আমার সাম্প্রতিক একটি লেখায় মন্তব্যে বলেছিলাম,‘সমস্যাটা যতটা না ধর্ম তার চেয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিক’। আরো বলেছিলাম ‘সরকার ইচ্ছে করলে এসব বন্ধ করতে পারতো অনেক আগেই’। কিন্তু করছে না। যেমনটি বলেছিলাম অনেকেই মানবেন না, ঠিক অনেকেই মানেননি, তাই এ নিয়ে আরো কিছু কথা বলার প্রয়োজন আছে। প্রথমেই বলি, ‘সমস্যাটা যতটা না ধর্ম তার চেয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিক’ কথাটা এভাবে বোধ হয় এতো শর্টকাট করে সরাসরি বলা ঠিক হয়নি। তাই এর তাফসির লিখতে হচ্ছে।
এটা তো আপনারা মানবেন যে, ২০১৩ সালে ব্লগার রাজীব খুন থেকে শুরু করে হোলি আর্টিজান হোটেল পর্যন্ত ধর্মের নামে যত খুন হয়েছে, সাতক্ষীরা, রামু, নাসির নগর, লক্ষীপুর সহ অমুসলিমদের যত গ্রাম বাড়ি ঘর পুড়েছে, শিক্ষক শ্যামল কান্তি, রসরাজ, টিটুসহ যত নিরপরাধ মানুষকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে, সকল ঘটনার সাথে ক্ষমতাসীন সরকারী দলের লোকের তথা রাজনীতিবিদদের প্রচ্ছন্ন সম্পৃক্ততা আছে। সরকার নিজে যদি সাম্প্রদায়িকতা বন্ধের চেয়ে সাম্প্রদায়িকতার চাষাবাদ করে, দোষটা কি সাধারণ মানুষকেই বা শুধু ধর্মকেই দিবেন? জনগণ কি দাবী করেছিল, কোনো ইসলামী দল কি রাস্তায় মানব বন্ধন করেছিল, কোনো মাদ্রাসার ছাত্র-ওস্তাদরা কি মিছিল করেছিল সংবিধানে বিসমিল্লাহ লাগানোর জন্যে? কেন লাগালেন, উদ্দেশ্যটা কী? সাধারন মানুষ কি বলেছিল রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করার জন্যে? কে সংবিধানে বিসমিল্লাহ লাগালেন, কে বলেছিলেন ‘মদিনার সনদ’ কার মুখ থেকে বের হয়েছিল, কে বলেছিলেন ইসলাম আমার ধর্ম, মুহাম্মদ আমার নবি, আমার নবিকে নিয়ে কটুক্তি করলে, আমার ধর্মের সমালোচনা করলে আমি বরদাশ্ত করবো না? জনগনের বেতনভুক্ত কর্মচারী পুলিশ প্রধানও হুমকি দেন ‘আমার ধর্মের সমালোচনা সহ্য করবো না’। কাকে খুশি করতে, কার মন যোগাতে তারা এসব বলেন? মাদ্রাসা আর হেফাজত তোষণ কে শুরু করেছিলেন? জিয়া থেকে এরশাদ সুদীর্ঘ একুশ বছর তারপর শেখ হাসিনা ও তার পা চাটা গোলাম আই জি পি শহিদুল, শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল, নৌ মন্ত্রী শাহ জাহান, মৎস্য মন্ত্রী ছায়েদুল হক সহ আওয়ামী লীগের ভন্ড রাজনীতিবিদরা কে কোথায় ধর্ম নিয়ে কী বলেছিলেন একবার স্মরণ করুন আর হিসাবটা মেলান। এদেরকে তাদের ধর্মের মার্কেটিং করার দায়িত্ব তো জনগন দেয়নি। অপদার্থ, অকর্মণ্য অসৎ রাজনীতিবিদরা নিজেদের অপকর্ম অযোগ্যতা ঢেকে রাখতে ধর্মের আফিম ব্যবহার করে মানুষকে মোহাচ্ছন্ন করে রাখার লক্ষ্যে। তারা একদিকে মুক্তচিন্তকদের সকল লেখা বন্ধ করে দিতে চায়, অপরদিকে জঙ্গি মোল্লাদের ফ্রি লাইসেন্স দিয়ে রেখেছে খোলা মাঠে হাজার হাজার শিশু কিশোর যুবক বৃদ্ধ মানুষের সামনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী কথা, আর সাম্প্রদায়িক ছবক শোনানোর জন্যে। হাজার হাজার ওয়াজ থেকে গত কয়েকদিন পরপর চারটা ওয়াজের ভিডিও পোষ্ট করেছি। বুক ফুলিয়ে মোল্লারা বলছে ‘শহিদ মিনারে ফুল দেয়া হারাম, জাতীয় দিবস হারাম, ১৬ ডিসেম্বর হারাম, তারা মূর্তি ভাঙ্গতে এসেছে, রাখতে আসেনি, রবীন্দ্রনাথ গুরু নয় গরু, হিন্দুরা গাই বলদের বাচ্চা, হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টান ধর্ম থাকলেই কী আর না থাকলেই কী ওদের ধর্ম তো সব মিথ্যা’। এ সব শুনে দেখে রাজনীতিবিদরা খুশি, সুশীলেরা খুশি, সরকার খুশি। এদের পথে কোনো বাধা নেই, তাদের জন্যে কোনো আইন নেই। দেখতে দেখতে, শুনতে শুনতে অভ্যস্ত জনগনও খুশি। এ দেশে অমুসলিমরা যে এখনো বেঁচে আছে সেটাই এক মিরাকল। আমার জানতে ইচ্ছে করে এ ওয়াজগুলো শুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আই জি পি শহিদুল, শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান, নৌমন্ত্রী শাহ জাহান, পশুমন্ত্রী ছায়েদুল হক সহ আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদরা কী বলেন? তাদের কিছুই বলার নেই কারণ ঐ মোল্লারা তাদেরই মানুষ।
নষ্ট ভ্রষ্ট দুষ্ট রাজনীতিবিদরা সুদীর্ঘ ৪০/৪২টি বছর যাবত সম্পদ ও ক্ষমতার লোভে মানুষের চিন্তাশক্তিকে পঙ্গু করে দেয়ার লক্ষ্যে, দিনে দিনে তিলে তিলে ধর্মের বিষ ঢুকিয়ে দিয়েছেন সাধারন মানুষের মগজে মননে রক্তের শিরা উপশিরায়। ধর্ম আগেও ছিল, এই অবস্তা কোনোদিন দেখেছেন? ধর্মের আফিম গিলিয়ে একটি জাতির নৈতিক চরিত্রের চরম অবক্ষয় এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে এ দেশের নষ্ট রাজনীতিবিদরা। ছলে বলে কলে কৌশলে ক্ষমতালোভী হাসিনা কিছু মানুষকে তার দাস বানিয়ে নিতে পেরেছেন। হাসিনার মগজ ধোলাই করা মাতাল এই মানুষগুলো নিজের অজান্তে হাসিনাকে ফেরাউনের আসনে বসিয়ে দিয়েছে। তারা তাকে রব সমতুল্য মনে করে। ফেরাউন সারা দুনিয়ার রব দাবী করেছিল, শেখ হাসিনা সমস্ত পৃথিবীর রব না হলেও তার খাস বান্দারা তাকে বাংলাদেশের রব বানিয়ে দিয়েছে। ইসলাম বলে নবী সমালোচনার উর্ধ্বে, তার সমালোচনা করা যাবে না, আওয়ামী লীগ বলে শেখ মুজিব সমালোচনার উর্ধ্বে, তার সমালোচনা করা যাবে না। নবী বলেন, মদ আমি প্রথম হারাম ঘোষণা করলাম, আওয়ামী লীগের মন্ত্রী বলেন বঙ্গবন্ধু প্রথম মদ হারাম ঘোষণা করেন। দাম্ভিক হাসিনা নিজেকে হেড অফ দ্যা কান্ট্রি বলে ঘোষণা দেন, তার পূজারিরা তাকে উপাধী দেয় ‘মাদার অফ হিউম্যানিটি’। সেই মানবতার জননীর হিউম্যানিজম জেগে উঠে না রংপুরের হিন্দুদের আহাজারীতে। তার মানবতা জাগ্রত হয় না নিরপরাধ বন্যার রক্তাক্ত দেহ দেখে, অভিজিতের মরা লাশ দেখে। হাসিনা অবশ্যই ‘মাদার অফ হিউম্যানিটি’ নন, তিনি মাদার অফ মুসলিম বা উম্মুল মুমিনিন হতে পারেন।
তার পাজামার নীচে যে লালা ঝরছে।
পাঠশালা থেকে ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে, মাঠ থেকে সংসদ পর্যন্ত ওয়াজের মাধ্যমে, সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ইসলামের বিষাক্ত ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ক্ষমতা সম্পদ এমনই এক জিনিস, আহা! আজকাল ইসলামি ওয়াজ শুনা যায় মতিয়া, ইনু, বাদলের মুখেও। ‘জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১’ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কী বলেছিলেন মনে আছে? বলেছিলেন, “আমরা কোরান নিরীক্ষণ করে, বিশেষ করে সুরা আন-নিসা অনুসরণ করে কোরানের সাথে সাংঘর্ষিক নীতিগুলো বাদ দিয়েছি।” সুরা নিসা অনুসরণ করে ‘নারী উন্নয়ণ নীতি মালা’ তৈরি! ভন্ডামীরও তো একটা সীমা থাকা উচিৎ। ইসলাম নারী নেতৃত্ব সমর্থন করে না কিন্তু মোল্লারা করে। ইসলামে নারীর অবস্থান কোথায় বা ইসলাম কীভাবে নারীকে মুল্যায়ণ করে আহমেদ শফি কোরান দিয়ে দেখিয়ে স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন। কিছু মুসলমানরা তা শুনে ছিঃ ছিঃ করেছে। যে শফি কোরান দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন নারীর স্থান ঘর, যিনি ঘোষণা দিলেন নারী দেখলে পুরুষের লালা ঝরে, মনে কুভাব জন্মে, গার্মেন্টসকর্মী নারীদের যিনি বেশ্যা বললেন, সেই শফি হুজুর হাসিনাকে পাশে পেয়ে মরা বোয়ালের চোখে তার দিকে হা করে চেয়ে থাকে। লুইচ্চামী, বেঈমানি আর কারে কয়? হাসিনাও সব কিছু দেখে শুনে, নিজেকে তেঁতুল মেনে নিয়ে লাজ লজ্বা ত্যাগ করে শফির সামনে নীত হন। শফির ক্ষমতা হাসিনাকে নীত করেছে আর হাসিনার ক্ষমতা শফিকে ভুলিয়ে দিয়েছে তার নবি তার কোরান তার হাদিস। হাসিনার দিকে চেয়ে চেয়ে হুজুর বেমালুম টেরই পাচ্ছেন না, তার পাজামার নীচে যে লালা ঝরছে।
ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক আমাদের সংস্কৃতি ও আইনের অনেক কিছুই বহাল তবিয়তে আছে। এ নিয়ে মোল্লাদের খুব একটা মাথা ব্যথা নেই। কিন্তু নারীর ক্ষমতায়ণ, আর সম্পদে সমানধিকার নিয়ে তারা ‘নারী উন্নয়ন নীতি’র বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে। কেন? ইসলাম তো শফিও মানেন না হাসিনাও মানেন না, আর যারা হিন্দুদের বাড়ি ঘর পুড়ায় তারা তো ইসলামের আলিফও বুঝে না, এমন কি নবি মুহাম্মদও ইসলাম মানতেন না। তাহলে এরা বুঝেটা কী? সকলেই একটা জিনিস ভালই বুঝে আর তা হলো ক্ষমতা আর অর্থ, শক্তি আর সম্পদ। হিন্দুদের ঘরবাড়ি পোড়ানো, অমুসলিমদের সহায় সম্পত্তি দখলে মুসলমানদের শক্তিটা তাদের সংখ্যাগরিষ্টতা। বাংলাদেশে ৯০ পার্সেন্ট হিন্দু আর ১০ পার্সেন্ট মুসলমান যদি হতো তাহলে কোনো অজুহাতেই এতগুলো ঘরবাড়ি পোড়ানো, এতগুলো মন্দির ধ্বংস করা সম্ভব হতো না। তাদের ইসলামানুভুতি, মুহাম্মাদানুভুতি ফুটো বেলুনের মতো চুপসে যেতো। ভারতের উদাহরণ টেনে কুতর্ক করা যাবে। সংখ্যাগরিষ্ট ভারতে সংখ্যালঘু মুসলমানরা ভাল আছে হিন্দু ধর্মের কারণে নয় বরং ভারতের রাজনীতি প্রশাসন ও রাজনীতিবিদদের কারণে।
কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন যে, আমার লেখাটি কোনো গবেষণামূলক সিরিয়াস লেখা ছিলনা। ঠিক। আমি ইসলামের ইতিহাস টেনে প্রমাণ করে দিতে পারতাম, সাতক্ষীরা, রামু, নাসির নগর, লক্ষীপুর, দিনাজপুর, শ্যামল কান্তি, রসরাজ, টিটু, লাউ চুরি কুমড়ো চুরি, মুসলমান কর্তৃক হিন্দু যুবতি ধর্ষণ, অমুসলিমদের বাড়ি দখল, জমি দখল, সম্পদ লুন্টন সব ঘটনার পেছনে ইসলাম, মুহাম্মদ কোরান আর হাদিস অনুঘটক বা প্রেরণাদায়ী। সব ঘটনার সাথে মুহাম্মদ কর্তৃক বনি খুরাইজা গোত্র আক্রমন, আবু সুফিয়ানের বণিক কাফেলায় আক্রমণ, মদিনা থেকে ইহুদিদের বিতাড়ন, কবি আসমাকে খুন সহ হাজার হাজার তথ্য উপাত্ত্ব হাজির করে লিখতে পারতাম, এ সব অন্যায় অমানবিক অমানুষিক কাজের জন্যে মুহাম্মদ তার ইসলাম তার কোরান তার হাদিস দায়ী। এতে ভিকটিমদের লাভটা কী হতো আর অত্যাচারীদের কী ক্ষতিটা হতো?
মগজ ধোলাইয়ের প্রাথমিক কাজ (হোম ওয়ার্ক) করে দেয় মোল্লারা, একে দুধ কলা দিয়ে পুষে, লালন পালন করে রাজনীতিবিদরা
কি আশচর্য কারবার! হাঁস মুরগি চুরি থেকে নিয়ে রেইপ মার্ডার জমি দখল বাড়ি দখল সব জায়গায় ইসলাম মুহাম্মদ কোরান হাদিস রিলেট করে দেয়া হয়। অথচ মুহাম্মদ নিজেই ধর্মের জন্যে কিছুই করেননি। সর্ব প্রথম যুদ্ধ বদর থেকে আবু সুফিয়ানের বণিকদলের মাল লুন্টন দিয়ে শুরু করে তাবুকের যুদ্ধ পর্যন্ত সবটাই ছিল ক্ষমতা আর সম্পদের জন্যে, তিনি ধর্মটা ব্যবহার করেছন ঢাল বা অস্ত্র হিসেবে। শাহ জালাল সিলেট দখল করেছিলেন ইসলামের জন্যে নয়, ক্ষমতা আর সম্পদের জন্যে। এটা খুবই দুঃখজনক যে, মগজ ধোলাইয়ের প্রাথমিক কাজ (হোম ওয়ার্ক) করে দেয় মোল্লারা, একে দুধ কলা দিয়ে পুষে, লালন পালন করে রাজনীতিবিদরা আর ঘটনা ঘটার পর কিছু হিন্দু কিছু নাস্তিক সেই অপরাধের জন্যে দায়ী করেন মুহাম্মদ ও তার ইসলামকে। আর এদিকে, যে মূল অপরাধী সে দায়মুক্তই থেকে যায়।
শেষ করছি একজন পাঠকের উক্তি দিয়ে, (তার নামটা মনে নেই বিধায় উল্লেখ করতে পারলামনা) -
“দুর্বলের উপরে সবলের অত্যাচারকে যতদিন পর্যন্ত এভাবে সাম্প্রদায়িকতার লেবাস পরানো হবে ততদিন সাম্প্রদায়িকতার ব্যবসা জমজমাট থাকবে, কারণ সুবিধাভোগীরা তা টিকিয়ে রাখবে”।