাণ দিতে বইলেন না! এখন কি অবস্থা তা অবশ্য জানি না। এটা একটা উদাহরন দিলাম। এরকম মিডিয়াতে আরও অনেক মেয়ে আছে, যারা বিবেকের সাথে চলে, যাদের কাজের চেয়ে সম্মান জরুরি মনে হয়। তারা ফারিয়ার মতো কম কাজ করে। ব্যতিক্রম থাকতেই পারে। মিডিয়াতে গার্জেন থাকলে, বা পরিচিত প্রভাবশালী থাকলে আপনার জায়গাটা হয়তো কিছুটা সুরক্ষিত হয়। কিন্তু এসব আসলে উদাহরণ হতে পারে না।
সময় এসেছে, যে যার জায়গা থেকে আওয়াজ তোলার। অনেক হুমকি ধামকি আসবে, নোংরা কথার তুবড়ি ছুটবে, কিন্তু একসময় থিতিয়ে যাবেই। যা অন্যায় তা ঢেকে রেখে লাভ নেই মাননীয় মিডিয়ার
অভিভাবকবৃন্দ। সত্যকে সামনে আসতে দিন, ফারিয়ার মতো আরও অনেকেই বলুক। নষ্ট তো অনেকদিন লালন হলো, এবার দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন শুরু হোক। ভাল খারাপ মিলিয়েই পৃথিবী। প্রকাশিত সত্য যতই কদর্য হোক, তা একটা গোটা পৃথিবীকে ধ্বংস করে না। তাই ভিকটিম ব্লেমিং এর প্রাচীন অভ্যাস ত্যাগ করুন। লাথি মারুন মন্দকে।