পুষ্পিতা মন্ডল

বর্তমানে প্রবাসী পুষ্পিতা বাংলাদেশ সরকারের সাবেক কর্মকর্তা ছিলেন।

আবহমান পুরুষতান্ত্রিক কুযুক্তি ও আমাদের সমাজ

একটা শর্টফিল্ম নিয়ে খুব আলোচনা হচ্ছে। মাত্র সেটা দেখলাম। পরিচালক ফিল্মের নাম দিয়েছেন বৈষম্য। ছেলেমেয়েতে আদৌ কোনো বৈষম্য নাই এমন একটা কিছু বোঝাতে চেয়েছেন। মেয়েদের সিগারেট খাওয়া নিয়ে কথা এসেছে।

উনি মহান উনি মেয়েদের সিগারেট খেতে না করেন নাই। খালি পাবলিকলি খেতে না করেছেন। এতে নাকি পরিবেশ নষ্ট হয়। আবার বলেছেন মেয়েরা নাকি অনেক সুবিধা পায়, কোনো বৈষম্য নাই। কিছু উগ্র মেয়ের জন্য সবমেয়ের অসুবিধা হয় ইত্যাদি নানা জরুরি বিষয় এসেছে। যেন মেয়েরা যখন সিগারেট খেতো না তখন মেয়েদের কোনো সমস্যাই ছিলো না।

বাসের মহিলা সিট নিয়েও কথা এসেছে। ওই লোক কি জানে ওই সিটগুলাতে কেনো মেয়েরা বসতে চায়? ভীড় বাসে দাঁড়ালে কতোবার ওনার মতো কোনো পুরুষের হাত কতোভাবে মেয়েগুলাকে স্পর্শ করতে চায়? এসব না হলে মনে হয় না বাসে মেয়েদের সিটের দরকার হবে। আগে নিজেদের শোধরান তারপর বৈষম্য নিয়ে কথা বলবেন।

আর সিগারেট খাওয়া এমনিতেই কোনো স্বাস্থ্যকর কাজ না। কিন্তু সেটা সবার জন্যই সত্যি। কিন্ত ছেলে খেলে সব ঠিক আছে অথচ একটা মেয়ে খেলে একদম পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাবে, সবাই তাকাবে এমন কেন? সমস্যা কাদের যারা হা করে তাকাচ্ছে তাদের নয় কি? আর ছেলে মেয়েতে পার্থক্য বোঝাতে উনি অতি মনোরম উদাহরন ব্যবহার করেছেন। ছেলেরা টিশার্ট খুলে ঘুরতে পারে মেয়েরা পারে না।

ছোটবেলায় “হাম দিল দে চুকে সমন” বলে একটা মুভিতে দেখেছিলাম ছেলে আর মেয়েদের ভিতর তর্ক হচ্ছে কে কি পারে তাই নিয়ে। তখন সালমান খান হঠাৎ উনার টিশার্ট খুলে বললেন তোমরা এটা পারো? শুনে মেয়ের দল লজ্জা পেয়ে স্বীকার করলো তারা এটা পারে না। কাজেই ছেলেদের ক্ষমতা তাদের চেয়ে বেশি। পরে জীবনে বহুবার এই উদাহরনটা দেখেছি, বলতেও শুনেছি। লোকজন খুব দাঁত ক্যালায়ে এই উদাহরণ দেয়।

অনেকে এখন আবার দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করার ক্ষমতার দম্ভও করেন। আমরা পারি, তোমরা পারো? মানে তুলনা করতে আসলে সেখানেও ওনারা সেই শরীর আর যৌন সুড়সুড়ি আছে এমন বিষয়ই নিয়ে আসবেন। যাতে ওই মুভির ঐশ্বরিয়ার মতো লজ্জা পেয়ে মেয়েরা চুপ হয়ে যায়। কিন্তু একবারও কি ভাবেন এরচেয়ে হাস্যকর তুলনা আর কিছু হয় না। ওভাবে বললেতো একটা মেয়েও বলতে পারে যে সে দুনিয়ার সবচেয়ে ভয়ংকর যন্ত্রনা সহ্য করে একটা বাচ্চার জন্ম দেয়। কিন্তু এইসব কথা তারা বলে না। কারণ এগুলো প্রাকৃতিক বিষয়। টিশার্ট খুলে চলার মতো অর্থহীন উদাহরন আপনারাই দিতে পারেন।

এই শর্টফিল্মেও পরিচালক মেয়েরা টিশার্ট খুলে চলতে পারে না ছেলেরা পারে তাই মেয়েদের পাবলিকলি অনেক কিছু করা উচিত না এমন যুক্তি দিয়েছেন। মেয়েরা সিগারেট খেলে তা ভিডিও করে ভাইরাল করতে বলেছেন। ছেলেমেয়েতে কোনো বৈষম্য নাই বলেছেন। প্রিয় পরিচালক আর আপনাদের মতো আর যারা আছেন আপনাদের জন্য আসলে আমাদের কোনো কিছু বক্তব্য নাই। আপনারা অনাদিকাল থেকে এমন চিন্তাধারার আর এমনই থাকবেন।

ভয়াবহ পুরুষতান্ত্রিকতা কিভাবে আপনাদের চিন্তা চেতনা ভয়ংকর কুৎসিত করে রেখেছে তা আপনারা জানেনও না। তাইতো মেয়েদের কোনো অপমান করার একটু সুযোগ পেলেও আপনারা ছাড়েন না। “বৈষম্য” খুঁজে পান না। বরং সুবিধা খুঁজে পান। খালি চোখে একটা মেয়ের জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা, দৈনন্দিন জীবন যাপন নিয়ে যদি ভাবতেন তবে বৈষম্য কেমন আর কাকে বলে ঠিক বুঝতে পারতেন। শুধুমাত্র মেয়ে হবার কারণে কতোটা যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হয় তা আপনাদের চোখে পড়তো।

এনিওয়ে পাবলিকলি মেয়েরা সিগারেট খেলে যদি পরিবেশ নষ্ট হয় হোক। আপনাদের চোখগুলো এসব মেনে নিতে শিখুক। মেয়েরা মেয়েদের জীবন নিজেদের মতো করে চলুক। আপনাদের দেখিয়ে দেওয়া পথে না। আপনারা ভিডিও করে ভাইরাল করতে থাকুন। যে মেয়ে সিগারেট খেতে চায় সে তাতে বুড়োআঙুল দেখিয়ে সিগারেট খেতে থাকুক।

3188 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।