সালমা লুনা

ফিজিক্স আর পলিটিক্যাল সাইন্সে মাস্টার্স করেছেন। লেখালিখি করেন শখে। দায়বদ্ধতা অনুভব করেন নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলায়। হোপ সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন নামে একটি এনজিওর প্রেসিডেন্ট তিনি।

আহা ভাত! ভাতের চেয়ে দামী আর কিইবা আছে গো!

ভাবনা বলে একটি অল্পবয়সী মেয়ে সিনেমার নায়িকা হয়েছে। ধারণা করা যায়, সে নিশ্চয়ই ছোটবেলা থেকেই সিনেমার ভক্ত ছিলো। তাই নায়ক নায়িকাদের লাইফস্টাইল তাদের ইন্টারভিউ দেবার পদ্ধতি এবং দর্শকরা কী পছন্দ করে জেনেই আজ এই জগতের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছে। 

সে একটি অনলাইন পত্রিকায় ইন্টারভিউ দিয়েছে। স্বাক্ষাৎকার যিনি নিয়েছেন তার প্রশ্নের ধরণ এবং স্বাক্ষাৎকার দাত্রীর উত্তরে তেমন কোনো তফাত নাই। যেমন জানতে চাওয়া তেমনি জানানোর চেষ্টা।

সবাই মেয়েটিকে খুব বকছে। কারণ, সে শুধু ব্র্যান্ডের গল্প করেছে। সে দামীদামী জিনিস ব্যবহার করে এই গল্প করেছে। সে কোনো দেশী জিনিসই পরে না এই গল্প শুনে মানুষজন বেশ উত্তেজিত এবং গালি তার একরকম পাওনাই হয়ে গেছে এরকমটা ভেবে লোকজন স্বাভাবিকভাবেই যা করে তা হলো, সে যেহেতু নারী এইবার নাও তার চরিত্র ধরে মারো টান! সে এত টাকার শপিং যেহেতু করে তাই সে একটি..... । এবং সে আরো অসংখ্য ড্যাশ ...!

ওহ্ দ্যাট পুওর গার্ল!
মেয়েটির দুর্ভাগ্য সে এইদেশে জন্মেছে। 
সে যৎসামান্য বা অনেক, যাই করুক নিজে খেটে রোজগার করে। আড়ালে কী করে রোজগার করে সেটা যেহেতু প্রকাশ পায় নি তাহলে সেটা নিয়ে ইশারা ইঙ্গিত কতটুকু স্বাস্থ্যপ্রদ, আল্লাহ্ গড ভগবানই তা জানুন গে!

আমি একটু বলি অন্য কথা। আমাদের দেশের কসমেটিকসের কথা কীইবা বলবো! মুখে এক উইন্টার ক্রিম মাখি এই পোড়া শীতে। আর সারাবছর খালি মুখে ঘুরে বেড়াই। দু’দিন পরপর করি শ্যাম্পু আর কন্ডিশনিং। একটু কাজল দিই। স্টকে আছে দু’খানা কী চারখানা লিপস্টিক। সাজতে জানি না তাই ভালোবাসলেও সাজা হয় না বলে একটি দুটি সাজের জিনিস ড্রেসিং ইউনিটে পড়ে ঝিমাতে ঝিমাতে অবশেষে মরে যায়। অর্থাৎ এক্সপায়ার্ড!

এই যে সামান্যতম আয়োজন আমার এবং আমার মতো প্রচুর নারীরও, এইটিই কি সুশ্রীমতো হবার জো রেখেছে আমার সাধের বাংলাদেশ? ভেজাল নকল জিনিসে বাজার সয়লাব। নিজেরাও উন্নতমানের প্রডাক্ট বানাবে না, নয়তো আমদানী করে যে আনবে সেখানেও ভাওতাবাজী! হয় খালি ডিব্বায় নকল জিনিস আর নয়তো মেয়াদোত্তীর্ণ জিনিস আনবে কম টাকায়। আমাদের দেশের বড়লোকরাও তো আবার তাদের বিদেশ থেকে আনা খালি শ্যাম্পু পারফিউমের বোতল বেচে দেন ওএলএক্সে না হোক ফিরিঅলার কাছেই। তারা বস্তা ভরে কিনে নিয়ে কী করে সেসব আমরা কী তা জানি না?

সাধারণের তো তাই বছরে একবার বিদেশ ঘুরতে গেলে সুটকেস ভর্তি করে ওসব থেকে শুরু করে সাবান পেস্টটিও বয়ে আনতে হবেই! ওই মেয়েটি না হয় নায়িকা। তাকে তো ব্র্যান্ড ব্যবহার করতে হবেই! এবং সেটি কিনতে তাকে ওইসব দেশেই যেতে হবে। তাছাড়া আমরা কী আর জানি না একটি ছবি হিট করাতে বলিউড থেকে শুরু করে হলিউড পর্যন্ত কতোই না ট্রিকসের আশ্রয় নেয়া হয়। এ তো সকলেই জানি!
ইন্টারভিউটি ধরেই নেয়া যাক তেমনি কিছু।

কিন্তু এটা জানি কী, এমন অসংখ্য নারী আছেন এইদেশে যারা ব্র্যান্ডের কসমেটিকস, দামী পারফিউম, সিঙ্গাপুর আমেরিকা ইউরোপে শপিং, প্লাটিনাম হিরে ছাড়া পরি না, আমার শাড়িগুলো সব ত্রিশের উপর - এসব ছাড়া আড্ডা জমাতেই ভালোবাসেন না? তাদের কেউ কেউ এমনকি ফেসবুকেও তাদের শপিং করা পোশাকের বস্তা, শাড়ির ঝলমলে সম্ভার, নামি ব্র্যান্ডের দামী কসমেটিকস আর পারফিউমের খাজানা দেখাতে বসেন লাইভ কিংবা ফটো আপলোড দিয়ে!

আড্ডাতে এরা একটা ভালো কোনো বিষয়ে আলোচনায় মুখ তোম্বা করে রাখেন এবং ছটফট করেন কখন এসব বিষয়ে আলাপ উঠবে! আর প্রাণভরে যিনি সিঙ্গাপুর তো দূর কখনোই পাশের ভারতেও যান নি তাকে শুনিয়ে তৃপ্তি মিলবে। নাহ্। নারীরা শাড়ি গয়না নিয়ে আলাপ করলে আমার জাত যায় না। আমিও অংশ নিই এসবে। আমারো ভালো লাগে এসব টুকটাক গল্পগাছা। এইসব শাড়ি গয়না তো নারীরাই পরে থাকে। আলাপে অসুবিধা কোথায়!

সমস্যা হলো লোকদেখানো বা আদেখলাপনায়। একটু অস্বস্তি লাগে বৈকি! একজন বাংলাদেশী কখনো তার নিজ দেশের পোশাক কেনে না। নিজ দেশে শপিং করে না। কমদামী কিছুই কিনে না। ব্র্যান্ড ছাড়া কিনে না 
একটুখানি লাগে কোথায় যেন!

সম্ভবত দেশটি একসময় গরীব ছিলো বলে। দেশটির সিংহভাগ মানুষ এখনো গরীব বলে। এই দেশটির অনেক মানুষই এখনো রাস্তায় ঘুমায় বলে। এবং এদেশের নারীরা এখনো শুধুমাত্র পেটে দু’মুঠো ভাত দেবার জন্য দেহ বিক্রি করে বলেও। 
আহা ভাত!

ভাতের চেয়ে দামী আর কিইবা আছে গো!

1751 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।