মাহমুদা খাঁ

সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা ও চা শ্রমিক আন্দোলনের সংগঠক।

আফসানা হত্যাকারী ছাত্রলীগের রবীনকে নিয়ে কিছু কথা...

আফসানার খুনি ছাত্রলীগের তেজগাঁও কলেজের সাংগঠনিক সম্পাদক খুনি রবিনকে পদোন্নতি দিয়েছে তার সংগঠন। সে এবার ছাত্রলীগের তেজগাঁও কলেজ শাখার সভাপতি হয়েছে।

ছাত্রলীগে খুন কিংবা ধর্ষণ বা নিপীড়ন করলেই কেবল পদোন্নতির রমরমা আওয়াজ উঠে, যে রবিন খুনের আসামি, যে রবিন তার ভালোবাসার মানুষকে খুন করে ভারত পালিয়েছিলো সেই রবিন আজ বীর নেতা ছাত্রলীগের।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক প্রিয় ডট কমকে বলেছে রবীন নির্দোষ তাই তাকে সভাপতি করা হয়েছে। এমনকি এও বলেছে রবীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এলাকার লোক তাই এই বিষয় মন্ত্রী দেখছেন।

আমার কিছু সহজাত জিজ্ঞাসা তাহলে রবিনের বাবা এবং তার তিন বন্ধুসহ কেনো জেলহাজতে নেয়া হয়েছিলো? কেনো রবিন প্রাণভয়ে ভারত পালিয়েছিলো? কেনো রবীন আফসানার পরিবারকে খুনের হুমকি এবং ভয় দেখিয়েছিলো মামলা তোলে নেবার জন্য? 

এসব কেনো এর উত্তর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক দিতে পারবে না কিন্তু আমার কাছে আছে। সব কেনো এর একই উত্তর সেটা হচ্ছে রবীন আফসানা হত্যার মূল খুনি।

আমি আবারো বলছি রবীন আফসানা হত্যার খুনি এবং খুনি। 

২০১৬ সালের ২৭ আগষ্ট রবিনের বাবাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো !
আফসানা হত্যায় রবিনের পিতা আব্দুল হাই মোল্লাসহ (পিতা - আব্দুর রহমান মোল্লা) মোট সন্দেহভাজন চারজনকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছিলো। 
এই ঘটনায় কাফরুল থানার তখনকার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা হাফিজ ২৭ আগষ্ট আফসানার হত্যাকারী হাবিবুর রহমান রবিনের ৫০ বছর বয়সী পিতাসহ ওর তিন বন্ধু মশিউর রহমান ওরফে মুসা (২৭), সিফাতুল হক ওরফে সিফাত (২৬), এবং আসিকুল হুসেন ভুঁইয়া (২৫) কে গ্রেফতার করেছিলেন। 

ওদের গ্রেফতারের পর ২৮ তারিখে ঢাকা সিএমএম কোর্টে তুললে, আদালত ওদের তিনদিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর করেছিলো। 

রিমাণ্ড শেষে আদালতে আসামী পক্ষ জামিন চায়। কিন্তু বিজ্ঞ আদালত জমিন নামঞ্জুর করে তাদের সকলকেই জেল হাজতে প্রেরণ করেছিলো।

আফসানার পরিবারের পক্ষে আইন ও সালিশ কেন্দ্র মামলা প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করেছিলো।

এ থেকে কি প্রতীয়মান হয় না খুনি আসলেই এই রবীন! 

আফসানা হত্যা হবার ঠিক একদিন পূর্বে আমায় কল দিয়েছিলো। উদ্বিগ্ন কন্ঠে আমায় বলেছিলো তোমার সাথে আমার জরুরি কথা আছে, আমাকে তুমি প্লিজ আজ সময় দাও, আমি ভালো নেই, অনেক সমস্যায় আছি আপু। আমি বলেছিলাম বাসায় আছি তুই চলে আয় না! আফসানা খুনি রবিনের হাত থেকে বের হতে পারে নি, বের হয়ে আমার কাছে আসার আর সুযোগ পায় নি। আমারো আর শোনা হয় নি আফসানার কষ্টের সেই অজানা কথাগুলো।

যা আজও ভেবে নিজেও অনুতপ্ত হই, ইশ কেনো আমি ফোনেই ওর কষ্টের কথাগুলো শুনে নিলাম না! শুনলে হয়তো এই হত্যার হাত থেকে বোনটাকে বাঁচাতে পারতাম! 

সারাদেশে আফসানা হত্যার প্রতিবাদে ২০১৬ সালের আগষ্টে প্রতিবাদ প্রতিরোধ হয়েছিল। পুলিশের দেয়া ব্যারিকেড ভেঙে আমরা ঐ সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় আসি। খুনি রবীনকে গ্রেপ্তারের জন্য আমরা ২২ আগস্ট ২০১৬ তে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় পর্যন্ত ঘেরাও করেছিলাম। তখন আমি কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য।

এতকিছু করেও আমরা বোন হত্যার বিচার পাইনি।

আফসানা নিয়ে এতকিছু লেখার একটাই কারণ, আমি আফসানার একজন সহযোদ্ধা বন্ধু ছিলাম, ছিলাম একজন বড় বোন। যার সাথে আফসানা যেকোনো কিছু অকপটেই শেয়ার করতো অকপটে। 

আমার মাঝেমধ্যে যখন আফসানার কথা খুব মনে হয় তখন ইচ্ছে হয় এই শূয়র রবীনকে কুকুর দিয়ে কামড়িয়ে হত্যা যদি করা যেত, যদিও এই হত্যা করলেও আমাদের বোন হারানোর কষ্ট আমরা ভুলতে পারবনা। তবুও রবীনের এরকম মৃত্যু আমি চাই। 

আফসানা বোন আমার তোর খুনের বদলা আমরা নিতে পারি নি। 
তুই আমাদেরসহ এই শুয়োর রাষ্ট্রে জন্ম নেয়া কাউকেই ক্ষমা করবি না! 

তোর মায়াবী কন্ঠের গান আজোও শিহরণ জাগায়, তোর হাসিমাখা মুখ আজোও চোখে ভাসে।

1892 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।