জান্নাতুন নাঈম প্রীতি

কথা সাহিত্যিক

এই এশা মেয়েটা আমার কাছে নারী না, সে একজন ক্রিমিনাল

জী হ্যাঁ, আমি কয়েকজন ভিক্টিমের সাথে কথা বলেছি। ছাত্রলীগের নেত্রী এশা যাদের নির্যাতন করেছিলো সেইসব মেয়েদের একজনের কথা বলি। ভয়াবহ দরিদ্র পরিবারের একটি মেয়ে যে আমাকে খুলে বলেছে ঠিক কি কারণে তাকে হল থেকে বের করে দেয়া হয়েছিলো। প্রথমেই বলে নেই- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুফিয়া কামাল হলে সিট পেতে হলে অবশ্যই আপনাকে রাজনৈতিক সমাবেশে যেতে হবে। এই আপুদের দাসী হিসেবে তোষামোদ করতে হবে, বাজার সদাই, ঘর মোছা, ঘর ঝাড়া, চুলে তেল দেওয়া এসব কাজ করে দিতে হবে। তারা হলের অঘোষিত রানী, যদিও কোনো রাজ পরিবার থেকে আসে নি আরকি!

মেয়েটা জানিয়েছে এশার চার থেকে পাঁচজন মেয়ে ঘরে থাকে যারা রান্না করে, কাপড় কাচে, ঘর পরিস্কার করে, চুলে তেল দেয়। এদের একজন ছিলো সে। মেয়েটি অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের একটি মেয়ে, পুরো ঢাকায় দুঃসম্পর্কের এক আত্মীয় ছাড়া যার কেউ নেই। তাকে হল থেকে বের করে দিয়েছিলো এই এশা, কারণ মেয়েটি অসুস্থ হওয়ায় না বলে বাড়ি চলে গিয়েছিলো। কেনো না বলে বাড়ি গেলো- এই অপরাধে তাকে বের করে দেওয়া হয়েছিলো কাথা-বালিশ-বই আর টুকিটাকিসহ। সে পা পর্যন্ত ধরেছে এই এশা নামের মেয়েটির। কোনো লাভ হয় নি। এখন সে কাছাকাছি এক মেসে থাকে।

জী, আমি নারী সুবিধাবাদী না। শুধু নারীর অধিকার নিয়ে লিখি না, নারী পুরুষ উভয়ের অধিকারহানী নিয়েও লিখি। আমাকে আপনি কোনো জাতে ফেলতে পারবেন না। আমি ডান, বাম কিছুই না। নারী অপরাধ করলে চুপ করে থাকা বা অপরাধ জাস্টিফাই করা সুবিধাবাদী না।

এই এশা মেয়েটা আমার কাছে নারী না, সে একজন ক্রিমিনাল। সে নারী কিনা, সে কোনো বিশেষ দলের নেত্রী কিনা এইসব ধর্তব্য না। 

আমি ধর্ষকের যেমন ক্রিমিনাল হিসেবে বিচার চাই সেরকম অসংখ্য মেয়েকে অত্যাচার করা অপরাধীর বিচার চাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হলের মেয়েরা তাকে জুতার মালা দিয়ে যেটি করেছে সেটা মানহানিকর, তাহলে বাসের ভিড়ে আমার গায়ে হাত দিতে চাওয়া শয়তানটিকে মাইর দেওয়াও সেই শয়তানটির জন্য মানহানিকর।

একটা ব্যাপার লক্ষ্যনীয়- এই ঘটনার মধ্যে নারী পুরুষের যে সত্যিকার সাম্য সেটা উঠে এসেছে। আপনি দেখেছেন নিশ্চয়ই- কতো অসংখ্য ছেলে সুফিয়া কামাল হলের গেটে গিয়ে তাদের বান্ধবী ও তাদের সহপাঠীর পাশে দাঁড়িয়েছে? প্রমাণ করে দিয়েছে অপরাধী যে দলেরই হোক, তাকে কেয়ার করি না?

এশা নিজের অসম্মান নিজে বয়ে এনেছে। একজন অপরাধীকে নারীবাদের ধোঁয়া তুলে জাস্টিফাই করা সুশীল সমাজ- আপনাদের নীতির গালে কষে চড় দেই। যেদিন নিজের বোন ধর্ষিত হবে, সেইদিন সম্ভবত বোনকেও এইভাবে জাস্টিফাই করবেন আপনারা! বলবেন ধর্ষককে জুতার মালা দেওয়া ঠিক হয় নাই।

অন্যায় যে করে অন্যায় যে সহে, তব ঘৃণা তারে যেন আইফেল টাওয়ার সম দহে! 
আমি ঘৃণায় মরে যাওয়া, ঘৃণায় বেঁচে থাকার চেয়ে আনন্দদায়ক বলে ভাবি।

2365 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।