অর্বাচীনের ডায়েরী

অনলাইন এক্টিভিস্ট

‘আগ্রাসন' অনেক ভীতিকর একটা শব্দ

‘আগ্রাসন' অনেক ভীতিকর একটা শব্দ। এখন প্রযুক্তির যুগ। এ যুগে গণহত্যা চালিয়ে ঠিক বিষয়টাকে ঢেকে রাখা যাবে না। খবর ছড়িয়ে পড়বেই। নয়তো অতীতে এই স্বাধীন বাংলাদেশে পাহাড়ে যেমন গণহত্যা চালানো হয়েছিলো আদিবাসী সম্প্রদায়ের উপর তেমন গণহত্যা আরও চালানো হতো। কিন্তু এই বর্বরতার খবর পৃথিবী জেনে যাবে। তাই মহান রাষ্ট্র (!) সেই নীতিমালা থেকে সরে এসেছে।

গণহত্যা চলবে তবে অন্য উপায়ে। বাংলাদেশ তো আবার সভ্য দেশ! তাই সভ্য উপায়ে হবে সবকিছু। কোনো জাতিকে ধ্বংস করতে চাইলে সে জাতির সভ্যতা ধ্বংস করে ফেলো, তাদের ঐতিহ্য ধ্বংস করে ফেলো, তাদের সংস্কৃতি ধ্বংস করে ফেলো, তাদের পাঠাগার ধ্বংস করে ফেলো। ব্যস, এতেই চলবে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপক হারে, সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যগতভাবে এবং পরিকল্পিতভাবে বিপুল পরিমাণ মুসলমান বাঙালিকে অভিবাসিত করা হয়েছিলো। উদ্দেশ্য ছিলো মুসলমানদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রামে সংখ্যাগরিষ্ঠ করা। মুসলমানেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলে সংখ্যালঘুদের হাল কি হয় সেটা পৃথিবীর নাক-কান-চোখ খোলা রাখা যেকোন মানুষই জানে।

এই বাঙালি মুসলমানদের পাহাড়ে অভিবাসিত করার সময় জেনেটিক্যাল ব্যাপারটিও মাথায় রাখা হয়েছিলো। যত খুনি, চোর, ডাকাত, বদমাইশ আছে সবাইকে নিয়ে সেখানে অভিবাসিত করেছিলো বাংলার পাকি-এজেন্ট জিয়া। অপরাধ যাদের জীনের সাথেই মিশে আছে।

মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার এবং এই বিশেষ ক্যাটাগরির মানুষদের স্যাটেল করার ফলাফল এখন হাতেনাতে পাচ্ছেন আদিবাসীরা।

পাহাড়ে এখন ধর্ষিত পাহাড়কন্যাদের গলাকাটা লাশ পাওয়া যায়, পাহাড়ে এখন পান থেকে চুন খসলেই পাহাড়ের সন্তানদের কুঁড়েঘরে আগুন জ্বলে। পাহাড়ে এখন পাহাড়ের সন্তানেরাই নিজেদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়। তাঁদের মনোবল ভেঙে যাচ্ছে, পরাধীন হয়ে বেঁচে থাকতে থাকতে বেঁচে থাকার আনন্দটাই মৃত হয়ে গেছে।

'অফিসিয়াল জেনোসাইড' না চললেও আদিবাসীদের উপর 'মেন্টাল জেনোসাইড' চলছেই। মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার ফলাফল আরও আছে। আগেই বলেছি 'আগ্রাসন' একটি ভীতিকর শব্দ। পাহাড়ে এখন আগ্রাসন চলছে এবং সেটা সবদিক দিয়েই। 'আহালাইক্ষ্যা ডং' এর নাম হয়ে গেছে এখন 'আলী কদম।'

আগে পাহাড়ি এলাকায় গ্রাম কিংবা পাড়াগুলোর নাম ছিলো পাহাড়ি ধাঁচের; যেমন করল্যাছড়ি, শিলছড়ি, তুন্যাছড়ি। এখন সেখানে গ্রাম কিংবা পাড়ার নাম হচ্ছে আরবি ধাঁচের; যেমন- 'মোহাম্মদপুর', 'আলীকদম।'
সূত্র হচ্ছে;-

"কোন জাতিকে ধ্বংস করতে চাইলে তার ঐতিহ্য ধ্বংস করে ফেলো।"

এরমধ্যে আরও প্রক্রিয়া আছে। নানা পর্যটন কেন্দ্র হচ্ছে আদিবাসীদের উচ্ছেদ করে। অঢেল টাকা ঢেলে সেগুলোকে মনোরম করা হবে। দেশ-বিদেশের পর্যটকেরা আসবেন। ব্যবসা জমে উঠবে। তারপর সেই পর্যটকদের জন্য নির্মাণ হবে নানা হোটেল, মোটেল। এসব নির্মাণ করতে গিয়ে আবারও উচ্ছেদ করা হবে আদিবাসীদের নিজেদের ভূমি থেকে।

একসময় ব্যবসা বাড়বে আর শহরগুলো বড় হবে। পাহাড়ি কায়দায় তৈরি সুন্দর বাড়িগুলো থাকবে না আর। সেখানে ইট-পাথরের ভবন উঠবে।

বাড়িগুলো হারিয়ে যাবে, হারিয়ে যাবে ঐতিহ্যও, হারিয়ে যাবে পাহাড়ের সন্তানেরা। এর মাঝে আবার মাঝেমাঝে সেনাবাহিনীর সহায়তায় আদিবাসী গ্রামগুলোতে হামলা হবে। অল্প অল্প করে আদিবাসীকে নির্যাতনের মুখে বাধ্য করা হবে দেশ ছাড়তে। সীমানা পাড়ি দিয়ে তাঁরা চলে যাবেন ভারত কিংবা মিয়ানমারে।

আরও প্রক্রিয়া আছে। প্রেমের ফাঁদের ফেলে ধর্মান্তরিত করা। নিজেদের ঐতিহ্যকে ভুলিয়ে ফেলা। প্রেম করো, ফুঁসলিয়ে সেক্স করো, ভিডিও করো, তারপর সেই ভিডিও দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করো। যে আদিবাসী মেয়েগুলোকে তাঁদের ঐতিহ্যগত পোশাকে স্নিগ্ধ, পবিত্র, সুন্দর দেখাতো তারাই ঢুকে পড়ে বোরকা আর হিজাবে।

এটাও সেই ধ্বংস প্রক্রিয়ারই অংশ।

এতকিছুর পরেও কিছু মঙ্গোলীয় ধাঁচের চেহারার মানুষ বাংলাদেশে থাকবে ভবিষ্যতে। কিন্তু তাঁদের মধ্যে আপনি পূর্বপুরুষদের ধর্ম, ঐতিহ্য কিংবা সংস্কৃতির ছিটেফোঁটাও দেখতে পাবেন না। সেই আদিবাসী থাকা কিংবা না থাকাতে কিইবা আসে যায়?

এখন পার্বত্য চট্টগ্রামে যে সুন্দর বৌদ্ধবিহারগুলো আছে সেগুলো আর থাকবে না। একদিন মিনার আর গম্বুজে ছেয়ে যাবে পাহাড়।

আর হারিয়ে যাবেন সরলতা, শুদ্ধতার প্রতীক পাহাড়ের সন্তানেরা, ছোট ছোট চোখের মানুষগুলো, হারিয়ে যাবে তাঁদের ঐতিহ্য। তখন আপনি পাহাড়ে একটু কান পাতলেই শুনতে পাবেন তাঁদের হাহাকার আর নিরুচ্চার অভিশাপ।

3954 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।