#আর্ন্তজাতিক নারী দিবসটি নানামূখী কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে বেশ আড়ম্বরেই পালিত হয়। এ দিবসটি এমন একসময়ে হচ্ছে যখন নারী নির্যাতন, বিশেষ করে নারীর প্রতি সহিংসতা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। ৮ মার্চ সারা বিশ্বে যখন নারী দিবস পালন করা হচ্ছে, অন্যদিকে হয়তো কোনো নারী সহিংসতা বা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। প্রতিদিন গড়ে ১০টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। গড়ে ১৫ জন নারী পাচার হচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠন, বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন সূত্র এবং বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে নারী নির্যাতনের উদ্বেগজনক চিত্র পাওয়া গেছে।
এ পরিস্থিতি উত্তরনের জন্য অনেকদিন থেকেই সরকারি ও বেসরকারিভাবে নানান পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তবে এতো পদক্ষেপ সত্ত্বেও নেই বাস্তবায়ন। গত বছর মহিলা পরিষদের এক জরিপে দেখা যায় দেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৪হাজার ৭শ ৭৭টি। যৌন নির্যাতন, বাল্য বিবাহ, নারী আত্মহত্যা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন অত্যাধুনিক যুগেও নারীর প্রতি এ ধরনের বর্বরতা চলছে। ‘ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট উইমেন (ভিএডব্লিউ) সার্ভে ২০১১’ নামের এই জরিপে নারী নির্যাতনের একই চিত্রই উঠে এসেছে। গত বছরের ডিসেম্বরে এ প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়।
এ প্রতিবেদনের বলা হয় “নারীরা বাইরের থেকে নিজ ঘরে অনেক বেশি নির্যাতিত হয়। আমরা এর থেকে উত্তরণ চাই।
দেশে দেশে নারীদের প্রতি যে বৈষম্য, নির্যাতন আর অবজ্ঞা-উপেক্ষা চোখে পড়ে উহার বিরুদ্ধে গণমানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি ও তাহাদেরকে প্রতিবাদী ভূমিকায় অবতীর্ণ করিতে এই দিনটি যেন নারী জাগরণের অভয়বাণী বহন করিয়া আনে। তাই ইহার আবাহন নিয়ত ও আবেদন শাশ্বত। নারীর সমঅধিকার আর মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামী পথ পরিক্রমণে বাংলাদেশের নারীরাও তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করিয়া আসিতেছে।
#আমাদের দেশে একদিকে যেমন সমাজের সর্বক্ষেত্রে নারীদের গৌরবময় সাফল্য ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকিতে দেখা যায়, অন্যদিকে তেমনই আবার নারীদের প্রতি বৈষম্য আর নির্যাতন, অবিচার-অত্যাচারের চিত্রও কম চোখে পড়ে না। আমরা শিক্ষা-দীক্ষায়, মেধা-যোগ্যতায়, এমনকি রাষ্ট্র পরিচালনায়ও নারীদের যে অভাবিত সাফল্যজনক ভূমিকা পালন করিতে দেখি, তাহা এক কথায় বিস্ময়কর। আবার যখন নারী নির্যাতন আর বৈষম্যের কালিমালিপ্ত চেহারাটি ফুটিয়া উঠিতে দেখা যায় তখন নারীর এই অগ্রযাত্রা অনেকটাই নিষ্প্রভ হইয়া পড়ে বৈকি।
নারীকে যে সমাজে মানুষরূপে গণ্য করার চেতনা যতবেশি শক্তিশালী, সেই সমাজ তত বেশি সভ্য এবং উন্নত। আমাদের নারী সমাজের সামনে বেগম রোকেয়ার ন্যায় প্রগতিশীল, আধুনিক, বিদূষী ও সৎসাহসী এক মহীয়সী নারী আদর্শরূপে জ্বলজ্বল করিতেছেন।”
আন্তর্জাতিক নারী দিবস বলুন বা নারী অধিকার বলুন নারীর প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গী যতদিন পরিবর্তন হবে না ততদিন পর্যন্ত নারী তার সমানাধিকার অর্জন করতে পারবে না। নারী যেমন পুরুষকে তার যথাযোগ্য সম্মান মর্যাদা দেবে তদ্রুপ পুরুষও নারীকে সম্মান মর্যাদা দেবে। একে অপরের প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধাবোধ ও সহযোগীতা থাকলে এতে সমানাধিকার বা নারী অধিকারের প্রশ্নই আসতো না।
মোট কথা লিঙ্গভেদে নারী -পুরুষ হতে পারি কিন্তু প্রাণী হিসেবে আমরা মানুষ। আর মানুষ হিসেবে নারীকে গণ্য করে না অধিকাংশ পুরুষ। এখনো পর্যন্ত নারী শ্রমিকরা পুরুষের তুলনায় কম মজুরি পায়। কিন্তু কেন?
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীকে মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করাতে চাইলে, সর্বক্ষেত্রে নারীর সমান অগ্রাধিকার পেতে চাইলে প্রথমেই পরিবারের দিকে নজর দিতে হবে। ধরুণ, আজ আমি নারী দিবসে নারী অধিকার এবং নারীর প্রতি অত্যাচারের বিরুদ্ধে বড় বড় কথা বলে বাসায় ফিরে আসলাম। বাসায় ফিরে যদি নিজের স্বামীর জন্য গোসলের পানি প্রস্তুত করা, জামা কাপড় ধোয়া, খাবার বেড়ে দিয়ে আবার এঁটো থালা ধোয়াসহ যেসব কাজ নিজেরা স্বেচ্ছায় করতে পারে সেগুলো ও করে দিতে হয় তাহলে সেসব নিজের ছেলে এবং মেয়ে সন্তানের দৃষ্টি গোচর হবে। আর ধীরে ধীরে তাদের মনে ধারণা তৈরি হবে মূলত পুরুষ ও নারীদের কাজ কি।
তাই ছেলে সন্তান ও ঠিক সেভাবে তার মায়ের কাছ থেকে, বোনের কাছ থেকে এবং পরবর্তীতে নিজের স্ত্রীর কাছে সেই সেবামূলক কাজ গুলো আদায় করে নেবে। সেসব কাজ সম্পাদন করা পুরুষের প্রতি নারীর নৈতিক দায়িত্ব বলে পরিবারেই সেই ধারণাটা পুরুষ শৈশব থেকেই পেয়ে থাকে। আর সেভাবেই তারা বেড়ে ওঠে। আর সেখান থেকেই শুরু হয় নারীর প্রতি কর্তৃত্বপরায়ন মনোভাব। বুঝতে পারে না নারীর প্রতি তারা কতটা বৈষম্য করছে। আর নারীও বুঝতে পারে না তারা কতটা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।
তাই আমি আজো "মিনা মিতু রাজু "কার্টুনকে গভীরভাবে উপলব্ধি করি।
প্রত্যাশা-নারীদের সম্মান দিতে শিখুন, নারীদের মর্যাদা দিতে শিখুন। একজন নারী আপনার মা, আপনার বোন, আপনার সুখ-দুঃখের সঙ্গী।